জিমি কার্টার : স্বদেশের দিকে মুখ ফিরাও

[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক অধিকারের অবস্থা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃক রচিত; নিউ ইয়র্ক, জুন ১৯৭৭, পৃ. ৬৭।]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের “মানবাধিকার-সংক্রান্ত প্রচার নিছক আরেকটি সমাজতন্ত্র-বিরোধী চমক। সমাজতন্ত্র, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হেয় করবার ৬০ বৎসরব্যাপী মার্কিন পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদী নীতির এটি একটি নতুন চক্রান্ত ৷” (পৃ. ক) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃক রচিত বিশেষ দলিলে এভাবে সোভিয়েত-বিরোধিতাকে ওয়াশিংটনের নীতির একটি কেন্দ্রীয় উপাদানরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বর্তমানে ওয়াশিংটনে “হেলসিংকি চুক্তি লঙ্ঘনের তথাকথিত অজুহাতের ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ, বিশেষত সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সুসংবদ্ধ প্রচারাভিযান শুরু করেছে।” (পৃ. ১)

এই গ্রন্থের লেখকরা উল্লেখ করেছেন এই প্ররোচনামূলক প্রচারাভিযানের নায়করা বলতে ভুলে গেছেন বা ইচ্ছে করেই গোপন করে গেছেন যে হেলসিংকি ফাইন্যান্স এ্যাক্ট-এর তিনটি প্রধান অংশ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “ব্যাপকভাবে প্রচারিত কোনো সংবাদপত্র বা সাময়িকীতে এর পূর্ণ বয়ান প্রকাশিত হয়নি,” (পৃ. ১) যদিও প্রশাসন এটা “ছড়ানো ও ব্যাপকভাবে প্রচারের” দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। দি নিউইয়র্ক টাইমস্ কর্তৃক প্রকাশিত উদ্ধৃতিগুলি ছিল সংক্ষিপ্ত এবং “তৃতীয় পাদের” কিছু বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ, অন্যদিকে, মানবিক ও অন্যান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে কয়েক ধরনের সহযোগিতাকেই বুর্জোয়া প্রচারকরা প্রধান বিষয়রূপে উপস্থাপিত করছেন এবং এগুলি করা হচ্ছে উচ্চগ্রামে “মানবাধিকার” প্রচার চালানোর জন্যে।

লেখকরা বলেছেন ধারাগুলির একটা সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনাও এটা “প্রমাণ করে দেবে—কেন কার্টার, ব্রেজনস্কি এবং তাদের মতো অন্যেরা সৎভাবে সমগ্র হেলসিংকি চুক্তি আলোচনা করা থেকে বিরত থাকছেন।” (পৃ. ২)

মার্কিন সরকার এবং তার প্রচার যন্ত্র চুক্তির প্রথম ধারা যার দ্বারা সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীগণ পারষ্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের শর্তাদি বর্ণনা করেছিলেন ; “রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পদ্ধতি এবং আইন-কানুন রচনার অধিকার স্বাধীনভাবে বেছে নেবার পারস্পরিক স্বাধীনতাকে” স্বীকার ও মর্যাদাদানের অঙ্গীকার করেছিলেন—তাকে কঠোরভাবে গোপন করার জন্যে সচেষ্ট।

কিন্তু মার্কিন প্রশাসনই অনান্য দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুতর নাক গলিয়েছে এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরূপণের ক্ষেত্রে জনসাধারণের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। এভাবে সে “পর্তুগালের নির্বাচিত কর্তাব্যক্তিদের চরিত্র ও শাসনের রূপ বদলের জন্যে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করেছে।” ১৯৭৬-এ ইটালিতে নির্বাচনী প্রচারের সময় মার্কিন সরকারি প্রতিনিধিগণ দাবি করেছিলেন যে—ইটালির জনগণ ও তাদের রাজনৈতিক দলগুলির “ইটালির সরকারে কমিউনিস্টদের অংশগ্রহণ স্বীকার করে নেওয়া উচিত হবে না।” (পৃ. ৩)

কমিউনিস্ট পার্টির এই দলিলটিতে বলা হয়েছে সি আই এ-এর মাধ্যমে মার্কিন সরকার “প্রকাশ্যে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগোষ্ঠীর দেশগুলির মধ্যে বিভেদ চাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে।” রেডিও লিবার্টি ও রেডিও ফ্রি ইউরোপের মাধ্যমে—সন্ত্রাসবাদী অভিযান সহ অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ ও অন্যান্য বেআইনী কাজ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে করার চেষ্টা করে। এতে ঘোষিত ফ্যাসিস্টদের ব্যবহার করতেও এরা কুণ্ঠিত হয় না।” ( পৃ. ৫) দলিলটিতেও বলা হয়েছে যে ফাইন্যাল এ্যাক্টের প্রথম যে ধারাকে মার্কিন প্রচারবিদরা উপেক্ষা করেছে তা ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক গৃহীত মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ যা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাদে বহু দেশ কর্তৃক অনুমোদিত, তাকেই প্রতিফলিত করেছে। মার্কিন সরকারি প্রশাসন এই সনদগুলির একটিতেও স্বাক্ষর দেয়নি যদিও দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট কার্টার স্বীকার করেছেন, এগুলি “মানবাধিকার পরিমাপের সঠিক নিরিখ।” (পৃ. ৬)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফ্যাইন্যান্স এ্যাক্টের দ্বিতীয় ধারাও লঙ্ঘন করেছে। চুক্তি অনুসারে যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তব্য "বাণিজ্যের বিকাশের পথে সকল ধরনের অন্তরায়কে ক্রমশ হ্রাস ও বিদূরিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা”, তথাপি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ সম্পর্কে ক্রমান্বয়ে বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করে সভ্যদেশের মানদণ্ডের অনুরূপ বাণিজ্যে সর্বাধিক সুযোগ গ্রহণ করছে এবং পরিবর্তে তাদের অভ্যন্তরীণ আইন ও পদ্ধতি বদলের জন্যে চাপ সৃষ্টি করছে।

এই দলিল সুনির্দিষ্টভাবে গুরুত্ব দিয়ে চলেছে, যখন মার্কিন সরকার অন্যান্য দেশ, বিশেষত সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের “মানবাধিকার” নিয়ে খুব হৈচৈ করছে, তখন স্বদেশে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবিধানে উল্লিখিত একেবারে গোড়ার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।

মানুষের জীবন ও সুখ সুনিশ্চিত করতে সক্ষম কর্মের অধিকার লাভের সম্ভাবনা থেকে আজ ১ কোটির উপর শ্রমিক বঞ্চিত এবং সরকারি গণনার বাইরের সকলকে ধরলে এই পরিসংখ্যান দেড় কোটিতে পৌঁছবে। (পৃ. ১০)

সরকারি প্রচারবিদরা যে দেশকে স্বাধীনতার পাদপীঠরূপে উপস্থাপিত করতে চান তা কার্যত জাতি-বৈষম্যের উত্তপ্ত ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ৷ এবং এটা আড়াই কোটি কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও অন্যান্য জাতীয় সংখ্যালঘু : চিকানো, পুর্তোরিকান, এশিয়া-আমেরিকান এবং দেশীয় আমেরিকান-ইণ্ডিয়ানদের জন্যে দৃঢ়ভাবে বর্ণ-বৈষম্যবাদের একটা রূপ লাভ করছে। (পৃ. গ)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীর সমানাধিকার বলে কিছু নেই। তাঁরা পুরুষদের প্রদত্ত মজুরির মাত্র ৫৭ শতাংশ পান। দলিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা লঙ্ঘনের বহুবিধ জ্বলন্ত উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি কর্তৃক মৌলিক অধিকার নিদারুণভাবে লঙ্ঘনের স্বরূপ উন্মোচন করে একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। ( পৃ. ১৩) সংবিধানের প্রথম ও চতুর্থ সংযোজনী কর্তৃক জনসাধারণকে প্রদত্ত বাক্‌স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, সমাবেশ ও সমিতি গড়ার স্বাধীনতা, এবং ব্যক্তি, গৃহ ও নথিপত্র অযৌক্তিক তল্লাস করার হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার স্বাধীনতা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ১৯৭৬ সালের এপ্রিলে সেনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চের চেয়ারম্যানশিপে গঠিত একটি সেনেট কমিটি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তদন্ত করে প্রদত্ত চূড়ান্ত রিপোর্টটিও দলিলে উল্লিখিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে এফ. বি. আই কেন্দ্রীয় দপ্তর শুধুমাত্র ৫০০,০০০ গোয়েন্দা ফাইল রক্ষা করত। ১৯৫৩-৭৩ সালের মধ্যে ২৫০,০০০ লক্ষ প্রথম শ্রেণীর চিঠি সি. আই. এ খুলেছে এবং ফটো তুলে রেখেছে। ১৯৭৪-৭৫-এ জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিগত টেলিগ্রাম সংগ্রহ করেছে। সেনেট কমিটি স্বীকার করেছে, এই সংস্থাগুলি “দীর্ঘ সময় ধরে আইনকে লঙ্ঘন ও উপেক্ষা করেছে এবং তা আইন ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে তাদের অধিকারের দাবিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছে।” (পৃ. ১৫)

মার্কিন সরকার হেলসিংকি চুক্তি অনুসারে ব্যাপকতর সংযোগ ও তথ্য বিনিময়ের জন্যে বাগাড়ম্বর করে আহ্বান জানায় কিন্তু তার মুখোশ খুলে যায় তখনই, যখন “ফাইন্যাল এ্যাক্টে স্বাক্ষরদানকারী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে মার্কিন সরকার সবচেয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপকারী ভিসা ও প্রবেশাধিকারের শর্তাবলী চালু রেখেছে।” (পৃ. ৬১)

দলিল প্রণেতারা বলেছেন—যে কোনো প্রমাণ উল্লেখ করে দেখানো যায়—তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে, পুস্তকের অনুবাদ, নাট্যাভিনয়, সিনেমা ও টেলিভিশন চিত্র ক্রয় ও প্রদর্শন, ভাষা শিক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ থেকে পিছিয়ে রয়েছে। (পৃ. ৬২-৬৩ দেখুন)

এই তথ্য মার্কিন সরকারের “মানবাধিকারের ভানের ভণ্ডামি” প্রমাণ করে। (পৃ. ৭) দলিলে রচয়িতারা সঠিক ভাবেই উল্লেখ করেছেন যে মার্কিনী মিথ্যা প্রচার “ইতিমধ্যেই বুমেরাং হয়ে উঠছে।”

পিটার পিটারসন

শান্তি স্বাধীনতা সমাজতন্ত্র

জানুয়ারি ১৯৭৮

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Featured News

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion