ষাটের শেষ সত্তরের শুরু : ‘বাঙলাদেশ'-এর ছোটগল্প
ষাট-দশকের শুরুতে যে তরুণ স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্র, দশকের শেষে সেই তরুণটিই একজন উৎসাহী গল্প-লেখক। এমন ঘটনা আজকের বাঙলাদেশে বিরল নয়। পঞ্চাশের দশকে যাঁরা বাঙলাদেশে সবচেয়ে প্রতিভাবান গল্পকার ছিলেন—পরের দশকে তাঁদের অনেকেই গল্প আর লিখলেন না, কিংবা এমন গল্প লিখলেন যা নতুন পাঠকের কাছে সাড়া তুলতে অক্ষম হলো।
প্রতি দশকেই নতুন একদল গল্পকার সাহিত্য ক্ষেত্রে আবির্ভূত হবেন অথবা গত দশকের গল্পকাররা ম্লান হয়ে যাবেন অবিসংবাদিত নিয়মে—এমন আশা অবাস্তব। ‘কাল তার এ্যালবামে কিছুতে রাখেনা সব ফোটো'—এ নিয়মে সময়ের পরিবর্তনে সাহিত্যের আঙ্গিকেরও হয় রূপান্তর। বিশ শতকের শেষার্ধে জীবন বড় বেশি অস্থির এবং দ্রুত পরিবর্তনের রূপরেখা তার ছাপ রাখছে আমাদের জীবন ও সৃষ্টিতে।
উনিশশো সাতচল্লিশের পর বাঙলা সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারা আবর্তিত হয়েছে ঢাকার সাহিত্য আন্দোলনকে ঘিরে। সাতচল্লিশের আগেও ঢাকার একটি বিশেষ সাহিত্য আন্দোলন অব্যাহত ছিলো, কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এ আন্দোলন রাজনৈতিক চিন্তাধারার সাথে জড়িত হয়ে পড়েছিল। স্য 'পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উচ্ছ্বাস করিতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে স্পষ্ট ছাপ রেখেছে এবং নিঃসন্দেহে বলা যায় এর পেছনে চেতনা ও বিবেকের চেয়ে বেশি কাজ করেছে ভাবালুতা। কিন্তু এই ভাবালুতার তীব্রতা বেশিদিন টিকলো না। বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালিরা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপন স্বরূপ চিনতে শুরু করল। সাহিত্যের মাধ্যমে এ আন্দোলন আরও সংহত হয়ে উঠল। এবং একদল প্রতিভাবান তরুণ গল্প-কবিতা-উপন্যাস ও অন্যান্য সৃষ্টিশীল রচনায় জীবনবাদের স্পষ্ট স্বাক্ষর রাখার প্রয়াসে নামলেন।
সাহিত্য বিতর্কাতীত নয়। জীবনকে বাদ দিয়ে সাহিত্য হতে পারেনা।
কিন্তু, জীবন কি? স্পষ্ট প্রত্যক্ষ গোচরীভূত সবই জীবন এবং অন্যকিছু জীবন নয়, এমন প্রশ্ন নিয়ে চিরকাল তর্ক হয়েছে। গল্প-কবিতা কিংবা সকল সৃষ্টিধর্মী শিল্প জীবনাতীত নয় বলেই রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক চেতনা কবি ও কথাশিল্পীর সৃষ্টিতে বিশেষ একটি স্থান অধিকার করে থাকে। বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনও তাই বাঙলাদেশের সাহিত্যে একটি উজ্জ্বল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কবিতা ফেব্রুয়ারির ফসলকে ধারণ করেছে সবচেয়ে বেশি, অথচ গল্প কিংবা উপন্যাসে সুপ্রচুর ফলন সম্ভব হয়নি।
কিন্তু জীবন কোন বিশেষ ঘটনা নয়, নয় কোনো বিশেষ দিন। পঞ্চাশের দশকে গল্পকাররা জীবনকে উপলব্ধি করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের সেই পরম উপলব্ধির ফল থেকে বীজ বোনার চেষ্টাও করেছিলেন। এবং সবচেয়ে বড় কথা, পঞ্চাশ-দশকের গল্পকাররা অতীতের গুহা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন সৃষ্টির সন্ধানে নেমেছিলেন।
এই দশকে যারা গল্প লিখেছিলেন—তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলাউদ্দিন আল আজাদ, শওকত আলী, আবদুল গফফার চৌধুরী, সৈয়দ সামসুল হক, সাইয়িদ আতিকুল্লাহ, হাসান হাফিজুর রহমান, জহির রায়হান, বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, সুচরিত চৌধুরী, ফজল শাহাবুদ্দিন এবং আরো অনেকে।
সাতচল্লিশের আগে থেকেই এঁদের পূর্বসূরীরা সাহিত্য-আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন। আবুল ফজল, শওকত ওসমান, আবু রুশদ, আবু জাফর শামসুদ্দিন, আকবর হোসেন, শাহেদ আলী এবং আরো কয়েকজন ছিলেন এঁদের পুরোধা। এঁদের অনেকেই এখনো সক্রিয়। কেউ কেউ সাম্প্রতিক কালেও নতুন গল্পের নিরীক্ষাধর্মী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
পঞ্চাশ-দশকের গল্পকাররা জীবনবোধের সঙ্গে শিল্প-বোধের সমন্বয় সাধনের দুরূহ প্রচেষ্টায় ব্রতী ছিলেন। তাঁদের রচনায় সে স্বাক্ষর স্পষ্ট।
আলাউদ্দীন আল আজাদ তাঁর প্রথম দিক্কার গল্পে গ্রাম-বাঙলার জীবন ও সংগ্রাম এবং মানব চরিত্রের নিগূঢ় বিশেষত্বের উপর চমৎকার গল্প লিখেছেন। কিন্তু-তাঁর সাম্প্রতিক বিরল প্রস্থ গল্প-সমূহে সে উজ্জ্বলতা আর নেই। বরং পড়তে পড়তে তাঁকে ভীষণ নিষ্প্রভ মনে হয়। সম্ভবতঃ আধুনিক জীবনের চেতনা ও যন্ত্রণাবোধের সঙ্গে মানব-চরিত্রের স্থূলতার অপরিণত মিশ্রণ ঘটাতে গিয়েই তিনি এ সমস্যার সন্মুখীন হয়েছেন। তাঁর গল্পগ্রন্থ 'ধানকন্যা' অথবা ‘জেগে আছি’ কিংবা ‘অন্ধকার সিঁড়ির' পাশে ‘যখন সৈকত' বইটি রাখলেই এই অমোঘ বৈপরীত্য চোখে পড়ে।
গল্পকার শওকত আলীয় প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ গল্পের নয়, ক্ষুদ্র উপন্যাস, ‘পিঙ্গল আকাশ'। শওকত আলী উত্তরবঙ্গের জীবন
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment