বাঙলা দেশের অভ্যুদয় (২৫-২৬ মার্চ, ১৯৭১) এবং তার স্বতন্ত্র রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ (১৭ই এপ্রিল) দক্ষিণ এশিয়ায়, তথা সমগ্র বিশ্বে, রীতিমত এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই আলোড়নের অন্যতম একটি কারণ হলো এই যে এই নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা পূর্ব পরিকল্পিত কোনও এক রাজনৈতিক চক্রান্তের প্রতিফল নয় অথবা কোনও বিদেশী শক্তির (ভারতেরতো নয়ই) ষড়যন্ত্র প্রসূত নয়। বাঙলাদেশ নিঃসন্দেহে কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনাচক্রের এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। বাস্তবিকই, সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে যে অসহ্য শোষণ ব্যবস্থা পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব-পাকিস্তানের উপর আরোপ করেছিল, তার অবসান কামনা প্রত্যেকটি পূর্ববাঙলার মানুষের হৃদয়ের দাবি হিসেবে দেখা দিল ৷ তারপর যখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই দাবি পরিপূরণের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেল, তখনই প্রশ্ন উঠল সক্রিয় আন্দোলনের। এই আন্দোলন প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল সম্পূর্ণ অহিংসাত্মক ও শাসনতান্ত্রিক। আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গ প্রায় গান্ধীজীর প্রদর্শিত এবং মার্টিন লুথার কিং পরিচালিত আন্দোলনের ধারায় মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু ভুট্টো-ইয়াহিয়া চক্রান্ত সব বরবাদ করে দিল এবং তাদের ২৫-২৬ মার্চের কর্মসূচি বাঙলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম স্বতন্ত্র এক রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে সংগঠিত করতে বাধ্য করল। অর্থাৎ, বাঙলাদেশের অভ্যুদয় যদি কেউ অবশ্যম্ভাবী করে তোলে সে হলো পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী নীতি এবং এই ঔপনিবেশিক লুঠতরাজ বজায় রাখার জন্য ব্যাপক গণহত্যার চক্রান্ত।

ঔপনিবেশিক শোষণও কিন্তু এক ধরনের গণহত্যা। তবে এখানে শোষণ-বাবস্থা এমনভাবে পরিচালিত হয় যে হঠাৎ করে সাধারণ মানুষের কাছে তার স্বরূপ ঠিক ধরা পড়ে না। তবে ঔপনিবেশিক শোষণও ধীরে ধীরে শোষিত অঞ্চলকে রক্তশূন্য করে ফেলে, এবং জনগণকে অকালে ভবলীলা সাঙ্গ করতে বাধ্য করে। তবে সাম্রাজ্যবাদের এই প্রক্রিয়া বহুদিন ধরে চলতে থাকে বলে এর গণহত্যার প্রতিফল অনেকেই অনুভব করে উঠতে পারে না। এই শোষণ বজায় রাখার জন্যই শেষ পর্যন্ত ভুট্টো-ইয়াহিয়া জল্লাদচক্র মরীয়া হয়ে উঠল। শুরু হলো অবর্ণনীয় ও মধ্যযুগীয় অত্যাচারের পালা, যে পালার উদাহরণ জ্ঞাত ইতিহাসে পাওয়া যাবে না। আর এই রক্তস্নাত অধ্যায়ের মধ্যেই জন্ম নিল বাঙলাদেশ, যে বাঙলাদেশ এখন বিশ্ববাসীর প্রায় প্রধান এক আলোচ্য বিষয়ের রূপ পরিগ্রহ করেছে। ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বর্তমান নরমেধ যজ্ঞ বিগত ২৩ বছরের সাম্রাজ্যবাদী শোষণেরই সর্বাধুনিক এক পদ্ধতি ছাড়া আর কিছু নয়।

বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কি হবে না সেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে এই ঐতিহাসিক সত্য বারবার মনে করা দরকার যে বাঙলাদেশ পাকিস্তানেরই বিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী এক প্রতিফল। সুতরাং এই কারণেই একে সাদরে অভিনন্দন জানানোই যে কোনও প্রকৃত শান্তিকামী ও স্বাধীনতাকামী রাষ্ট্রের অন্যতম এক মহান দায়িত্ব ৷ যে ঐতিহাসিক ঘটনাস্রোত বাঙলাদেশের জন্ম অবধারিত করেছে সেই ঐতিহাসিক শক্তির বলেই পূর্বপাকিস্তানের মহাশ্মশান সোনার বাঙলার রূপ পরিগ্রহ করবে। ইতিহাসের এই ধারা স্মরণ রাখলেই বাঙলাদেশকে স্বীকৃতির প্রশ্ন নতুন করে বিশ্লেষণ করা যাবে।

আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতির বিষয়ে কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বীকৃতি লাভ করেছে। স্বীকৃতির প্রশ্নে আন্তর্জাতিক আইনের কোনও সুনির্দিষ্ট অনুশাসন নেই। বাস্তবিকই, বিভিন্ন রকমের স্বীকৃতির দৃষ্টান্ত যদি বিশ্লেষণ করা হয় তবে দেখা যাবে যে এর ধরন-ধারণ এত নানামুখী যে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইনের অজুহাতে কোনও রকম নিষ্ক্রিয়তা সমর্থনযোগ্য নয়। মূলত জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতেই এক একটি রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দেবে।

একদিকে যেমন রাষ্ট্রব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে অনেক রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়নি (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩৩ সালের আগে সোভিয়েত ইউনিয়নকে স্বীকার করেননি এবং এখনও পর্যন্ত চীনকে পিংপং কূটনৈতিক অধ্যায় সত্ত্বেও স্বীকার করে নেয়নি) আবার অপরদিকে চালচুলো কিছু না থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে (যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ল্যাটভিয়া, এস্তোনিয়া, ইত্যাদি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion