নদী, মানুষ ও উন্নয়ন (প্রথম পর্ব)
আলো আর আকাশের থেকে নদী যতখানি আশা করে আমিও তেমন
একদিন করিনি কি? শুধু একদিন তবু? কারা এসে ব’লে গেল নেই
গাছ নেই—রোদ নেই—মেঘ নেই—তারা নেই—আকাশ তোমার তরে নয়!
… …
নদী কেন বেঁচে থাকে? একদিন এই নদী—শব্দ করে হৃদয়ে বিস্ময়
আনিতে পারে না আর; মানুষের মন থেকে নদীরা হারায়—শেষ হয়!
‘নদীরা’ : জীবনানন্দ দাশ
নদীর কি জীবন আছে? নদীর কি ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে? নদীর কি বয়স আছে? আছে কি তার রাগ কিংবা ভালোবাসার অনুভূতি? নদী কি খুশি হয় কিংবা মন খারাপ করে? নদীর কি মৃত্যু আছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কি হবে? আমি যদি সবগুলোর উত্তর ‘না’ বলি তাহলে প্রথাগত বিজ্ঞান আপত্তি করবে না। যারা নদীকে দূর থেকে দেখে, বইপুস্তক টেলিভিশনে চলচ্চিত্রে নদী দেখে চিন্তিত বা আনন্দিত হয় কিংবা যারা বিজ্ঞানকে যান্ত্রিকভাবে দেখে অভ্যস্থ তাদের অনেকে এসব প্রশ্ন শুনেই বিরক্ত হতে পারেন। কিন্তু আমি যদি বাংলাদেশের মানুষ, যারা নদীর সঙ্গে নিজের জীবন মিলিয়ে দেখে, যারা অজানা কাল থেকে নদীর সঙ্গে কথা বলে, নদীর সঙ্গে অভিমান করে, নদীর রাগ দেখে তাকে শান্ত করতে চেষ্টা করে, যারা নিজের স্বজনের চাইতে নদীকে কোনো অংশে কম করে দেখে না, তারা এসব প্রশ্ন শুনলে হ্যাঁ হ্যাঁ করবে বটেই।
আমরা তাদের চোখ দিয়ে দেখলে নদী মানে কেবল নিষ্ক্রিয় যে পাত্রে রাখা যায় তার আকার ধারণ করে সেই পানির সমাবেশ নয়। নদী তো পানি বটেই, কিন্তু যখন এটি নদী তখন এটি কেবল পানি নয়। নদী তখন পানির চাইতে বেশি, একটি প্রবল সক্রিয় সত্তা হিসেবে হাজির হয়। আমরা তখন দেখি নদীর জন্মও হয়, মৃত্যুও হয়। একটা নদীতে সকল জীবের মতোই সব পর্বই দেখি—শৈশব, যৌবন, বার্ধক্য। দেখি বৃদ্ধ নদী সন্তান-সন্ততি রেখে যেন ক্রমে মরে যায়। শুকিয়ে যায়।
প্রবাহ দেখে বোঝা যায় নদী জীবন্ত না মৃত। জীবন্ত নদীতে প্রবাহ থাকে জীবন্ত। তখন নদীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আনন্দ-ক্রোধ সবই দেখা যায়। বোঝা যায় সন্তোষ-অসন্তোষ। আর যদি নদীতে প্রবাহ না থাকে তাহলে এসব আর কিছুই পাওয়া যায় না। তখন বোঝা যায় জীবিত আর মৃত নদীর তফাৎ। জীবন্ত নদীর জীবন শুধু একা নদীরই থাকে না। এই নদীর পানিও শুধু পানি থাকে না, এটা হয়ে দাঁড়ায় অসংখ্য প্রাণের আধার। নদী বা সমুদ্রের পানিতে যে কত প্রাণের জন্ম হয়, কত প্রাণ যে তার মধ্যে বেঁচে থাকে তার হিসাব করা দুরূহ। শুধু ভেতরে নয় বাইরেও নদীর জীবনের সঙ্গে আরও অনেক জীবন জড়িয়ে থাকে। থাকে বহু মানুষের জীবন, থাকে গাছপালা পশুপাখী উদ্ভিদ লতাপাতা পোকামাকড় ইত্যাদি যাবতীয় প্রাণের সম্পর্ক। নদী যখন মরে যায় তখন তাই সবারই মরণের দশা হয়। বিষণ্ণতা দেখা যায় শুধু নদীর শরীরে নয় চারদিকে সকল প্রাণের শরীরেই। মৃত্যু তখন জেঁকে বসে সবার শরীরেই।
নদীর জীবনের সাড়া পাওয়া যায় আরেকটি ক্ষেত্রে। সেটি হল—নদীর ক্রোধ, প্রতিশোধস্পৃহা আর ধ্বংসাত্মক প্রবণতার মধ্যে। নদী যখন তার প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হয় কিংবা যখন প্রবল নিয়ন্ত্রণের শিকার হয় তখন তার দু’টো প্রতিক্রিয়া হয় যা আঘাতপ্রাপ্ত হলে অন্য যেকোনো প্রাণির ক্ষেত্রেই হয়। এগুলো হল : সবল হলে আসে পাল্টা আঘাত বা প্রতিশোধ আর দুর্বল হলে পরাজিত ভেঙে পড়া চেহারা হয়; ক্ষোভে, দুঃখে কাতরতায় মুষড়ে পড়ে, একসময়ে মৃত্যু; প্রবাহ থেমে যায়, পানির ভেতরকার সব প্রাণ আস্তে আস্তে মরে যেতে থাকে।
সবল নদীর ‘প্রতিশোধের’ ভাষা আমরা জানি। যেকোনোভাবে পথ খুঁজে নেবার চেষ্টা, ক্রুদ্ধ রোষে ভাঙন, সে এক ভয়ংকর স্বেচ্ছাচারিতা। বৃক্ষ, জমি, ঘরবাড়ি, হাটবাজার, ধর্মস্থান, মানুষ, পশুপাখি কিছুই সামনে দাঁড়াতে পারে না। ভয়ংকর বন্যাও তার প্রতিশোধের
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment