কাশ্মীরী আপেল
একদিন সন্ধেবেলায় বাজারে দু-চারটে জিনিস কিনতে বেরিয়েছিলাম। কাছেই রাস্তার উপরেই পাঞ্জাবিদের মেওয়া ইত্যাদি নানারকম ফলের দোকান চোখে পড়লো। এক দোকানে খুব সুন্দর গোলাপি রঙের আপেল সাজানো চোখে পড়লো। খুব লোভ লাগলো। আসলে আজকাল তো শিক্ষিত সমাজে ভিটামিন আর প্রোটিন শব্দের গুণাগুণ বিচার করার প্রচণ্ড প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। আগে টমেটোকে তো কেউ পুষ্টিকর বলে গ্রাহ্যই করতো না। আর আজ টমেটো তা খাদ্যতালিকায় অবশ্য গ্রহণীয় হিসাবে গণ্য হচ্ছে। গাজরও তো আগে গরিব লোকেরাই পেট ভরাবার জন্য খেতো। ধনীব্যক্তিরা অবশ্য এর তৈরি হালুয়াই খেয়ে থাকেন। কিন্তু আজ সবাই জানতে পেরেছে যে, গাজরেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আছে, সে কারণে গাজরেরও ইদানিং খাবার টেবিলে স্থান হতে আরম্ভ করেছে। আর আপেলের ক্ষেত্রে তো একটা কথা প্রচলিতই আছে যে, রোজ যদি একটা করে আপেল খেতে পারেন, আপনার আর ডাক্তারের প্রয়োজন হবে না। সত্যিই তো, ডাক্তারের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য আমরা নিমফল পর্যন্ত খেতে প্রস্তুত থাকি। সুতরাং আপেল সেদিক থেকে স্বাদ ও রসের ক্ষেত্রে আমের চেয়ে ভালো না হলেও, মন্দ তো কোন অংশেই নয়। তবে হ্যাঁ, বেনারসের ল্যাংড়া, লক্ষ্ণৌ-এর দশহরী আর বোম্বাই-এর আল্ফালোঁ জাতীয় আমের স্বাদের কথাই আলাদা। এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এমন দ্বিতীয় কোন ফল জগতে আর নেই বললেই চলে। কিন্তু-এর মধ্যে ভিটামিন আর প্রোটিন আছে কিনা; থাকলে কতটা পরিমাণে বা বেশি আছে কিনা; এ সব বিষয়ে গবেষণার জন্য পশ্চিমী ডাক্তারবাবুরা এখনও আসেন নি, তবে আপেলের পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়ে গেছে। এখন আর সে কেবল সুস্বাদু ফলই নয়- এর মধ্যে প্রচুর উপকারিতাও আছে।
আমি দোকানদারের সঙ্গে দামদস্তুর করে কয়েকটা আপেল চাইলাম। দোকানদার আমাকে বললো— 'বাবুজী, খুব ভালো আপেল খোদ কাশ্মীর থেকে এসেছে। আপনি নিয়ে যান, খেলে শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে।'
আমি রুমাল বের করে তার হাতে দিয়ে বললাম— 'বেছে বেছে দেবে কিন্তু।' দোকানী পাল্লা তুলে তার কর্মচারী ছোকরাটিকে বলল-'আধাসের কাশ্মীরী আপেল বের করে নিয়ে আয়, বেছে বেছে আনবি।'
ছোকরা চারটে আপেল আনলো, দোকানী ওজন করলো। তারপর একটা ঠোঙায় ভরে এবং রুমাল দিয়ে ঠোঙাটা বেঁধে আমাকে দিয়ে দিল। আমি চার আনা পয়সা তার হাতে দিলাম।
বাড়ি ফিরে ঠোঙাটা যেমন-কে-তেমনই রেখে দিয়েছিলাম। রাতেরবেলায় আপেল বা অন্য কোন ফল খাওয়া ঠিক না। দিনের বেলাতেই ফল খাওয়া উচিত। তাই সকালে হাত-মুখ ধুয়েই খাবার জন্য একটা আপেল বের করলাম। দেখলাম সেটা পচে গেছে। একটা টাকার আকারে দাগ ধরে পচে গেছে। মনে মনে ভাবলাম, রাতে দোকানদার বোধহয় ঠিকমত দেখতে পায়নি। এরপর আরেকটা বের করলাম। কিন্তু সেটিও অর্দ্ধেক পচা ছিল। এবার আমার সন্দেহ হল; দোকানদার আমাকে ঠকালো না তো? এরপর তৃতীয় আপেলটি বের করে আনলাম। সেটি আগের মতো পচা ছিল না বটে; কিন্তু এক ধারটা চাপ লেগে বসে গেছে। এবার চতুর্থ আপেলটি দেখলাম। উপর থেকে দেখলে সেটিতে কোন দাগই ছিল না; কিন্তু তার মধ্যে একটা কালো গর্ত ছিল, যা সাধারণত কুলের মধ্যে দেখা যায়। কাটার পর দেখলাম যে ভেতরটা এমনই ক্যাত্ ক্যাত্ করছে, যেমন কুলের ভেতর পোকা ভ্যাদ্ ভ্যাদ্ করে। ফলে একটা আপেলও খাবার যোগ্য হল না। আসলে চারআনা পয়সার জন্য ততটা দুঃখ হল না যতটা কিনা সমাজের এই সব চারিত্রিক পতনের জন্য। দোকানদার বুঝেসুঝেই আমার সঙ্গে প্রতারণার চাল চেলেছিল। যদি একটা আপেল পচা হতো, তবে আমি তাকে ক্ষমার যোগ্য মনে করতাম। ভাবতাম, বোধহয় তার নজরে পড়েনি। কিন্তু, আশ্চর্য! চার চারটেই খারাপ বেরুবে? এ তো পরিষ্কার ক্রেতা ঠকানো। কিন্তু বাস্তবে, এই প্রতারণার ব্যাপারে আমারও কিছুটা
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment