শিশু
শিশুকে এত ভাল লাগে কেন?
আমার নবাগত দৌহিত্রটি সম্প্রতি আমার মনে এই চিন্তাটি উদ্রিক্ত করিয়াছে। পাঁচ বৎসরের শিশু, কিন্তু তাহাকে লইয়াই সমস্ত দিন মাতিয়া আছি, অন্য কিছু করিবার আর অবসর নাই। কখনও তাহাকে কাগজের নৌকা বানাইয়া দিতেছি, কখনও জাহাজ, কখনও দোয়াত, কখনও ঘুড়ি। শুধু তাই নয়, তাহাকে আমার গৃহিণীর কল্পিত প্রণয়ী ধরিয়া লইয়া তাহার সহিত নানারূপ ছদ্মকলহে প্রবৃত্ত হইয়াছি। বালকটি শিষ্ট নহে, শান্ত তো নহেই।
ইতিমধ্যেই সে আমার হুঁকা উল্টাইয়াছে, কলিকা ভাঙিয়াছে, চশমার খাপটি বারংবার খুলিয়া চশমাটি অধিকার করিতে চাহিতেছে। ধূলিধূসরিত দেহ লইয়া ক্রমাগত আমার ঘাড়ে পিঠে পড়িতেছে। বালাপোশখানার দফা রফা হইয়া গেল।
তথাপি কিছুতেই তাহার উপর চটিতে পারিতেছি না। মাঝে মাঝে দুই-একবার ধমক দিতেছি বটে, কিন্তু সে ধমকের অন্তঃসারশূন্যতা অবিলম্বেই প্রকট হইয়া পড়িতেছে। দুষ্টটা হাসিতেছে।
সঙ্গে সঙ্গে আমিও হাসিতেছি।
খবরের কাগজটা আসিবামাত্রই সে দখল করিয়াছে, খানিকটা ছিঁড়িয়াছে এবং খবরের কাগজের প্রত্যেক ছবিটির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্নে বিব্রত করিয়া তুলিয়াছে। তাহাকে যাহা হউক একটা উত্তর দিয়া স্তোক দিতেছি বটে, কিন্তু নিজের অজ্ঞতায় ও অক্ষমতায় মনে মনে লজ্জিত হইতেছি। ভুক্তভোগীমাত্রেই জানেন, সরল শিশুর সরল প্রশ্নগুলি কি ভীষণ সরল!
দাদু, খবরের কাগজে কি লেখা থাকে?
খবর।
খবর কি?
ইহার উত্তর দেওয়া কঠিন হইল। সুতরাং বলিলাম, নানা দেশের সব গল্প লেখা আছে ওতে। দাও, রেখে দিই, নষ্ট করতে নেই।
গল্প বল না দাদু, একটা ওর থেকে। দেখ, দেখ, ওটা কি দেখ।
দেখিলাম একটা টিকটিকি একটা পতঙ্গকে ধরিয়াছে। মুমূর্ষু পতঙ্গটা ছটফট করিতেছে।
উত্তেজিত বালক খবরের কাগজ ফেলিয়া বালিশটার উপর দাঁড়াইয়া উঠিল।
বলিলাম, টিকটিকি ফড়িং ধরে খাচ্ছে।
বিস্ময়বিস্ফারিত নেত্রে শিশু কিছুক্ষণ সেই দিকে তাকাইয়া রহিল। তাহার পর বলিল, টিকটিকি দুধ খায় না বুঝি?
না।
ভাত?
না। ভাত কে রেঁধে দেবে বল ওকে?
ওর বুঝি মা নেই?
বিপদ আসন্ন বুঝিয়া কৌশলে বিষয়ান্তরে উপনীত হইলাম।
বালিশ থেকে নেমে দাঁড়াও, তোমার মা দেখতে পেলে বকবে।
বালিশে দাঁড়ালে মা বকে কেন দাদু, তুমি তো বকো না?
এই উক্তির পর বালিশ পদদলিত করার জন্য তিরস্কারবাণী উচ্চারণ করা আমার পক্ষে অসম্ভব হইয়া দাঁড়াইল। তাহার জননীর অযৌক্তিক ক্রোধের দোহাই দিয়াই বালিশটি রক্ষা করিতে প্রয়াস পাইলাম।
তোমার মা যে ভয়ঙ্কর রাগী। দেখতে পেলে তোমাকেও বকবে, আমাকেও বকবে। বালিশ থেকে নাব।
মা তো এখন রান্নাঘরে।—এই বলিয়া দুর্বৃত্তটা একটি পদ বালিশে রাখিয়া অন্য পদটি টেবিলে স্থাপন করিল। উদ্দেশ্য—টিকটিকিকে পর্যবেক্ষণ করা।
বুঝিলাম, টেবিলস্থিত দোয়াতের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কালি তো পড়িবেই, দোয়াতটাও না ভাঙে! সুতরাং ভ্রমরবেশী রাজপুত্রের গল্প ফাঁদিয়া তাহার মনোযোগ আকর্ষণ করিতে চেষ্টা পাইলাম।
এই ভাবে সমস্ত দিন চলিতেছে।
কিছুতেই ছোকরাকে বাগাইতে পারিতেছি না, এবং পারিতেছি না বলিয়া মনে কোনো প্রকার ক্ষোভও হইতেছে না। উপরন্তু খুশিই হইতেছি।
কিন্তু, কেন?
একা শুইয়া শুইয়া চিন্তা করিতেছি।
বাহিরের ঘরটাতে আমি একাই শয়ন করি। এতক্ষণ সে আমার কাছেই ছিল, এইমাত্র তাহার মা আসিয়া খাইবার জন্য তাহাকে ভিতরে লইয়া গেল। সে যাইবার সময় বলিয়া গেল যে, সে রাত্রে আমার নিকটেই শয়ন করিবে এবং ভ্রমরবেশী রাজপুত্রের উপাখ্যানটি শেষ পর্যন্ত শুনিবে। বলা বাহুল্য, আমার ইহাতে আপত্তি নাই! কিন্তু তাহার মায়ের দেখিলাম ঘোরতর আপত্তি রহিয়াছে। আসলে ছেলেটিকে কাছে না লইয়া শুইলে তাহার ঘুম হয় না, কিন্তু সে কারণ দর্শাইল অন্যরূপ। বলিল, বালকটি ঘুমের ঘোরে এমন ঘুরপাক খায় যে, তাহাকে কাছে লইয়া শুইলে স্বয়ং কুম্ভকর্ণকেও জাগিয়া বসিয়া থাকিতে হইবে।
আমি কুম্ভকর্ণ নহি, তথাপি কিন্তু ভীত হইলাম না। নাতিও আমার কানে কানে চুপি চুপি বলিয়া গেল যে সে ঠিক আসিবে, আমি যেন কপাটটা খুলিয়া রাখি।
খুলিয়া রাখিয়াছি, এবং শুইয়া শুইয়া চিন্তা করিতেছি,
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment