তৈলচিত্রের ভূত
একদিন সকালবেলা পরাশর ডাক্তার নিজের প্রকাণ্ড লাইব্রেরীতে বসে চিঠি লিখছিলেন। চোরের মতো নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে নগেন ধীরে ধীরে এগিয়ে তাঁর টেবিল ঘেঁষে দাঁড়ালো, পরাশর ডাক্তার মুখ না তুলেই বললেন, "বোসো নগেন।" চিঠিখানা শেষ করে খামে ভরে লিখে চাকরকে ডেকে সেটি ডাকে পাঠিয়ে দিয়ে তবে ডাক্তার নগেনের দিকে তাকালেন।
“বসতে বললাম যে, এরকম চেহারা হয়েছে কেন? অসুখ নাকি?”
নগেন ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল, চোরকে যেন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে সে চোর কিনা, এইরকম অতিমাত্রায় বিব্রত হয়ে সে বলল, “না না, অসুখ নয়, অসুখ আবার কিসের?”
গুরুতর কিছু যে ঘটেছে সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হয়ে পরাশর ডাক্তার দু-হাতের আঙুলের ডগাগুলো একত্র করে নগেনকে দেখতে লাগলেন। মোটাসোটা হাসিখুশি ছেলেটার তেল-চকচকে চামড়া পর্যন্ত যেন শুকিয়ে গেছে, মুখে হাসির চিহ্নটুকুও নেই, চাউনি একটু উদভ্রান্ত। কথা বলার ভঙ্গি পর্যন্ত কেমন খাপছাড়া হয়ে গেছে।
নগেন তাঁর মামাবাড়িতে থেকে কলেজে পড়ে। মাস-দুই আগে নগেনের মামার শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ রাখতে গিয়ে পরাশর ডাক্তার নগেনকে দেখেছিলেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে এমন কী ঘটেছে, ছেলেটা যাতে এরকম বদলে যেতে পারে? ছেলেবেলা থেকে মামাবাড়িতেই মানুষ হয়েছে বটে, কিন্তু মামার শোকে এরকম কাহিল হওয়ার মতো আকর্ষণ তো মামার জন্য তার কোনোদিন ছিল না! বড়োলোক কৃপণ মামার যে ধরনের আদর বেচারি চিরকাল পেয়ে এসেছে তাতে মামার পরলোক যাত্রায় তার খুব বেশি দুঃখ হবার কথা নয়, বাইরে মামাকে খুব শ্রদ্ধাভক্তি দেখালেও মনে মনে নগেন যে তাকে প্রায়ই যমের বাড়ি পাঠাতো তাও পরাশর ডাক্তার ভালো করেই জানতেন। পড়ার খরচের জন্য দুশ্চিন্তা হওয়ার কারণও নগেনের নেই, কারণ শেষ সময়ে কি ভেবে তাঁর মামা তার নামে মোটা টাকা উইল করে রেখে গেছেন।
নগেন হঠাৎ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “ডাক্তারকাকা, সত্যি করে একটা কথা বলবেন? আমি কি পাগল হয়ে গেছি?”
পরাশর ডাক্তার একটু হেসে বললেন, "তোমার মাথা হয়ে গেছে, পাগল হওয়া কি মুখের কথা রে বাবা! পাগল যে হয় অত সহজে সে টের পায় না যে, সে পাগল হয়ে গেছে।”
"তবে”— দ্বিধাভরে খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ নগেন যেন মরিয়া হয়ে জিজ্ঞাসা করে বসল, “আচ্ছা ডাক্তারকাকা, প্রেতাত্মা আছে?”
“প্রেতাত্মা মানে ভুত? নেই?”
“নেই? তবে—”
অনেক ইতস্তত করে, অনেক ভূমিকা করে অনেকবার শিউরে উঠে নগেন ধীরে ধীরে আসল ব্যাপারটা খুলে বলেল, চমকপ্রদ, অবিশ্বাস্য কাহিনী। বিশ্বাস করা শক্ত হলেও পরাশর ডাক্তার বিশ্বাস করলেন, মিথ্যা গল্প বানিয়ে তাঁকে শোনাবার ছেলে যে নগেন নয়, তিনি তা জানতেন।
মামা তাকেও প্রায় নিজের ছেলেদের সমান টাকাকড়ি দিয়ে গেছেন জেনে প্রথমটা নগেন একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। মামার এরকম উদারতা সে কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি। বাইরে যেমনই ব্যবহার করে থাকুন, মামা তাকে নিজের ছেলেদের মতো ভালোবাসতেন জেনে পরলোকগত মামার জন্য আন্তরিক শ্রদ্ধা ভক্তিতে তার মন ভরে গেলো। আর সেই সঙ্গে জাগল এইরকম দেবতার মতো মানুষকে সারাজীবন ভক্তি ভালোবাসার ভান করে ঠকিয়েছে ভেবে দারুণ লজ্জা আর অনুতাপ। শ্রাদ্ধের দিন অনেক রাত্রে বিছানায় শুতে যাওয়ার পর অনুতাপটা যেন বেড়ে গেল, শুয়ে শুয়ে সে ছটফট করতে লাগল। হঠাৎ এক সময় তার মনে হলো, সারাজীবন ভক্তি শ্রদ্ধার ভান করে মামাকে সে ঠকিয়েছে, এখন যদি সত্য-সত্যই ভক্তি শ্রদ্ধা জেগে থাকে, লাইব্রেরী ঘরে মামার তৈলচিত্রের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে এলে হয়তো আত্মগ্লানি একটু কমবে, মনটা শান্ত হবে।
রাত্রি তখন প্রায় তিনটে বেজে গেছে, সকলে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে, বাড়ি অন্ধকার। এত রাত্রে ঘুমোনোর বদলে মামার তৈলচিত্রের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করার জন্য ঠিক বিছানা ছেড়ে উঠে যাওয়াটা যে রীতিমতো
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment