আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগের কথা। এদেশ সবেমাত্র ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। এদেশের মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন এখনকার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। এমন সমাজে যৌনতা ভীষণ নিষিদ্ধ একটি বিষয়। সে সময়ে আমাদের দেশে এ বিষয়ে কথাবার্তা বা আলাপ-আলোচনা অত্যন্ত গর্হিত একটি ব্যাপার বলে পরিগণিত হত। শুধু এদেশেই নয় ইয়োরোপ-আমেরিকাতেও ১৯৬০-এর দশকে ‘যৌন বিপ্লব’-এর ধাক্কায় গোটা সমাজে যৌনতা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপকভাবে পাল্টে যাবার আগে যৌন বিষয়ে কিংবা নরনারীর যৌন সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনাকে সহজভাবে নেয়া হত না। ভাবতে খুব অবাক লাগে, ওরকম একটি সময়ে বয়সে অত্যন্ত তরুণ একজন মানুষ এই বিষয়ে লিখতে দৃঢ় হাতে কলম ধরেছেন। শুধু যৌনতা নয়, নারীমুক্তির প্রসঙ্গও এখানে যে মাত্রায় উপস্থাপিত হয়েছে, তা বাংলাভাষায় প্রথম। লেখাগুলো অত্যন্ত পরিণত এবং এসব লেখায় মানুষের যৌনতার জৈবিক ও সামাজিক দিকগুলো এবং এর অন্যান্য অনুষঙ্গ আলোচিত হয়েছে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সময়ের বিচারে কাজটি এক কথায় অসাধারণ। যে সাহসী ও প্রগতিশীল তরুণ এই অসাধারণ কাজটি করেছিলেন তাঁর নাম দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

আমাদের সময়ে এবং এর কিছু আগে ও পরে অনেকেরই দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় কৈশোরে। ষাট, সত্তর ও আশির দশকের শিশু-কিশোরদের অনেকেই এই লেখককে চিনেছে  যে গল্পের শেষ নেই বা  জানবার কথা বইগুলোর মাধ্যমে। বড় হয়ে জেনেছি তাঁর কাজের মূল ক্ষেত্র দর্শন। কিন্তু যখন তাঁর সম্পর্কে আরও পরিপূর্ণভাবে জানতে পেরেছি তখন মনে হয়েছে তাঁর কাজের আসল উদ্দেশ্য দর্শন নয়। কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল দার্শনিকের কাজ শুধু জগৎকে ব্যাখ্যা করা নয়, একে বদলে ফেলাও।  জানবার কথা বইটির উৎসর্গ পত্রে দেবীপ্রসাদ লিখেছেন, ‘যারা দুনিয়াকে জেনে দুনিয়াকে বদলাবে /যারা আলো জ্বেলে অন্ধকার তাড়াবে / নতুন ভবিষ্যৎ যারা মুঠোয় আনবে /আমাদের দেশের সেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের উদ্দেশে।’ দুনিয়াকে বদলানোই ছিল দেবীপ্রসাদের গভীর জ্ঞানচর্চা এবং কর্ম-প্রাচুর্যময় জীবনের মূল লক্ষ্য। দুনিয়াকে বদলাতে হলে প্রয়োজন ‘অন্ধকার তাড়াতে’ পারে এমন চিন্তাশীল ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ। যাদের নেতৃত্বে সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রাম সঠিক পথে এগিয়ে যাবে। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি তরুণদের মধ্যে চিন্তাশীল ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার কাজে আজীবন নিবেদিত ছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্তির পর বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকেই এই উপমহাদেশে সমাজের আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রের আন্দোলন নতুনভাবে দানা বেধে ওঠে। এর সমান্তরালে গড়ে ওঠে মানুষের চিন্তা ও উপলব্ধিকে জাগানোর অন্য এক আন্দোলন। জ্ঞানচর্চা যখন নিছক কৌতূহল-তাড়িত নয়, পাণ্ডিত্যের জন্যও নয়, বরং মানুষের আত্মোপলব্ধি জাগানোর জন্য, তখন জ্ঞানান্বেষণের পরিধি জীবনের সব ক্ষেত্রকে না হলেও বহু ও বিচিত্র ক্ষেত্রকে স্পর্শ করবে সেটাই স্বাভাবিক। যৌনতা ও যৌনজীবন মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে, নিয়ন্ত্রণ করে। চিন্তার আন্দেলনের অগ্রণী পথিক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তাই মানুষের যৌনতা ও যৌনজীবন সম্পর্কে গভীর অন্বেষণে নিয়োজিত হন। পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই প্রকাশিত হয় তাঁর যৌন জিজ্ঞাসা ও যৌন জীবন বই দুটি এবং ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয় মানুষের যৌনতা এবং এর সামাজিক প্রেক্ষাপট বিষয়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বই  নিষিদ্ধ কথা আর নিষিদ্ধ দেশ [নিষিদ্ধ কথা]।

রক্ষণশীল সমাজে যৌনতা এক নিষিদ্ধ বিষয়, সেকালেও ছিল একালেও আছে। তাই এই বিষয়ে কথা বলাকেই তিনি ‘নিষিদ্ধ কথা’ বলে চিহ্নিত করেছেন। আর নিষিদ্ধ দেশ? যখন এই বইটি লিখছেন তখন পুঁজিবাদী দেশগুলোতে একরকম নিষিদ্ধই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, যেখানে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যৌনতা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে তিনি এখানে যুক্ত করেছিলেন, কারণ পুঁজিবাদী অর্থনীতি না থাকায় সোভিয়েত সমাজ মানুষের যৌনতার অনেক সমস্যাকে চিহ্নিত করতে

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion