এক রাজার সাত রাণী। দেমাকে, বড়রাণীদের মাটিতে পা পড়ে না। ছোটরাণী খুব শান্ত। এজন্য রাজা ছোটরাণীকে সকলের চাইতে বেশি ভালবাসিতেন। কিন্তু, অনেক দিন পর্যন্ত রাজার ছেলেমেয়ে হয় না। এত বড় রাজ্য, কে ভোগ করিবে? রাজা মনের দুঃখে থাকেন।

এইরূপে দিন যায়। কতদিন পরে,—ছোটরাণীর ছেলে হইবে। রাজার মনে, আনন্দ ধরে না; পাইক-পিয়াদা ডাকিয়া, রাজা, রাজ্যে ঘোষণা করিয়া দিলেন,—"রাজা রাজভাণ্ডার খুলিয়া দিয়াছেন, মিঠাইমণ্ডা মণি-মাণিক যে যত পার, আসিয়া নিয়া যাও।

বড়রাণীরা হিংসায় জ্বলিয়া মরিতে লাগিল। রাজা আপনার কোমরে, ছোটরাণীর কোমরে, এক সোনার শিকল বাঁধিয়া দিয়া, বলিলেন,—"যখন ছেলে হইবে, এই শিকলে নাড়া দিও, আমি আসিয়া ছেলে দেখিব!" বলিয়া, রাজা, রাজদরবারে গেলেন।

ছোটরাণীর ছেলে হইবে, আঁতুড়ঘরে কে যাইবে? বড়রাণীরা বলিলেন,—"আহা, ছোটরাণীর ছেলে হইবে, তা অন্য লোক দিব কেন? আমরাই যাইব।"

বড়রাণীরা আঁতুড়ঘরে গিয়াই শিকলে নাড়া দিলেন। অমনি রাজসভা ভাঙ্গিয়া, ঢাক-ঢোলের বাদ্য দিয়া, মণি-মাণিক হাতে ঠাকুর-পুরুত সাথে, রাজা আসিয়া দেখেন,—কিছুই না!

রাজা ফিরিয়া গেলেন।

রাজা সভায় বসিতে-না বসিতেই আবার শিকলে নাড়া পড়িল। রাজা আবার ছুটিয়া গেলেন। গিয়া দেখেন, এবারও কিছুই না। মনের কষ্টে রাজা রাগ করিয়া বলিলেন,—"ছেলে না হইতে আবার শিকল নাড়া দিলে, আমি সব রাণীকে কাটিয়া ফেলিব।" বলিয়া রাজা চলিয়া গেলেন।

একে একে ছোটরাণীর সাতটি ছেলে একটি মেয়ে হইল। আহা, ছেলে-মেয়েগুলি যে,—চাঁদের পুতুল—ফুলের কলি। আঁকুপাঁকু করিয়া হাত নাড়ে, পা নাড়ে,—আঁতুড়ঘর আলো হইয়া গেল।

ছোটরাণী আস্তে আস্তে বলিলেন,—"দিদি, কি ছেলে হইল একবার দেখাইলি না!"

বড়রাণীরা ছোটরাণীর মুখের কাছে রঙ্গ-ভঙ্গী করিয়া হাত নাড়িয়া, নথ নাড়িয়া, বলিয়া উঠিল,—"ছেলে না, হাতী হইয়াছে,—ওর আবার ছেলে হইবে!—কটা ইঁদুর আর ক'টা কাঁকড়া হইয়াছে।

শুনিয়া ছোটরাণী অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া রহিলেন।

নিষ্ঠুর বড়রাণীরা আর শিকলে নাড়া দিল না। চুপি-চুপি হাঁড়ি-সরা আনিয়া, ছেলেমেয়েগুলিকে তাহাতে পুরিয়া, পাঁশগাদায় পুঁতিয়া ফেলিয়া আসিল। আসিয়া, তাহার পর শিকল ধরিয়া টান দিল।

রাজা আবার ঢাক-ঢোলের বাদ্য দিয়া, মণি-মাণিক হাতে ঠাকুর-পুরুত সাথে আসিলেন;—বড়রাণীরা হাত মুছিয়া, মুখ মুছিয়া তাড়াতাড়ি করিয়া কতগুলি ব্যাঙের ছানা ইঁদুরের ছানা আনিয়া দেখাইল।

দেখিয়া, রাজা আগুন হইয়া, ছোটরাণীকে রাজপুরীর বাহির করিয়া দিলেন।

বড়রাণীদের মুখে আর হাসি ধরে না;—পায়ের মলের বাজনা থামে না। সুখের কাঁটা দূর হইল; রাজপুরীতে আগুন দিয়া, ঝগড়া-কোন্দল সৃষ্টি করিয়া, ছয় রাণীতে মানের সুখে ঘরকন্না করিতে লাগিলেন।

পোড়াকপালী ছোটরাণীর দুঃখে গাছ-পাথর ফাটে, নদীনালা শুকায়—ছোটরাণী ঘুঁটেকুড়ানী দাসী হইয়া, পথে পথে ঘুরিতে লাগিলেন।

(২)

এমনি করিয়া দিন যায়। রাজার মনে সুখ নাই,—রাজার রাজ্যে সুখ নাই, রাজপুরী খাঁ-খাঁ করে, রাজার বাগানে ফুল ফোটে না,—রাজার পূজা হয় না।

একদিন, মালী আসিয়া বলিল—"মহারাজ, নিত্যপূজার ফুল পাই না, আজ যে, পাঁশগাদার উপরে, সাত চাঁপা এক পারুল গাছে, টুলটুলে সাত চাঁপা আর এক পারুল ফুটিয়া রহিয়াছে।"

রাজা বলিলেন,—"তবে সেই ফুল আন, পূজা করিব।"

মালী ফুল আনিতে গেল।

মালীকে দেখিয়া পারুলগাছে পারুলফুল চাঁপাফুলদিগে ডাকিয়া বলিল,—"সাত ভাই চম্পা জাগ রে!"

অমনি সাত চাঁপা নড়িয়া উঠিয়া সাড়া দিল,—

“কেন বোন পারুল ডাক রে?”

পারুল বলিল,—"রাজার মালী এসেছে,

পূজার ফুল দিবে কি না দিবে?"

সাত চাঁপা তুরতুর করিয়া উপরে উঠিয়া গিয়া ঘাড় নাড়িয়া বলিতে লাগিল,—"না দিব, না দিব ফুল, উঠিব শতেক দূর,

আগে আসুক রাজা, তবে দিব ফুল!”

দেখিয়া শুনিয়া, মালী অবাক হইয়া গেল। ফুলের সাজি ফেলিয়া, দৌড়িয়া গিয়া, রাজার কাছে খবর দিল।

আশ্চর্য হইয়া, রাজা, রাজসভার সকলে সেইখানে আসিলেন।

(৩)

রাজা আসিয়া ফুল তুলিতে গেলেন, অমনি পারুল ফুল চাঁপা ফুলদিগে ডাকিয়া বলিল,—

“সাত ভাই চম্পা জাগ রে!”

চাঁপারা উত্তর দিল,—"কেন বোন্ পারুল ডাক রে?"

পারুল বলিল,—"রাজা আপনি এসেছেন,

ফুল দিবে কি না দিবে?"

চাঁপারা বলিল,—"না দিব, না দিব ফুল, উঠিব শতেক দূর, আগে আসুক

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion