ফ্যাসিবাদ এবং সমাজবিপ্লব
রজনী পাম দত্ত
বর্তমান সমাজের সামনে মাত্র দুটো রাস্তা খোলা আছে। একটা হল—উৎপাদনশক্তির শ্বাসরোধ করতে চেষ্টা করা, উন্নতিকে আটকানো, বৈষয়িক ও মানবিক শক্তিকে ধ্বংস করা, আন্তর্জাতিক পণ্য বিনিময়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, বিজ্ঞান ও আবিষ্ক্রিয়াকে ব্যাহত করা, মতাদর্শের বিকাশকে চূর্ণ করা এবং সীমিত সংগঠনে কেন্দ্রীভূত স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রগতিবিরোধী আপসে-কাজিয়া-রত, পুরোহিত-তান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার স্তরে—অর্থাৎ সংক্ষেপে বললে দাঁড়ায় বর্তমান শ্রেণী-আধিপত্য বজায় রাখবার জন্য—সমাজকে যেন আরো জোর করে আদিম স্তরে ঠেলে দেওয়া। এই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের পথ। যেখানে বুর্জোয়াশ্রেণী ক্ষমতাসীন—তারা সেই পথের দিকেই অধিকতর পরিমাণে বাঁক নিচ্ছে। এ হল মানবজাতির ধ্বংসের পথ।
অন্য বিকল্পটি হচ্ছে—নূতন উৎপাদন শক্তিকে সামাজিক শক্তি হিসাবে সংগঠিত করা; বর্তমানের সমগ্র সমাজের সাধারণ সম্পদ হিসাবে, সমাজের বৈষয়িক ভিত্তিকে দ্রুততার সঙ্গে প্রভূত পরিমাণে উন্নত করা। দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, ব্যাধি এবং শ্রেণীগত ও জাতিগত বৈষম্য নির্মূল করা; বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অপরিমেয় অগ্রগতি ঘটানো এবং বিশ্ব-কমিউনিস্ট সমাজকে সংগঠিত করা—যেখানে সমস্ত মানুষ এই প্রথম পরিপূর্ণতায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতে মানবজাতির যৌথবিকাশ সাধনে স্ব স্ব ভূমিকা পালন করবে। এই পথ হচ্ছে কমিউনিজমের—উৎপাদন-শক্তির জীবন্ত প্রতিনিধি যে-শ্রমিকশ্রেণী, পুঁজিবাদী শ্রেণী-আধিপত্যের উপর তাদের বিজয়ের দ্বারাই একমাত্র বাস্তবে এই পথ তারা অর্জন করতে পারবে এবং সেদিকেই তারা অধিকতর পরিমাণে মোড নিচ্ছে। এই পথই আধুনিক বিজ্ঞান ও উৎপাদনশীল বিকাশকে সম্ভব ও অপরিহার্য করে তুলবে এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতির অকল্পনীয় সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।
এর মধ্যে কোন বিকল্পটি জয়যুক্ত হবে? আজকের সমাজ এই তীক্ষè প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
বিপ্লবী মার্কসবাদ দৃঢ়নিশ্চিত যে উৎপাদনশক্তি কমিউনিজমের পক্ষে, অতএব কমিউনিজমই বিজয়ী হবে। কমিউনিজমের বিজয় শ্রমিকশ্রেণীর জয়ের মধ্যে প্রকাশিত হবে—বর্তমান দ্বন্দ্বসংঘাতের একমাত্র সম্ভাব্য চরম পরিণামই হচ্ছে এই। অপর বিকল্পের রাত্রির দুঃস্বপ্ন আর “অন্ধকার যুগ”-এর গা শিরশির করা যে-ছায়া সাময়িক কালের চিন্তানায়কদের কল্পনায় ইতিমধ্যেই উঁকি-দিতে শুরু করেছে, তা পরাভূত হবেই, আন্তর্জাতিক কমিউনিজমের সংগঠিত শক্তি তাকে পরাভূত করবেই।
কিন্তু এই অবশ্যম্ভাবিতা মনুষ্যনিরপেক্ষ ব্যাপার নয়। বরং বলা যায় প্রধানত মানুষের দ্বারাই তা অর্জন করা সম্ভব। এই মুহূর্ত থেকেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এবং শ্রমিকশ্রেণীর বিজয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। কারণ এর উপরই মানবসমাজের সমগ্র ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সময় সংক্ষিপ্ততর হয়ে আসছে—কথায় বলে, কাচ ভেদ করে বালুকণা ছুটছে, সময় শেষ হতে আর দেরি নেই।
অনেকের কাছে, ফ্যাসিবাদের বিকল্প বা কমিউনিজম কোনো অভিনন্দন-যোগ্য বিকল্প নয় এবং তারা এটাকে অস্বীকার করতেই বেশি পছন্দ করে। উভয়কে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে। এমন কি, তাদের যজ্ঞে এরা হচ্ছে সমান্তরাল চরম মতবাদ। তারা তৃতীয় বিকল্পের স্বপ্ন দেখে যাও দুটোর কোনোটার মতোই হবে না, এবং যা শ্রেণীসংগ্রাম ব্যতিরেকেই ধনতান্ত্রিক ‘গণতন্ত্র’, পরিকল্পিত ধনতন্ত্র ইত্যাদি কাঠামোর পথ বেয়েই শাস্তিপূর্ণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করবে।
তৃতীয় বিকল্পের এই স্বপ্ন বস্তুতপক্ষে ভ্রান্ত। একদিকে, এ হচ্ছে অতীত যুগের—অর্থাৎ উদারনৈতিক পুঁজিবাদী স্তরের ধ্যানধারণার প্রতিধ্বনি বা ইতিমধ্যে সাম্রাজ্যবাদের আবির্ভাবের সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে। তাকে আর পুনর্জীবিত করা যাবে না। কারণ যে পরিস্থিতিতে এর উদ্ভব হয়েছিল তা এখন শেষ হয়ে গেছে। এখন হচ্ছে পুঁজিবাদের চরম অবক্ষয় এবং শ্রেণীসংগ্রামের চরম তীব্রতার সময়। এমন কি, গণতান্ত্রিক কাঠামোর যে ক্যারিকেচার পশ্চিম-ইয়োরোপ ও আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোতে এখনো পর্যন্ত বিপজ্জনকভাবে টিকে আছে, অধিকতর খোলাখুলিভাবে একনায়কতান্ত্রিক এবং নিপীড়নমূলক পদ্ধতির আশ্রয়ে ক্রমাগত তারই সংযোজন ও পরিবর্তন চলেছে (যথা: প্রশাসনের হাতে ক্ষমতাবৃদ্ধি, পার্লামেন্টের ক্ষমতার সংকোচন, জরুরী ক্ষমতার বৃদ্ধি, পুলিশী দমন ও সন্ত্রাসের প্রসার, বাক্স্বাধীনতা ও সভাসমিতি করার স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ আরোপ, ধর্মঘটের অধিকারকে সীমাবদ্ধ করা, গণবিক্ষোভ ও ধর্মঘটকে সন্ত্রাসের পথে দমন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্রোড়পতি কাগজের সামাজিকভাবে চটকদার জনপ্রিয়তার ধোঁকাবাজি,
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment