একেই বলে বিড়ম্বনা।

আমি একজন ডেলি প্যাসেঞ্জার। সেদিন সমস্ত দিন আপিসে কলম পিষে ঊর্ধ্বশ্বাসে হাওড়ায় এসে লোকাল ট্রেনের একখানি থার্ড ক্লাসে বসে হাঁপাচ্ছি—এমন সময় দেখি সামনের প্লাটফর্ম থেকে বোম্বে মেল ছাড়ছে আর তারই একটি কামরায় এমন একখানি মুখ আমার চোখে পড়ে গেল যাতে আমার সমস্ত বুক আশা আনন্দে দুলে উঠল।

বহুদিন আগে আমার এক ছেলে তারকেশ্বরে মেলা দেখতে গিয়ে ভিড়ে কোথায় হারিয়ে যায়—আর ফেরেনি। অনেক খোঁজ-খবর করেছিলাম, কিছুতেই কিছু হয়নি। ভগবানের ইচ্ছা বলে মনকে প্রবোধ দিয়েছিলাম। আজ হঠাৎ তারই মুখখানি—হ্যাঁ, ঠিক সেই মুখটিই বোম্বে মেলের একটা কামরায় দেখতে পেলাম।

আর কি থাকতে পারি?

তাড়াতাড়ি গিয়ে বোম্বে মেলে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে মেলও ছেড়ে দিলে। ট্রেনে উঠে আবার ভালো করে দেখলাম—হ্যাঁ, ঠিক সেই। পাশে একটি বৃদ্ধও বসে আছেন।

ভয়ে ভয়ে রুদ্ধনিশ্বাসে জিজ্ঞাসা করলাম—“এতদিন কোথায় ছিলি? আমাকে চিনতে পারিস?”

হা ঈশ্বর—সে উত্তর দিলে হিন্দীতে। “হামারা নাম পুঁছতে হেঁ? কেঁও? হামারা নাম মহাদেও মিসর, ঘর ছাপরা জিলা।”

সমস্ত মনটা ভেঙে গেল—মনে হল যেন দ্বিতীয়বার আমি পুত্রহারা হলাম।

বৃদ্ধটি বললেন—“হামারা লেড়কা হ্যায় বাবুজি, আপ কেয়া মাঙতে হেঁ?”

রুদ্ধকণ্ঠে বললাম—“কিছু না।”

বেহারী ছাপরাবাসী পিতাপুত্রকে বিস্মিত করে দু-ফোঁটা চোখের জলও আমার শুষ্ক শীর্ণ গালের উপর গড়িয়ে পড়ল।

বর্ধমানে নামলাম।

আবার Excess fare—বাড়তি মাশুল দিতে হল।

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion