বৈষম্য হ্রাসে আনুপাতিক নির্বাচন
শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে দীর্ঘকালের আওয়ামী লীগ সরকারের অবসান ঘটেছে এবং দেশ পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে দেশ কোনদিকে এবং কী ধারায় অগ্রসর হবে তা নিয়ে একটি জাতীয় আলোচনা চলছে। দেশে যেন একনায়কত্বের পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবাই একমত। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে যে সংস্কারটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তা হলো বর্তমান ‘উইনার টেকস অল’ (বিজয়ী কর্তৃক সমস্ত পাওয়া—সংক্ষেপে ‘বিসপা’) ভিত্তিক নির্বাচনব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার প্রবর্তন। আনুপাতিক নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষে সামান্য কয়েক শতাংশ ভোট বেশি পাওয়ার কারণে সংসদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে একটি দল কিছু শতাংশ কম ভোট পেলেও সংসদে তার ভোট-অনুপাত অনুযায়ী উপস্থিতি বজায় থাকবে। ফলে রাষ্ট্রক্ষমতায় ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং দেশ একনায়কত্বের বিপদমুক্ত থাকবে। বিসপা নির্বাচন রাজনৈতিক বৈষম্য বাড়ায়; পক্ষান্তরে, আনুপাতিক নির্বাচন বৈষম্য কমাবে এবং তা জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস করবে।
বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখি, নির্বাচনব্যবস্থাসমূহকে মোটাদাগে দুইভাগে ভাগ করা যায়—আনুপাতিক ও অসমানুপাতিক (তথা: বিসপা)। ব্রিটিশ ঐতিহ্যের কারণে বাংলাদেশে বিসপা নির্বাচনব্যবস্থা প্রচলিত। কিন্তু বিশ্বে আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার প্রচলনই বেশি (চিত্র ১ ও ২ দেখুন)। সাম্প্রতিক জরিপ দেখায় যে, পৃথিবীর ১৭০টি দেশের মধ্যে ৯১টি, তথা ৫৪ শতাংশ দেশেই আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা প্রচলিত। উন্নত দেশসমূহে এর প্রচলন আরও বেশি। উন্নত দেশসমূহের সংস্থা, ওইসিডি-ভুক্ত ৩৬টি দেশের মধ্যে ২৫টি, অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ দেশ আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা অনুসরণ করে। নব্বইয়ের দশকে পূর্ব-ইউরোপের যেসব দেশ এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের যেসব প্রজাতন্ত্র বহুদলীয় শাসন প্রবর্তন করে, তাদের ২৫টির মধ্যে ১৮টি, অর্থাৎ ৭২ শতাংশ, দেশ আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা গ্রহণ করে। এসব দেশে ইতিহাস-সৃষ্ট কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। কিন্তু তাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থাকেই শ্রেয় মনে করেছে। প্রতিবেশী শ্রীলংকা বহু আগে থেকেই আনুপাতিক নির্বাচন অনুসরণ করছে এবং সে কারণেই দেশটি দ্রুততার সাথে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার রাজনৈতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। আরেক প্রতিবেশী দেশ, নেপাল ২০১৫ সালে প্রণীত নতুন সংবিধান মারফত আংশিকভাবে আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
উন্নত দেশসমূহের সিংহভাগ কেন আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা অনুসরণ করে তার একটি বড় কারণ হলো, এই নির্বাচনব্যবস্থা অনেক বেশি ন্যায্য। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। অসমানুপাতিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হয় আসনভিত্তিক। একটি আসনে বিভিন্ন প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সর্বাপেক্ষা ভোট পান তিনি নির্বাচিত হন। ধরা যাক, একটি আসনে পাঁচটি দলের পাঁচজন প্রার্থী। নির্বাচনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়জন প্রত্যেকে ২০ শতাংশ করে ভোট পেলেন। চতুর্থজন পেলেন ১৯ শতাংশ এবং পঞ্চমজন ২১ শতাংশ। তাহলে পঞ্চমজন আসনটি পাবেন। আরও ধরা যাক, সারা দেশেই এই পাঁচ দলের জনপ্রিয়তা এই আসনের মতই। সেক্ষেত্রে প্রতিটি আসনেই পঞ্চম দল জিতে যাবে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের সংসদে এই দলের আসন সংখ্যা হবে ৩০০, এবং বাকি চার দল, যারা সবাই মিলে ৭৯ শতাংশ ভোট পেলেন, তাদের আসন সংখ্যা হবে শূন্য। সেকারণেই এই নির্বাচনব্যবস্থাকে ‘উইনার টেকস অল’ বা বিসপা ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করা হয়।
পক্ষান্তরে, আনুপাতিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গোটা দেশের ভিত্তিতে। নির্বাচনের আগে প্রতিটি দল ক্রমাধিকারসম্পন্ন প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন করে তা দেশবাসীর নিকট উপস্থিত করে। অতঃপর দল অনুসারে ভোট হয় এবং যে দল যত শতাংশ ভোট পায় সংসদে তত শতাংশ আসন পায়। যেমন, একটি দল যদি সমগ্র দেশের হিসাবে ১০ শতাংশ ভোট পায় তবে বাংলাদেশের সংসদে ৩০টি আসন পাবে এবং তখন তার পূর্বঘোষিত তালিকার উপর থেকে ৩০ জন সংসদের সদস্য হবেন।
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment