শিল্পকলার ভূমিকা
‘কবিতা অপরিহার্য—যদি আমি শুধু জানতাম কি কারণে।’ এই চমৎকার আত্মবিরোধী সুভাষণের সাহায্যে জন ককটিউ শিল্পকলার প্রয়োজনীয়তার সার-সংক্ষেপ করেছেন—একই সঙ্গে তুলে ধরেছেন অন্ত্য বুর্জোয়া যুগে এর সন্দেহজনক ভূমিকাও।
শিল্পের সম্ভাব্য ‘অবলুপ্তির’ কথা বলেছেন চিত্রকর মণ্ডারিন। বাস্তবতা, তিনি বিশ্বাস করতেন, ক্রমবর্ধমান হারে স্থান দখল করে নেবে শিল্পকর্মের যেটা তার মতে বাস্তবতার মধ্যে বর্তমানে অনুপস্থিত ভারসাম্যের একটি প্রয়োজনীয় বিকল্প। ‘জীবনের অধিকতর ভারসাম্য অর্জনের সঙ্গে শিল্প বিলুপ্ত হবে।’
শিল্পকলা ‘জীবনের বিকল্প’, মানুষকে পারিপার্শ্বিক জগতের সঙ্গে ভারসাম্যের অবস্থায় স্থাপনের জন্য শিল্পকলা একটি মাধ্যম—এই ধারণাসমূহের মধ্যে নিহিত রয়েছে শিল্পকলার প্রকৃতি ও তার প্রয়োজনীয়তার আংশিক স্বীকৃতির কথা। এবং যেহেতু পরিবেশের সঙ্গে মানুষের স্থায়ী ভারসাম্যের অবস্থা সর্বাধিক উন্নত সমাজেও কল্পনা করা যায়না, সেজন্যে এই ধারণা আমাদের জানিয়ে দেয় যে, পুরাকালেই শুধু প্রয়োজনীয় ছিল এমন নয়, ভাবীকালেও শিল্পের অনুরূপ প্রয়োজনীয়তা থাকবে।
তথাপি, শিল্পকলা কি বিকল্পের অতিরিক্ত কিছু নয়? এটা কি মানুষ ও পৃথিবীর মধ্যে গভীরতর সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেনা? আসলে প্রকৃতই কি শিল্পের ভূমিকা একটি মাত্র সূত্রে সংক্ষেপ করা সম্ভব? একে কি বহু ও বিচিত্র প্রয়োজনীয়তা মেটাতে হয় না? এবং, শিল্পকলার উৎপত্তি সম্পর্কে চিন্তা করতে গিয়ে আদিতে এর ভূমিকা-সম্পর্কে যদি আমরা অবহিত হই, সমাজের পরি- বর্তনের সঙ্গে ঐ-ভূমিকারও কি পরিবর্তন হয়নি কিংবা নতুন ভূমিকা তার পরে যুক্ত হয়নি? সেটা জানতেও আগ্রহ জাগে।
এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা হয়েছে বর্তমান বইয়ে। আমরা এ-মতে বিশ্বাসী যে অতীতে, বর্তমানে ও ভবিষ্যতে সব সময় শিল্পের প্রয়োজনীয়তা ছিল, আছে এবং থাকবে।
প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে অবশ্য অনুধাবন করতে হবে যে, একটি বিস্ময়কর ব্যাপারকে অতি সহজভাবে নেবার প্রবণতা আমাদের রয়েছে। এবং এটা নিশ্চিতভাবে বিস্ময়কর লক্ষ লক্ষ লোক বই পড়ে, থিয়েটার দেখে, সিনেমায় যায়। এর কারণ কি? যদি বলা হয় যে, তারা বিক্ষিপ্তি, বিনোদন ও মনোরঞ্জন চায়, তাহলে উত্তরকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। কেন অপর একজনের জীবন ও জটিলতায় নিজেকে নিমজ্জিত করা, নিজেকে একটি চিত্রকর্ম, সংগীতাংশ অথবা উপন্যাস, নাটক বা চলচ্চিত্রের পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে একাত্ম অনুভব করা বিক্ষিপ্তি, মনোরঞ্জক ও আমোদজনক? কেন আমরা এধরনের ‘অবাস্তবতাকে’ বাস্তবতার তীব্রতা মনে করে সাড়া দেই, এটা কি ধরনের অদ্ভুত, রহস্যময় বিনোদন? এবং যদি কেউ উত্তর দেন যে, একটি অসন্তুষ্ট অস্তিত্ব থেকে সমৃদ্ধ অস্তিত্বে ও ঝুঁকিবিহীন অভিজ্ঞতায় আমরা আশ্রয় নিতে চাই, তাহলে পরবর্তী প্রশ্ন দাঁড়ায়, কেনইবা আমাদের অতৃপ্ত জীবনকে অন্যদের চরিত্র ও কাঠামোর মাধ্যমে তৃপ্ত করার আকাঙ্ক্ষা, কেনইবা মিলনায়তনের অন্ধকার থেকে আলোকোজ্জ্বল মঞ্চের দিকে নিবিষ্ট চিত্তে তাকিয়ে থাকা, যেখানে শুধু অভিনয়ের আতসবাজি চলছে?
স্পষ্টত, মানুষ তার একান্ত নিজত্বকে অতিক্রম করে আরো বেশি হতে চায়। সে হতে চায় একজন সমগ্র মানুষ। আলাদা ব্যক্তিবিশেষ হয়েই সে সন্তুষ্ট নয়; ব্যক্তিগত জীবনের আংশিকতা অতিক্রম করে অনুবেদ্য ও অভীপ্সিত ‘পূর্ণ জীবনের’ সে অভিসারী, যে-পূর্ণতার নামে খণ্ড জীবন তাকে নিয়ত ছলনা করে চলছে; অধিকতর বোধগম্য ও ন্যায়পরায়ণ এমন জগতের সে অভিলাষী, যে-জগত অর্থহীন নয়। সে বিদ্রোহ করে স্বীয় জীবনের ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে নিজেকে নিঃশেষ করার, নিজেদের ব্যক্তিত্বকে ভঙ্গুর, নিয়তিনিদিষ্ট সীমায় আবদ্ধ করার বিরুদ্ধে। অহং-বহির্ভূত কিন্তু তার চেয়ে বৃহত্তর ও নিজের কাছে প্রয়োজনীয় এমন কিছুর সঙ্গে সংলগ্ন হতে সে প্রত্যাশী। তার আকাঙ্ক্ষা অনুসন্ধিৎসু, বিশ্বগ্রাসী অহংকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরতম নক্ষত্রজগত ও গভীরতম অনুপরমাণুর রহস্যলোক পর্যন্ত প্রসারিত করায়, আমিত্বকে গোষ্ঠীর অস্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে, নিজের স্বাতন্ত্র্যকে সামাজিক করে নিতে।
যদি মানুষের প্রকৃতি হত যে, সে-একজন ব্যক্তির অতিরিক্ত কিছু হবে না, তাহলে এই আকাঙ্ক্ষা হত অবোধ্য ও অর্থহীন, কারণ একজন ব্যক্তিরূপেই সে তাহলে হত
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment