সোনা-করা জাদুগরের গল্প
ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী
আদি কথা
মন্ত্র পড়িয়া যাহারা কোন আশ্চর্য্য কাজ করিতে পারে, তাহাদিগকে জাদুগর বা গুণী লোক বলে। জাদুগর সত্য সত্য আছে কি না, সে কথায় এখন প্রয়োজন নাই। তবে যাহারা জাদুগর সাজিয়া বেড়ায়, তাহারা প্রায় অনেকেই জুয়াচোর, ফাঁকি দিয়া লোকের নিকট হইতে তাহারা টাকা উপার্জন করে। "সোনা করিয়া দিব।" এই কথা বলিয়া অনেক সন্ন্যাসী ও ফকীর লোককে প্রতারণা করে। কোন লোকেরা বাটী গিয়া তাহারা বলে, "তোমার ঘরে যত রূপার গহনা ও টাকা আছে, সে সমুদয় আমার নিকট আনয়ন কর, মন্ত্রবলে ও দ্রব্যগুণে সেই রূপাকে আমি সোনা করিয়া দিব। একদিনে বড়মানুষ হইব, এই লোভে গৃহস্বামী ঘরের সমস্ত রূপার দ্রব্য ও নগদ টাকা তাহাকে প্রদান করেন। অবশেষে সন্ন্যাসী সেই সমস্ত দ্রব্য লইয়া পলায়ন করে।
কিন্তু লোককে যাহারা প্রতারণা করে, কখন তাহাদের ভাল হয় না। অসৎ লোকদিগের নিদারুণ কষ্টভোগ করিতে হয়। কখন একটিও মিথ্যা কথা বলিব না, যে কাজ মিথ্যা আমার বিশ্বাস, সে কাজ কখনই করিব না, কখন অসৎ কাজ করিব না,—বালককাল হইতে এইরূপ প্রতিজ্ঞা করিতে হয়। মিথ্যা কথা, মিথ্যা ব্যবহার,—ইতরের কাজ। মিথ্যাবাদী লোককে ভাগবান্ নিদারুণ দণ্ডে দণ্ডিত করিয়া থাকেন।
মিথ্যাবাদী লোক কিরূপ ভগবানের কোপে পতিত হয়, তাহার দৃষ্টান্তস্বরূপ তোমাদের নিকট আজ আমি একটি গল্প করিব। গল্পটি সম্পূর্ণ সত্য। যে লোকটির গল্প আমি করিব, অতি প্রখর বুদ্ধি ও নানা বিদ্যায় তাঁহার মন বিভূষিত ছিল; কিন্তু জীবনের প্রারম্ভে তিনি গুটিকত মিথ্যা কথা বলিয়াছিলেন। সে জন্য এত বুদ্ধি—এত বিদ্যা থাকিতেও তাঁহার জীবনটি মাটি হইয়া গিয়াছিল! সমস্ত জীবন তাঁহাকে কষ্টভোগ করিতে হইয়াছিল। যেদিন তাঁহার মৃত্যু হইল, কেবল সেই দিন তাঁহার দুঃখের শেষ হইল। পাছে মিথ্যা কথা মুখ দিয়া বাহির হয়, পাছে কোনো কুকাজ করিয়া ফেলি, পাছে কোনো নীচ চিন্তা মনে উদয় হয়, তাহার জন্য সর্ব্বদা সাবধান হইতে হয়।
কিসে টাকা হয়, সে জন্য সকলেই চেষ্টা করিয়া থাকে। সীসা ও পারাকে রূপা এবং লৌহ ও তামাকে সোনা করিতে পারা যায়, অনেককাল হইতে লোকের মনে এইরূপ একটা বিশ্বাস আছে। এক পয়সার তামাকে সোনা করিতে পারিলে, অনায়াসে দশ টাকা লাভ হয়। অর্থোপার্জনের ইহা অপেক্ষা সহজ উপায় আর কি হইতে পারে? সে জন্য তামাকে সোনা করিবার নিমিত্ত অতি প্রাচীনকাল হইতে লোকে চেষ্টা করিতেছে। সেকালে কত দেশে কত লোকে এই কাজে জীবন উৎসর্গ করিয়াছিল। যে বিদ্যা-বলে লোকে এই চেষ্টা করিত, সেকালে লোকে তাহাকে "আলকেমি" বলিত। "আলকেমি" বিদ্যা লইয়া লোকে কোথায় কি করিয়াছিল, সে কথা বলিতে গেলে একটি গল্প হয়; কিন্তু আজ সে গল্পটি করিব না। আজ তোমাদিগের নিকট আমি বটগার সাহেবের গল্প করিব। জীবনের প্রথম অবস্থায় ইনিও "আলকেমি" বিদ্যার চর্চ্চা করিয়াছিলেন। অর্থাৎ তামাকে সোনা করিবার নিমিত্ত চেষ্টা করিয়াছিলেন।
১৬৮৫ খৃষ্টাব্দে অর্থাৎ ২১৭ বৎসর পূর্ব্বে বটগার জন্মণী দেশের অন্তর্গত প্রুশিয়া রাজ্যে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ১২ বৎসর বয়সে কাজ শিখিবার নিমিত্ত তিনি এক ডাক্তারখানায় নিযুক্ত হন। বাল্যকাল হইতেই রসায়নশাস্ত্রের প্রতি তাঁহার বিশেষ অনুরাগ ছিল। এই সময়ে রসায়নশাস্ত্র ও "আলকেমি" একই বিদ্যা ছিল। অবসর পাইলেই বটগার "আলকেমি" বিদ্যার চর্চ্চা করিতেন। অর্থাৎ নানা বস্তুর সংযোগে তামা, লৌহ প্রভৃতি নিকৃষ্ট ধাতুকে স্বর্ণে পরিণত করিতে চেষ্টা করিতেন। কয়েক বৎসর ধরিয়া ক্রমাগত তিনি পরীক্ষা করিতে লাগিলেন এবং দিবারাত্রি নানা বস্তু আগুনে গলাইতে লাগিলেন। বটগারের প্রখর বুদ্ধি ও অসাধারণ বিদ্যা দেখিয়া ডাক্তারখানার স্বামীও তাঁহাকে এ কাজে সহায়তা করিতে লাগিলেন। কয়েক বৎসর পরে বটগার সকলকে বলিলেন যে,—"আমি তামাকে সোনা করিবার উপায় করিয়াছি।" বটগার সত্য বলিতেছেন, কি মিথ্যা বলিতেছেন, তাহা স্থির করিবার নিমিত্ত একদিন
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment