দাঙ্গার সময়
হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার আতঙ্কে আকাশ-বাতাস থমথম করছে। দিনের বেলাটা তবু কোনো রকমে কাটে কিন্তু রাতটা আর কাটতে চায় না। ওই বুঝি শাঁখ বাজল, ওই বুঝি ‘বন্দেমাতরম্’! যে-কোনো কোলাহলের সামান্যতম আভাস পেলেই দুড়দুড় করে সবাই ছাদের উপর এসে হাজির হই। প্রায়ই কিছু হয় না, দু-চার মিনিটের মধ্যেই থেমে যায় সব। ঠাণ্ডায় ছাদে বেশিক্ষণ দাঁড়ানোও অসম্ভব, নেবে আসতে হয়। গিন্নি কেবল তদারক করে বেড়ান প্রত্যেক কপাটের প্রত্যেক খিল, প্রত্যেক জানলার প্রত্যেক ছিটকিনি ঠিক আছে কি-না। রাত্রে পালা করে জাগা হয়। এই সুযোগে ‘সুনরি’ দাইও তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তার তাড়িখোর নাকবসা লম্বা স্বামী ফৈজুই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা! কারণ বাড়িতে আমি ছাড়া সে-ই দ্বিতীয় পুরুষ। তৃতীয় পুরুষ আমার দশ বছরের ছেলেটি। আমার সম্বল একটি লাঠি, সেটিকে ছড়ি বললেই আরও ভালো হয়। ফৈজু একটা ভোঁতা বর্শা যোগাড় করে এনেছে। ছাতের উপর ইট জমা করা হয়েছে প্রচুর। এর বেশি যুদ্ধোপকরণ যোগাড় করতে পারা যায়নি। কিন্তু মুসলমানদের নৃশংস হত্যাকাহিনীর, দুর্ধর্ষ প্রতাপের, হিটলারী চালচলনের যেসব বর্ণনা শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল তাতে এই সব সামান্য সরঞ্জাম নিয়ে তাদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে যে পেরে উঠব সে ভরসা হচ্ছিল না কিছুতে। আমার বন্দুক একটা আছে অবশ্য; কিন্তু টোটা নেই। যে দু-চারজন অফিসারের সঙ্গে ভাব ছিল তাঁদের প্রত্যেককে অনুরোধ করেছি টোটা সংগ্রহ করে দেবার জন্য। প্রতিশ্রুতি সকলেই দিয়েছেন, কিন্তু কার্যত প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই সেই পুরাতন সত্যটিকে বারংবার স্মরণ করেছি—কারও কথার ঠিক নেই। সাধে মুসলমানরা আমাদের নাজেহাল করেছে। মুসলমানরা যদি আক্রমণ করে ওই সরু লাঠি এবং ভোঁতা বর্শা দিয়েই আত্মরক্ষা করতে হবে।
যে সব গুজব শোনা যাচ্ছে তা রোমাঞ্চকর। শোনা যাচ্ছে, মুসলমানেরা অতর্কিতে নদীপথে আসবে। বহু নৌকো না কি যোগাড় করেছে তারা। অস্ত্রশস্ত্র প্রচুর-বোমা বন্দুক তো আছেই—কামানও আছে না কি। আমাদের বাড়ি ঠিক গঙ্গার উপরেই সুতরাং প্রথম ধাক্কাটি আমাদের সামলাতে হবে। কিন্তু কি করে যে সামলাব তা ভাবতে গিয়ে শরীরের রক্ত হিম হয়ে আসছে। ওই সরু লাঠি আর ভোঁতা বর্শা দিয়ে কি...। ফৈজুর ভয় নেই। সে ভোঁতা বর্শাটা ঘষে ঘষে ধার করে আর ভরসা দেয়— “কুছ ডরিয়ে নেহি হুজুর, সব ঠিক হো যায়ে গা। দরিয়াপুর মে গোয়ালা বস্তি হ্যায়”—ইত্যাদি।
দিনের বেলা ভয়টা কম থাকে। সুতরাং দার্শনিক মনোবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিই, ইতিহাসের নজীর তুলে আশ্বস্ত হবার চেষ্টা করি। এমন কি, দিনের আলোতে নিজের অতীত জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকেও যাচিয়ে দেখবার সাহস পাই। আজ না হয় এই কাণ্ড হয়েছে, কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্ত মুসলমানদের সঙ্গে যোগাযোগ, এমন কি, ঘনিষ্ঠতাও তো ছিল।
হঠাৎ সেদিন রহিমের মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। মনে হল রহিম কিংবা রহিমের মা কি আমার শত্রু হতে পারে? রহিমের বাবা আবদুল আমাদের চাকর ছিল, আমাদের ক্ষেতখামারের তদারক করত। কখন কোন্ জমিতে কি বীজ বুনতে হবে, কটা লাঙল লাগবে, কখন কোন্ জমির ফসল কাটতে হবে, ক'জন মজুর দরকার, কোন্ ফসল কোন্ হাটে বিক্রি করলে বেশি দাম পাওয়া যায়—সমস্ত ভার আবদুলের উপর। অর্থাৎ আসলে আবদুলই মালিক ছিল। সে-ই সব করত। তার বিশ্বস্ততার সন্দেহ করবার কোনো কারণও ঘটেনি।
...একটা কথা মনে পড়ল হঠাৎ। রহিমের মায়ের দুধও আমি খেয়েছি। রহিম আর আমি সমবয়সী। একই বছরে একই মাসে জন্ম আমাদের। আমি জন্মাবার মাস দুই পরেই মা অসুখে পড়েন। তখন রহিমের মা নিজের দুধ খাইয়ে আমাকে মানুষ করেছিল। প্রচুর দুধ ছিল তার। অনেক বড় বয়স পর্যন্ত তার মাই খেয়েছি। মানে, প্রায় চার-পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত। মনে আছে রহিমের মা আমাকে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment