মৃত্যুহীন লেনিনগ্রাদ
আলেকজান্ডার ওয়ার্থ
স্মরণে রাখার মতো অন্য একটি ঘটনা হল, ফ্রন্ট থেকে তিন-চার মাইল দূরে শহরে এক অংশ আধুনিক অস্ত্র ও কামানের গোলায় বিধ্বস্ত ট্যামবভ স্ট্রীটের একটি স্কুলবাড়ি পরিদর্শন। এটি পরিচালনা করতেন টিকোমিরভ নামে একজন বয়স্ক ব্যক্তি, যিনি ‘সোভিয়েত দেশের অন্যতম একজন ভালো শিক্ষক’ এই সুনাম অর্জন করেছিলেন। মাত্র ১৯০৭-এ একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন। চরম দুর্ভিক্ষের দিনগুলিতেও যেসব স্কুল বন্ধ হয়ে যায়নি, এটি তাদের মধ্যে একটি। চার-চার বার স্কুলটি জার্মান গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু স্কুলের ছেলেরাই ভাঙা কাচের টুকরো সাফ করে, ভাঙা দেওয়াল সারিয়ে জানালাগুলোতে প্লাইউড লাগিয়ে নিয়েছে। গত মে মাসের শেষ-গোলাবর্ষণে একজন শিক্ষয়িত্রী স্কুলের প্রাঙ্গণেই মারা পড়েছেন।
স্কুলের ছেলেগুলো লেনিনগ্রাদের ছেলেদের যেমনটি হওয়া উচিত, ঠিক যেন তাই। শতকরা পঁচাশি ভাগ ছেলেদের বাপেরা এখনও ফ্রন্টে লড়াই করছেন। কারো বাবা লড়াইয়ে মারাই পড়েছেন, আবার কারো বাবা হয়তো লেনিনগ্রাদের দুর্ভিক্ষে অনাহারে মারা গেছেন। আর এদের মায়েরা, যাঁরা এখনও বেঁচে আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই হয় লেনিনগ্রাদের ফ্যাক্টরিগুলিতে উৎপাদনের কাজ করছেন, বা যানবাহন পরিচালনা করছেন, বা কাঠের কাজ করছেন, নয়তো সিভিল ডিফেন্সের কাজে রয়েছেন। জার্মানদের প্রতি এই ছেলেদের রয়েছে প্রবল ঘৃণা। কিন্তু এরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এই ‘বেজন্মা’গুলো-লেনিনগ্রাদের বাইরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্রতি রয়েছে এদের মিশ্র ভালবাসা। এরা জানে যে, লন্ডন শহরেও বোমা পড়ছে, ইংলণ্ডের রাজকীয় বিমানবহর জার্মানদের উপর বোমা ফেলছে, আমেরিকা লরি দিয়ে লালফৌজকে সাহায্য করছে এবং এরা যে চকোলেট খাচ্ছে, তাও আমেরিকারই দেওয়া। তবুও এরা ক্ষুণ্ন যে আজ পর্যন্ত দ্বিতীয় ফ্রন্টই খোলা—হল না।
হেডমাস্টার কমরেড টিকোমিরভ আমায় বললেন কিভাবে স্কুলটা রক্ষা করেছেন এবং সেটি করেছেন বেশ ভালোভাবেই। ‘আমাদের কাঠের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। লেনিনগ্রাদ সরকার ধ্বংসস্তূপের কাছেই একটা ছোট কাঠের বাড়ি দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছেন। ভাঙা কাঠের টুকরোগুলো আমরা-আগুন জ¦ালাবার কাজে লাগাতাম। সেদিনগুলোতে চলত অবিশ্রান্ত গোলাবর্ষণ। ছেলেমেয়ে মিলে আমাদের ছাত্রসংখ্যা একশ কুড়ির মতো, তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গিয়ে আমরা ক্লাস চালাতাম। ক্লাস আমরা একদিনের জন্যও বন্ধ করিনি। খুব ঠান্ডা পড়েছে, ছোট্ট স্টোভ সামান্য একটু জায়গা গরম রাখত, আশ্রয়স্থলের বাকি জায়গার তাপমাত্রা ঠান্ডায় শুন্য ডিগ্রিরও নিচে নেমে যেত। এক কেরোসিনের কুপি ছাড়া আমাদের আলোর আর কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। তবুও আমরা কাজ চালিয়ে যেতাম। আমাদের ছেলেরা এত বেশি মনোযোগী এবং আগ্রহী ছিল যে, অন্যান্য বারের চেয়েও আমরা অনেক ভালো ফল দেখাতে পেরেছিলাম। অবাক লাগলেও, সত্যি। স্কুলে ছাত্রদের জন্য খাবার ব্যবস্থা ছিল, সেনাবাহিনীর উপর ভার ছিল খাবার যোগানোর। অনাহারে বেশ কিছু শিক্ষক মারা গেছেন, কিন্তু আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, আমাদের তত্ত্বাবধানে যারা ছিল তাদের সবাই মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে। তবে দুর্ভিক্ষের দিনগুলোতে ওদের দিকে তাকালে দুঃখ হত। ১৯৪১-এর শেষের দিকটায় ওদের অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ের মতো দেখাত না এরা যেন বোবা হয়ে গিয়েছে, ভালো করে হাঁটতে পারত না, কেবলি চাইত—বসে বসে থাকতে। কিন্তু এদের কেউই মারা যায় নি, একমাত্র যারা স্কুলে, আসা বন্ধ করে বাড়িতে ছিল, তারাই পরিবারের অন্যান্য সকলের সঙ্গে না খেয়ে মারা যায়...।’
এর পর টিকোমিরভ আমায় একটি মূল্যবান দলিল দেখালেন: দুর্ভিক্ষের সময়ের কয়েকটি তথ্য। এতে রয়েছে দুর্ভিক্ষের সময়ে লেখা ছেলেমেযেদের রচনার কিছু অংশ এবং আরও কিছু তথ্য। লাল রঙের ভেলভেটে মোড়ানো, মার্জিনে রয়েছে জল রঙে ছেলেদের আঁকা সব ছবি—সৈন্য, ট্যাঙ্ক, উড়োজাহাজ ইত্যাদি। পাশে ছোট ছোট টাইপ করা কাগজে লেখা: দুর্ভিক্ষের সময়ে রচিত কয়েকটি বিশেষ রচনা। একজন তরুণী লিখছে: ‘২২শে জুন পর্যন্ত আমরা সবাই কাজকর্ম করেছি এবং
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment