কংক্রীট
সিমেন্ট ঘাঁটতে এমন ভাল লাগে রঘুর। দশটা আঙ্গুল সে ঢুকিয়ে দেয় সিমেন্টের স্তূপে, দু'হাত ভর্তি করে তোলে, আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ঝুর ঝুর করে ঝরে যায়। হাত দিয়ে সে থাপড়ায় সিমেন্ট, নয় শুধু এলোমেলোভাবে ঘাঁটাঘাঁটি করে। যোয়ান বয়সে ছেলেবেলার ধুলোখেলার সুখ। কখনো খাবলা দিয়ে মুঠো করে ধরে, যতটা ধরতে চায় পারে না, অল্পই থাকে মুঠোর মধ্যে। হাসি ফোটে রঘুর ঠোঁটে। এখনো গঙ্গামাটির ভাগটা মেশাল পড়েনি—ও চোরামিটা কোম্পানি একটু গোপনে করে। কি চিকন মোলায়েম জিনিষটা, কেমন মিঠে মেঘলা বরণ। মুক্তার বুক দুটির মত। বলতে হবে মুক্তাকে তামাসা করে, আবার যখন দেখা হবে।
‘এই শালা খচ্চর!’
গিরীনের গাল, ছিদামের নয়। ছিদাম বিড়ি টানছে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে, ব্যাটার তিনটে আব বসানো কিম্ভূত মুখ দেখলে গা জ্বলে রঘুর, গাল শুনলে আরো বেশী। রুমাল-পোঁছা আসছে বুঝি তার চাকে পাক দিতে, ব্যাটা হুলো বোলতা, গিরীন তাই সামলে দিয়েছে তাকে। চট করে কাজে মন লাগায় রঘু। গিরীনকে ভালো লাগে রঘুর, লোকটা হলো বেড়ালের মত রগচটা আর বেঁটে-খাটো ষাঁড়ের মত একগুঁয়ে হলেও। যত বদমেজাজী হোক, যে কোন হাসির কথায় হা হা করে হাসে যেন শেয়াল ডাকছে ফুর্ত্তির চোটে। আবার কারো দুঃখদুর্দশার কথা শুনলে বাঘের মত গুম খেয়ে যায়, মাঝে মাঝে গলা খাঁকারি দেয় যেন রোলার মেসিনে পাথর গুঁড়োচ্ছে মড়মড়িয়ে।
'রুমাল-পোঁছা এলো না দিকি?'
'না।'
'এলো না এলো, তোর কিরে বাঞ্চোত?’ ছিদাম বলে দাঁত খিঁচিয়ে, 'ওনার আর কাজ নেই, তোর কাজ দেখতে আসবেন? আমি আছি কি কৰ্ত্তে?’
কথা না কয়ে খেটে যায় রঘু। পোঁছাবাবু আসে এদিক-ওদিক তেরচা চোখে চাইতে চাইতে, দুবার রুমাল দিয়ে মুখ পুঁছে ফেলে দশ পা' আসতে আসতেই। তার গালভরা নাম বিরামনারায়ণ—এই মুদ্রাদোষে চিরতরে তলিয়ে গিয়ে হয়েছে রুমাল-পোঁছা, সংক্ষেপে পোঁছাবাবু। গিরীন, গফু, ভগলু, নিতাই, শিউলালেরা একটু শক্ত বনে গিয়েই কাজ করে যায়, ছিদাম যেন খানিকটা নেতিয়ে বেঁকিয়ে যায় পোষা কুকুরের ঢং-এ, উৎসুখ চোখে তাকায় বারবার মুখ তুলে, লেজ থাকলে বুঝি নেড়ে দিত ৷
‘তোর ওটা এখন হবে না গিরীন, সাফ কথা। হাঙ্গামা মিটলে দেখা যাবে।'
‘দু’মাস হয়ে গেল বাবু৷ হাঙ্গামার সাথে মোর ওটার—'
‘বাস, বাস ৷ এখন হবে না। সাফ কথা।’
রুমালে মুখ পুঁছে এগিয়ে যায় পোঁছাবাবু। রগচটা গিরীন রাগের চোটে বিড় বিড় করে বুঝি গাল দিতে থাকে তাকে। ছিদাম একটু অবাক হয়ে ভাবে যে দুপুরের ভোঁ পড়ার মোটে দেরী নেই, টহল দিতে বার হল কেন পোঁছাবাবু অসময়ে। ভোঁ এর টাইম হয়ে এলে কাজে ঢিল পড়ে কেমন, ফাঁকি চলে কি রকম দেখতে? দেখবে কচু, পোঁছাবাবু টহলে বেরোলে টের পায় সবাই। এর বদলে তাকে ডেকে শুধোলেই সে বলতে পারত সব !
খিদেয় ভেতরটা চোঁ চোঁ করছে রঘুর, তেষ্টায় কিনা তাও যেন ঠিক আন্দাজ করা যায় না, ঘেমে ঘেমে দেহটা লাগছে যেন কলে মাড়া আখের ছিবড়ে। ভোঁ'র জন্য সে কান পেতে থাকে ৷ আগে মুখ হাত ধোবে না সোজা গেটে চলে যাবে, বন্ধ গেটের শিকের ফাঁক দিয়ে চানা কিনবে না মুড়ি কিনবে, আগে পেট পুরে জল খাবে না দু'মুঠো খেয়ে নেবে আগে, এই সব ভাবে রঘু। মুক্তাকে এনে রাখতে পারলে হত দেশ থেকে, রোজ পুঁটলি করে খাবার সাথে দিত বেন্দার বৌটার মত। বৌ একটা-বটে বেন্দার! রঙে ঢঙে ছেনালিতে গনগনে কি বাস্ রে, মাগীটা মুক্তার মত কচি মিষ্টি নয় মোটে। তবে পুঁটলি করে খাবার দেয় সাথে রোজ, রুটি চচ্চড়ি ভাজা, নয়তো ঝাল ঝাল শুখা ডাল, নয়তো চিচিঙার পেঁয়াজ ছেঁচকি ৷
হঠাৎ বড় শ্রান্ত, অবসন্ন লাগে নিজেকে রঘুর।
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment