বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে আমরা কেন সাহায্য করছি?
পূর্ববাঙলা কবে স্বাধীন হবে এবং কিভাবে হবে সেসব প্রশ্নের নানাজাতীয় উত্তর দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাক্কায় যেহেতু এই লড়াইয়ে বাঙালিরা জয়ী হননি তাই আমরা মনেমনে এখন একটি দীর্ঘ অন্ধকার রাত্রির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছি। একটি কথা যুদ্ধ বিশারদ ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবং সাধারণ মানুষও একরকম বুঝতে পারছেন যে বহুদিন ধরে একাহাতে এই লড়াই চালিয়ে যাবার সাধ্য পশ্চিম-পাকিস্তানী রণনায়কদের নেই। তবে এই আত্মক্ষয়ী যুদ্ধকে কল্পতরু দাদারা কতদিন চালিয়ে যেতে সাহায্য করবেন সে বিষয়ে নানামুনির নানা মত। আমাদের দিক থেকে অন্তত কয়েক বছরের জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।
এই প্রস্তুতির একটা বড় অঙ্গ হলো আমাদের লক্ষ্য সম্বন্ধে দৃষ্টিকে স্বচ্ছ রাখা। নয়ত শেষে আশাভঙ্গের বেদনা আমাদের তিক্ত করে তুলবে। দীর্ঘ সংগ্রামের আনুষঙ্গিক হিসেবে যে-দুঃখবরণ করতে হয়, যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় প্রত্যেকটি মানুষকে তা করবার শক্তি থাকে যদি লক্ষ্য সম্বন্ধে মনে একটা স্পষ্ট ধারণা করতে পারি। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে গতদশকে দুবার সংক্ষিপ্ত মোকাবেলা হয়েছিল বটে কিন্তু সত্যিকারের একটা যুদ্ধ কবে আমরা করেছি তার কোনো স্মৃতিপরম্পরা কিছু নেই এমনকি আমাদের পিতামহীদের মনেও ; ইতিহাসের পাতায় আমাদের পূর্বপুরুষদের কিছু যুদ্ধ ও বীরত্বের কাহিনী পড়েছি বটে। তাই যোদ্ধা জাতির যেসব চরিত্র-লক্ষণ থাকে সেসব আমাদের মধ্যে নেই। উপরন্তু দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধে পৃথিবীর বহু জাতির মধ্যেই চারিত্রিক অনেক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে বলে শুনেছি। কারণ অভাব ও যন্ত্রণা একটা সীমা ছাড়িয়ে গেলে এবং বহুদিন ধরে চলতে থাকলে অনেকেরই মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দেবে। ১৯৩৯-৪৪-এর পরস্মৈপদী যুদ্ধেও আমাদের যেসব চরিত্রবিকার ঘটেছিল তার স্মৃতি হয়ত এখনও অনেকের স্পষ্ট মনে আছে। অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিষ নিয়ে কালোবাজারী, মেয়ে নিয়ে ব্যবসা—কিছুই বাকি ছিল না, যার পচনক্রিয়া এখনও আমাদের সমাজে চলছে। এমনটা যাতে আবার ঘটতে না পারে তারজন্য দেশের অধিকাংশ মানুষকে একটি আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে স্পষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করা দরকার নয় কি?
এবারও বলতে গেলে যুদ্ধটা একরকম পরস্মৈপদী, কিন্তু ঠিক তাও নয় ৷ অনেক বড় আকারে এবং অনেক গভীর ও ব্যাপকভাবে এই লড়াইয়ে আমরা পশ্চিমবাঙলার মানুষরা প্রথমত এবং সারা ভারতের মানুষও ; ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক এই লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছি। প্রত্যক্ষত এই লড়াই এখনও যারা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের অস্ত্র দিয়ে, খাদ্য দিয়ে, মনোবল জুগিয়ে সাহায্য করা তো আমাদের সম্পূর্ণ দায়িত্বের একটি ভগ্নাংশ মাত্র। এই লড়াইয়ের ফলে এক বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাণের ভয়ে ছুটে এসে সীমান্তের এইপারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এত বড় শরণার্থীর বন্যা এত অল্প সময়ের মধ্যে আর কোন দেশে এসেছে? যে-ইংরেজ সরকার অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এখনও ইয়াহিয়া খানকে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে, কারণ পাকিস্তানী অর্থনীতি একবার ভেঙে পড়লে নাকি তাকে আবার দাঁড় করান সহজ হবে না, সেই সরকারেরও নিজের দেশে দু’মাসে চল্লিশ লক্ষ শরণার্থী এসে পৌঁছলে কেমন নাভিশ্বাস উঠত আর কি পরিমাণ ত্রাহিত্রাহি আর্তনাদ শোনা যেত সেটা ভেবে দেখবার বিষয়। যাই হোক এই লক্ষলক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া, আহার দেওয়া, মহামারী থেকে রক্ষা করা, এদের মনোবল জাগিয়ে তোলা এবং কোনো আত্মঘাতী হানাহানির প্ররোচনা থেকে এদের বাঁচিয়ে রাখা সহজ কাজ নয়। তাছাড়া সারা বিশ্বে অনুকূল জনমত গড়বার চেষ্টা করাও আমাদেরই দায়িত্ব, কারণ একদল পাকপ্রেমী প্রথম থেকেই দেশে-বিদেশে বলতে শুরু করেছে যে “If Pakistan splits no country in the world stands to gain except India” I অতএব ভারতবর্ষই পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে নেমেছে। এর সমুচিত জবাব কথায় এবং কাজে প্রতিদিন দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া পূর্ববাঙলায় কামানের মুখে পড়ে যে সাতকোটি মানুষ বিহ্বল ও স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তাঁদের চিত্তকেও জাগিয়ে রাখার এবং প্রয়োজন হলে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment