তপুকে আবার ফিরে পাব, এ কথা ভুলেও ভাবিনি কোনোদিন। তবু সে আবার ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে। ভাবতে অবাক লাগে, চারবছর আগে যাকে হাইকোর্টের মোড়ে শেষবারের মতো দেখেছিলাম, যাকে জীবনে আর দেখব বলে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি- সেই তপু ফিরে এসেছে। ও ফিরে আসার পর থেকে আমরা সবাই যেন কেমন একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। রাতে ভালো ঘুম হয় না। যদিও একটু-আধটু তন্দ্রা আসে, তবু অন্ধকারে হঠাৎ ওর দিকে চোখ পড়লে গা হাত পা শিউরে ওঠে। ভয়ে জড়সড় হয়ে যাই। লেপের নিচে দেহটা ঠক্ ঠক্ করে কাঁপে।

দিনের বেলা অনেকেই আমরা ছোটখাটো জটলা পাকাই।

দিনের বেলা ওকে ঘিরে দেখতে আসে ওকে। অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা। আমরা যে অবাক হই না তা নয়। আমাদের চোখেও বিস্ময় জাগে। দু-বছর ও আমাদের সাথে ছিল। ওর শ্বাসপ্রশ্বাসের খবরও আমরা রাখতাম। সত্যি কী অবাক কাণ্ড দেখ তো, কে বলবে যে এ তপু। ওকে চেনাই যায় না। ওর মাকে ডাকো, আমি হলপ করে বলতে পারি ওর মা-ও চিনতে পারবে না ওকে।

চিনবে কী করে? জটলার একপাশ থেকে রাহাত বিজ্ঞের মতো বলে, চেনার কোনো উপায় থাকলে তো চিনবে। এ অবস্থায় কেউ কাউকে চিনতে পারে না। বলে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

আমরাও কেমন যেন আনমনা হয়ে পড়ি ক্ষণেকের জন্য।

অনেক কষ্টে ঠিকানা জোগাড় করে কাল সকালে রাহাতকে পাঠিয়েছিলাম, তপুর মা

আর বউকে খবর দেবার জন্য।

সারাদিন এখানে-সেখানে পইপই করে ঘুরে বিকেলে যখন রাহাত ফিরে এসে খবর দিল, ওদের কাউকে পাওয়া যায়নি, তখন রীতিমতো ভাবনায় পড়লাম আমরা। এখন কী করা যায় বল তো, ওদের একজনকেও পাওয়া গেল না? আমি চোখ তুলে তাকালাম রাহাতের দিকে।

বিছানার উপর ধপাস করে বসে পড়ে রাহাত বলল, ওর মা মারা গেছে।

মারা গেছে? আহা সেবার এখানে গড়াগড়ি দিয়ে কী কান্নাটাই না তপুর জন্যে কেঁদেছিলেন তিনি। ওঁর কান্না দেখে আমার নিজের চোখেই পানি এসে গিয়েছিল।

বউটার খবর?

ওর কথা বলো না আর। রাহাত মুখ বাঁকাল। অন্য আর-এক জায়গায় বিয়ে করেছে। সে কী! এর মধ্যেই বিয়ে করে ফেলল মেয়েটা? তপু ওকে কত ভালোবাসত। নাজিম বিড়বিড় করে উঠল চাপা স্বরে।

সানু বলল, বিয়ে করবে না তো কি সারাজীবন বিধবা হয়ে থাকবে নাকি মেয়েটা। বলে তপুর দিকে তাকাল সানু।

আমরাও দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলাম ওর ওপর।

সত্যি, কে বলবে এ চারবছর আগেকার সেই তপু, যার মুখে একঝলক হাসি আঠার মতো লেগে থাকত সবসময়।

কী হাসতেই না পারত তপুটা। হাসি দিয়ে ঘরটাকে ভরিয়ে রাখত সে। সে হাসি কোথায় গেল তপুর? আজ তার দিকে তাকাতে ভয়ে আমার রক্ত হিম হয়ে আসে কেন?

দু-বছর সে আমাদের সাথে ছিল।

আমরা ছিলাম তিনজন।

আমি, তপু আর রাহাত।

তপু ছিল আমাদের মাঝে সবার চাইতে বয়সে ছোট। কিন্তু বয়সে ছোট হলে কী হবে, ও-ই ছিল একমাত্র বিবাহিত।

কলেজে ভর্তি হবার বছরখানেক পরে রেণুকে বিয়ে করে তপু। সম্পর্কে মেয়েটা আত্মীয়া হত ওর। দোহারা গড়ন, ছিপছিপে কোটি, আপেল রঙের মেয়েটা প্রায়ই ওর সাথে দেখা করতে আসত এখানে। ও এলে আমরা চাঁদা তুলে চা আর মিষ্টি এনে খেতাম। আর গল্পগুজবে মেতে উঠতাম রীতিমতো। তপু ছিল গল্পের রাজা। যেমন হাসতে পারত ছেলেটা, তেমনি গল্প করার ব্যাপারেও ছিল ওস্তাদ।

যখন ও গল্প করতে শুরু করত, তখন আর কাউকে কথা বলার সুযোগ দিত না। সেই-যে লোকটার কথা তোমাদের বলছিলাম না সেদিন। সেই হোঁৎকা মোটা লোকটা, ক্যাপিটালে যার সাথে আলাপ হয়েছিল, ওই যে লোকটা বলছিল সে বার্নাডশ' হবে, পরশু রাতে মারা গেছে একটা ছ্যাকরা

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion