রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ও গানে নদী
বাংলাদেশ ছিল নদীমাতৃক। নদী ছিল বাংলার জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু আজ যে-টুকু বাংলা আমাদের, সে বাংলা তেমন নদীবহুল নয়। যে-অংশ নদীবহুল এবং নদীর খেয়ালখুশীর সঙ্গে যে অংশের মানুষের জীবনযাত্রা একসূত্রে বাঁধা সে অংশ আজ আমাদের কাছে বিদেশ। অদৃষ্টের এ পরিহাস রবীন্দ্রনাথের কাছে ভয়ানক দুঃখের কারণ হত।
প্রকৃতি রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্ট করেছিল। সেদিক থেকে তিনি ওয়ার্ডসওয়ার্থের সগোত্র ছিলেন। কিন্তু প্রকৃতির বিভিন্ন প্রকাশের মধ্যে নদী কবিকে বোধহয় সবচেয়ে বেশী মুগ্ধ ক’রেছিল। তাই কবি নদীর কাছে সময়ে অসময়ে ছুটে গেছেন। তাই তিনি নদীর বুকে নৌকাতে ভাসতে এত ভালবাসতেন। নদীর তরুণীসুলভ চাপল্য এবং গতি কবির চিরতরুণমনে গভীর দাগ কেটেছিল। তাছাড়া সংসারের কোলাহল থেকে মুক্তি পাওয়ার জয় শান্তিপিপাসু কবিমন নদীর বুকেই আশ্ৰয় নিত।
অজস্র কবিতায় ও গানে কবি নদীর ভিন্ন ভিন্ন রূপকে অন্তরঙ্গভাবে প্রেমিকের মতো প্রকাশ করেছেন। সে প্রকাশ এমনভাবে ছড়িয়ে আছে যে তাকে একত্র সংগ্রহ করা অতি আয়াসসাধ্য। এখানে আমরা সেই বর্ণনাগুলির কতকগুলি নিয়ে আলোচনা করব।
কড়ি ও কোমলের ‘পত্র’ কবিতাটি কবি নৌকাযাত্রা থেকে ফিরে এসে তাঁর প্রিয়বন্ধু প্রিয়নাথ সেনকে লিখেছিলেন। সেখানে কবি বলছেন—
“জলে বাসা বেঁধেছিলেম,
ডাঙায় বড়ো কিচিমিচি।”
এবং
“কানে যখন তালা ধরে উঠি যখন হাঁপিয়ে
কোথায় পালাই, কোথায় পালাই—
জলে পড়ি ঝাঁপিয়ে।”
ঐ কবিতায় আবার কবি বলছেন—
“জানতো ভাই আমি হচ্ছি জলচরের জাত।”
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাতে বাংলা আমাদের কি কি দিয়েছে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জাহ্নবীবারির কথা ভোলেননি। সোনার তরী সম্বন্ধে কবি সুচনাতে—লিখেছেন—
“কিন্তু, সোনার তরীর লেখা আর এক পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলাদেশের নদীতে নদীতে গ্রামে গ্রামে তখন ঘুরে বেড়াচ্ছি, এর নূতনত্ব চলন্ত বৈচিত্র্যের নূতনত্ব।…”
“আমি শীত গ্রীষ্ম বর্ষা মানিনি, কতবার সমস্ত বৎসর ধ’রে পদ্মার আতিথ্য নিয়েছি, বৈশাখের খররৌদ্রতাপে, শ্রাবণের মুষলধারাবর্ষণে। পরপারে ছিল ছায়াঘন পল্লীর শ্যামশ্রী, এপারে ছিল বালুচরের পাণ্ডুবর্ণ জনহীনতা, মাঝখানে পদ্মার চলমান স্রোতের পটে বুলিয়ে চলেছে দ্যুলোকের শিল্পী প্রহরে প্রহরে নানাবর্ণের আলোছায়ার তুলি। এইখানে নির্জ্জন-সজনে নিত্যসংগম চলেছিল আমার জীবনে।”
এই কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘সোনার তরী’তে যদিও ‘ভরা নদী ক্ষুরধারা—খর পরসা। তবু কবি শূন্য নদীর তীরে পড়ে থাকলেন।’ “তোমরা ও আমরা”-তে-নদীর গতিশীলতা কবির অন্তরকে আচ্ছন্ন করেছে। তাই প্ৰথমেই তিনি বলছেন—
“তোমরা হাসিয়া বহিয়া চলিয়া যাও
কুলুকুলুকুল নদীর স্রোতের মতো,”
জলপথে ঝড়বৃষ্টির বর্ণনা পাই ‘নদীপথে’ কবিতায়। ভরা ভাদরের “নদী ভরা কূলে কূলে, খেতেভরা ধান”—কবিকে উন্মনা ক’রেছে।
“চৈতালি” গ্রন্থের সূচনাতে কবি নদীর কথা দিয়ে ‘চৈতালির’ মর্মকথা প্রকাশ করেছেন। বস্তুতঃ পতিসরের নাগর নদীর ওপর বোটে বাস করার সময় তিনি ঐ গ্রন্থের কবিতাগুলি রচনা করেছিলেন। নদীর প্রবাহের একধারে যেমন অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষুদ্র একটা ভাঙা ডাল থেকে ধীরে ধীরে শ্যাওলা জমে, মাছ আশ্রয় নেয়, বক শিকারের লোভে দাঁড়িয়ে থাকে, “চৈতালি তেমনি একটুকরো কাব্য যা অপ্রত্যাশিত।” এই গ্রন্থের ‘মধ্যাহ্ন’ কবিতার—
“ক্ষুদ্র শীর্ণ নদীখানি শৈবালে জর্জ্জর
স্থির স্রোতোহীন। অর্ধমগ্ন তরী ‘পরে
মাছরাঙা বসি, তীরে দুটি গোরু চরে
শস্যহীনমাঠে। শান্তনেত্রে মুখ তুলে
মহিষ রয়েছে জলে ডুবি। নদীকুলে
জনহীন নৌকা বাঁধা।”
‘খেয়া' কবিতার
“শুধু হেথা দুই তীরে—কেবা জানে নাম—
দোঁহাপানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।
এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে,
কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ধর হ’তে।”
নদী কবির হৃদয়পটে অদৃশ্য হস্তের তুলিতে ক্ষণে ক্ষণে নূতন নূতন ছবি এঁকেছিল। সে ছবি যেমন অসংখ্য তেমনি নানা রঙে রঙীন। ‘পদ্মা’ যেন কবির জন্মজন্মান্তরের প্রেয়সী।
“হে পদ্মা আমার,
তোমার আমায় দেখা শত শত বার।
একদিন জনহীন তোমার পুলিনে,
গোধূলির শুভলগ্নে হেমন্তের দিনে,
সাক্ষী করি পশ্চিমের সূর্য অস্তমান
তোমারে সঁপিয়াছিনু আমার পরান।”
আবার—
“তুমি কোন গান কর আমি কোন গান
দুই-তীরে কেহ তার পায়নি সন্ধান।
নিভৃতে শরতে-গ্রীষ্মে শীতে বরষায়
শতবার দেখাশুনা তোমায়
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment