বিজ্ঞান দর্শন : সংজ্ঞার্থ নিরূপণ ও বিভ্রান্তি
সৃজনশীলতার অনেকগুলো পূর্বশর্তের মধ্যে অন্যতম হলো মস্তিষ্ককে যথাসম্ভব উপাত্ত ও তথ্য মুখস্ত রাখার ঝামেলা থেকে অব্যাহতি দেয়া। দুঃখস্মৃতি কিংবা সুখস্মৃতি অহেতুক বহন না করা। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই বিরক্ত হই এমনকি খানিকটা হতাশও, জ্ঞানের প্রশ্নে যে কোনো অযৌক্তিকতায়। অথবা যে কোনো ধরনের বিতর্কে। ১৯৯৯ সালের দিকে ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’-এর জনৈক সহকারী সম্পাদকের একটি মত—‘বিজ্ঞানের আবার দর্শন কি?’ এই বিতর্ক মূলত সেই ঘরানার। ভদ্রলোক এটিও বললেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এই তো সব। আপাতভাবে অপ্রাসংঙ্গিক হলেও ঘটনাটির উল্লেখ করলাম গালিব আহসান খানের লেখা ‘বিজ্ঞানের দর্শন’ প্রবন্ধ গ্রন্থের আলোচনার যথার্থতা বোঝাতে। আমি যদিও দর্শনের ছাত্র নই, তবে বিজ্ঞান বিশেষত পদার্থবিজ্ঞান পড়তে গিয়ে একাডেমিক দর্শনের সঙ্গে কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনুশীলিত দর্শনের সঙ্গে বিজ্ঞান-দর্শনের যে ভিন্নতা তা দিয়ে বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করার যে রীতি, তার অসংগতি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করি। বস্তুত, বিজ্ঞান হচ্ছে প্রকৃতি ও বিশ্বজগতকে অন্তহীনভাবে জানার এক পদ্ধতি—অপূর্বনির্ধারিত ও অনির্বচনীয়। বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে যে দার্শনিক আলোচনা, তত্ত্বনির্মাণ, বিতর্ক ও বিরোধ; এমনকি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির যে সমস্যা ও তার সমাধান দিয়ে থাকেন দার্শনিকরা, তা চূড়ান্ত বিচারে বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রায় কোনো ভূমিকা রাখেনা। বরং জীবন, জগত ও বিশ্বজগতকে দেখার ক্ষেত্রে দর্শন ও বিজ্ঞানের যে একীভূত কৃত্য, তা ক্রমাগত বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে বদলে যাচ্ছে দর্শনের ভূমিকাকে সংকুচিত করে। উল্লেখ্য, বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস দর্শন থেকে পদার্থবিজ্ঞানকে পৃথক করে সর্বপ্রথম বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। মানবপ্রজাতির আদি জিজ্ঞাসায় দেখা যায়, বিজ্ঞান দর্শন অপার্থক্য থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হতো। এই প্রশ্ন উত্থাপনে বিতর্ক ও বিতণ্ডার মোড়কে এক ধরনের বলয় সৃষ্টি হয় ক্ষুদ্র জগতে বন্দী থাকার ভেতর দিয়ে। কিন্তু বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্থাপনের নামে প্রশ্নহীনতার দার্শনিক চোরাবালিকে অতিক্রমণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে বিস্ময়কর ও বৃহত্তর জ্ঞানের জগতে। সংগতকারণে দর্শনের ভূমিকা হয়ে যায় গৌণ।
প্রকৃতি ও বিশ্বজগতকে ক্রমাগতভাবে জানার ভেতর দিয়ে বিজ্ঞান যেখানে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, সেখানে কী পদ্ধতিতে বিজ্ঞান পথ চলেছে, দর্শন তা নিয়ে জাবর কাটছে। এবং এ নিয়ে সৃষ্টি করেছে বিজ্ঞান-দর্শন। ফোকাসে আসছে না সত্যিকার বিজ্ঞান-দর্শন। গালিব আহসান খান বলেন, ‘বৈজ্ঞানিকগণ পদ্ধতির প্রয়োগ করেন। আর দার্শনিকগণ পদ্ধতির অবকাঠামো নির্ধারণ এবং মূল্যায়ন করেন।’ অন্যদিকে বিজ্ঞানী আলী আসগর বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কথাটি একটু বিভ্রান্তিকর। কারণ, আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট নিয়মাবলী নেই বা কোনো ব্যবস্থাপত্র, যা ব্যবহার করে একজন ‘বিজ্ঞানী’ হয়ে উঠতে পারে। বস্তুত, সত্যিকার অর্থে কোনো সৃজনশীলকর্মেরই নির্দিষ্ট ও পূর্বনির্ধারিত পদ্ধতি থাকতে পারে না। প্রবন্ধকার গালিব আহসান খান বলেন, ‘বৈজ্ঞানিকগণ তাদের মতবাদকে নিশ্চিত, বৈধ এবং যুক্তিযুক্ত বলে দাবি করেন। কিন্তু নিশ্চয়তার, বৈধতার এবং যৌক্তিকতার স্বরূপ এবং মানদণ্ড কেমন হবে, এ বিষয়গুলো তাঁরা আলোচনা করেন না, এগুলো নির্ধারণ করেন দার্শনিকগণ।’ আসলে বিজ্ঞানে নিশ্চয়তা ও অপরিবর্তনীয়তার কোনো স্থান নেই, এটি দার্শনিকরা বরাবরই বিস্মৃত এবং আধুনিক বিজ্ঞান যতোই গণিত নির্ভর হচ্ছে ততই দার্শনিকদের এই বিস্মৃতির গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানের সেই অর্থে বিশ্বজগতকে অধ্যয়নের ভাষা যে গণিত তা সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে অথবা বড়জোর ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে যে কোনো দার্শনিক বিতর্ক বিজ্ঞানের তত্ত্বসৃষ্টিতে কোনো প্রভাব ফেলবেনা। যেহেতু উদ্ভাবনের ব্যাপারটি আকস্মিক, অভূতপূর্ব ও ধারাবাহিকতাবর্জিত ফলে তা অসংজ্ঞায়িত, অন্তত গতানুগতিক অর্থে। যদি তা সম্ভব হতো তাহলে উদ্ভাবনের কাজটি নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ও উৎপাদনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ত; কোনো অনিশ্চয়তা ও মৌলিকতা আমরা খুঁজে পেতাম না। বিজ্ঞানের দর্শনকে বুঝতে কিংবা বিজ্ঞানের দর্শনের প্রকৃতি সন্ধানে অসংখ্য বিজ্ঞানীর সৃজনশীল কৃত্যকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে বড় জোর। তবে অবশ্যই কোনো পদ্ধতি হিসেবে নয়। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, বিজ্ঞানের দার্শনিকতা কি?
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment