শঙ্করীর ঘরেই
সেদিন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি নামল সন্ধ্যার আগেই। দুপুর থেকে গুমোট হয়েছিল, বিকেল বেলা মেঘ এল আকাশ ছেয়ে। অন্ধকার হয়ে গেল চারিদিক। কড় কড় করে বাজ পড়ল কোথায় যেন। তাড়াতাড়ি বাড়ির সদর দরজাটা বন্ধ করে দিল শঙ্করী। তারপর ঘরের জানালাগুলোও।
একটা জানালা বন্ধ করা গেল না। ছিটকিনি ছিল না। বার বার খুলে যেতে লাগল সেটা। জলের ছাঁট ঢুকতে লাগল ঘরের ভিতর। জানালার নীচেই দড়ির খাট ছিল একখানা, তার উপর বিছানা ছিল। সেইটে টেনে সরিয়ে নিয়ে এল শঙ্করী। তারপর জানালাটা ঢেকে দিলে একটা মোটা কম্বল দিয়ে। তবু জল আসতে লাগল, কপাট দুটো দড়াম দড়াম শব্দও করতে লাগল। শঙ্করী ভ্রূকুঞ্চিত করে চেয়ে রইল সেদিকে কয়েক মুহূর্ত। তারপর মনে পড়ল। মনে পড়ল জানালার কপাট দুটোতে দুটো কড়া লাগানো আছে। দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলেই তো হয়। এদিক ওদিক চেয়ে দেখল, দড়ি পেল না কোথাও। পুরনো কাপড়ের পাড় ছিঁড়বে? খোকনের পুরনো কাপড় আছে। কিন্তু সেগুলো পাড়ার একটি গরিব ছেলেকে দেবে বলে রেখে দিয়েছিল সে। তারপর হঠাৎ মনে পড়ল চুলের ফিতে তো আছে। মাথার চুল খুলে চুলের ফিতেটা বার করে ফেলল সে। তারপর ফিতে দিয়ে জানালার কড়া দুটো বেঁধে দিলে শক্ত করে। দড়াম দড়াম শব্দটা বন্ধ হল। পরমুহূর্তেই রাগ হল খোকনের উপর। কতদিন থেকে খোকনকে বলছে যে জানালার ছিটকিনিটা সারিয়ে রাখ। কিন্তু এ সামান্য কাজটা সে আর করে উঠতে পারছে না। কাল নিজেই গিয়ে সে রঘু মিস্ত্রীকে ডেকে আনবে। শঙ্করীর রাগ কিন্তু বেশিক্ষণ রইল না। মনে হল কি করে সময় পাবে ছেলে। ভোর হতে না হতেই তো বাড়িতে রোগীর ভিড়। তারপর একটু কিছু মুখে দিয়ে বাইকে চড়ে রোগীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। ফেরে একটা-দেড়টার সময়। ভাত খেয়ে আধ ঘণ্টাও বিশ্রাম করে না। আবার বেরিয়ে পড়ে। দু’বছরের মধ্যেই খুব প্র্যাকটিস হয়েছে খোকনের। হঠাৎ শঙ্করীর মনে হল এই দুর্যোগে খোকন কোথায় আছে? আজ ভীমগঞ্জে যাবে বলেছিল। সে তো অনেক দূর। শঙ্করীর মনটাতে মেঘ ঘনিয়ে এল। চতুর্দিক প্রকম্পিত করে বাজ পড়ল আর একটা। দুর্গা, দুর্গা, দুর্গা—শঙ্করীর মুখ থেকে অতর্কিতে বেরিয়ে পড়ল ঠাকুরের নাম। কিন্তু তাতে চিন্তা কমল না। সম্ভব অসম্ভব নানারকম বিপদের কথা জাগতে লাগল তার মনে। আবার বাজ পড়ল। ‘নারায়ণ রক্ষা কর!’ বলতে বলতে নিজের ছোট্ট ঠাকুরঘরটিতে ঢুকে পড়ল সে। ভাঁড়ারঘরের এক কোণেই একটি ছোট কাঠের সিংহাসনে লক্ষ্মী-নারায়ণের যুগল মূর্তি। তার সামনেই উপুড় হয়ে পড়ল শঙ্করী।
“খোকনকে রক্ষা কর ঠাকুর। ও-ই যে আমার একমাত্র ভরসা। ওকে অনেক বিপদ থেকে তো বাঁচিয়েছ ঠাকুর, তোমারই দয়ায় অকূল সমুদ্র পার হয়েছি। সব তোমারই দয়ায়—” বাইরে তুমুল ঝড়-বৃষ্টি চলতে লাগল। ঠাকুরের সামনে উপুড় হয়ে পড়েই রইল শঙ্করী।
...তার অতীত জীবনটা সহসা যেন মূর্ত হয়ে উঠল তার মানসপটে। কুড়ি বছর আগের ঘটনা, এখনও কিন্তু সেটা জ্বল জ্বল করছে আগুনের মতো, দগ দগ করছে ঘায়ের মতো। না, সে ভোলেনি, কিছু ভোলেনি।
...পাড়ার সবার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ওরা। হাহাকার উঠছে চারিদিকে। তাদের বাড়ি ঘিরেও দাঁড়িয়ে আছে মুসলমানের দল। কপাট বন্ধ করে দিয়েছেন শঙ্করীর স্বামী। দমাদ্দম কুড়ুল পড়ছে কপাটে। কপাট ভেঙে গেল শেষে। ঢুকল গুণ্ডার দল পিল পিল করে। শঙ্করীর স্বামী রামদা নিয়ে বাধা দিতে গিয়েছিল, কিন্তু পারল না। ঘাতকের কুড়ুলের কোপ পড়ল তার গলায়। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল। উঃ, কি সে রক্তের ফোয়ারা। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আর উঠল না। বুড়ি শাশুড়ি ছিল, তাকেও জবাই করলে তার চোখের সামনে। বুড়ির সেই আর্ত চিৎকার এখনও কানে বাজছে তার। কিন্তু তাকে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment