বিপ্লবোত্তর বাঙলায় আমরা
বিশ্বের মানচিত্রে বাঙলাদেশ আজ একটি নতুন সংযোজন। সব মুক্তিকামী জাতির জন্যে একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতীক। আজ আমরা স্বাধীন। আমাদের জয় শুধু অস্ত্রের জয় নয়। এ জয় সত্যের, যুলুমের উপর মজলুমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, পশুত্বের বিরুদ্ধে মানবতার। অন্যায়, অত্যাচার আর উৎপীড়নের বিরুদ্ধে ন্যায়, আচার এবং সর্বোপরি মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা যারা সদারত, তাদের জন্যে আমাদের এ বিজয় হয়ে থাকবে সুমহান প্রেরণার উৎস।
শান্তিপ্রিয় বাঙ্গালীর অলসতাকে ব্যঙ্গ করেই বোধ হয় কোন এক কবি বলেছিলেন —
বাঙ্গালী মানুষ যদি প্রেত কারে কয়,
যত দাও লাথি, ঝাটা তত সে সয়।
বাঙালীর এ নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি প্রিয়তার সুযোগে পশ্চিমা শাসকবর্গ তাদের উপর সুদীর্ঘ চব্বিশ বছর একটানা শোষণ ও নিষ্পেশনের ষ্টীম রোলার চালিয়েছে। বাঙালী জাতির নব চৈতন্যোদয়ে তাসের প্রাসাদের ন্যায় গুড়িয়ে গেলো তাদের সাম্রাজ্যবাদের সুকঠিন প্রাসাদ। আঘাতের পর আঘাতের প্রচণ্ড ধাক্কায় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো তাদের প্রতিরোধের প্রাচীর। বিশ্বের সব বঞ্চিত, নিপীড়িত সৰ্বহারাদের আশার বাণী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলো স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাঙলা দেশ ৷
নবজাত শিশুরাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব জ্ঞান সম্পর্কে আমরা ক’জন সচেতন? একটি শিশুকে যেমন বেশী নাড়াচাড়া করলে বিকলঙ্গ হবার আশঙ্কা দেখা দেয় তেমনি শিশুরাষ্ট্র, বাঙলাদেশেরও প্রয়োজন যথোপযুক্ত পরিচর্যার। আজ আমাদের দলীয় স্বার্থ ভুলে গিয়ে সব কিছুর উপরে জনস্বার্থকে স্থান দিতে হবে। দুঃখের বিষয় আমরা সবাই নিজ নিজ কৃতিত্ব জাহির করতে চাই ৷ এতে করে আমরা একে অন্যের উপর দোষারোপ করছি, পরষ্পরের বিরুদ্ধে হিংসার অনল ছড়াচ্ছি। সবাই গলা ফাটিয়ে বুক ফুলিয়ে—নিজ নিজ অধিকার ও দাবী আদায় করতে চাচ্ছি। কেন আমরা এত স্বার্থপর? দেশের কাছে শুধু আমাদের পাওনা অধিকার ও দাবীটাই ন্যায্য? দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে কি কিছুই নেই? আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে আমরা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছি। এতে যে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।
বিপ্লবোত্তর বাঙলার সজীব মাটি লাখো শহীদের তাজা খুনে সিক্ত। আমার ভায়ের রক্তের বিন্দু মিশে আছে এদেশের প্রতিটি ধূলিকণায়। বাঙলার শ্যামল প্রান্তর থেকে রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। অথচ এরই উপর চলছে আমাদের স্বার্থোদ্ধারের গ্লানিকর মহড়া। বহু প্রাণের বিনিময়ে লব্ধ এ স্বাধীনতাকে এমনি স্বৈরাচারী স্বার্থান্বেষীর শিকার হতে দেয়া যায় না। যে কোন জাগ্রত বাঙালীর জন্যই বাংলার এ অপমৃত্যু হবে চরম বেদনাদায়ক ও লজ্জার কারণ। চলুন জাতির এ চরম দুর্দিনে সবাই স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব চিনে নেই। নিজের দোষকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে পরের দোষকে বড় করে দেখলে কোন দিনই দেশের উন্নতি হবে না। উন্নতি হবে না। প্রথমেই প্রয়োজন আত্ম-শুদ্ধির এবং জাতি গঠনে এটারই প্রয়োজন সর্বাধিক। ‘প্রথমে আত্মশুদ্ধি’ মানে এই নয় যে, অন্যের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠ সোচ্চার হবে না। স্মরণ রাখবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আমরা কোন দিনই যেন পিছ পা না হই!
স্বাধীন বাঙলায় আমরা বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি সত্য কথা এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে রাখবেন বাক স্বাধীনতা মানে যথেচ্ছাচারিতা নয় ৷ আপনার মনের কথা, আপনার বাঁচার কথা আপনি বলবেন—এতে কারো আপত্তি নেই ৷ কিন্তু অন্যের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে, হাজারো শহীদের তপ্ত খুনের উপর আপনি যদি আপনার ‘স্বার্থমহল’ তৈরী করতে চান তা হলে সেটা ভুলে যান। সব স্বার্থের উপরে নিজ দেশের দেশের স্বার্থের কথা ভাবুন। পরিস্থিতির সুযোগ নেবার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, যেমনটি করেনি খুনী ইয়াহিয়াকে ৷
আবার আমি উদাত্তকণ্ঠে এদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলি আসুন আমরা সবাই পরষ্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের সোনার বাঙলাকে গড়ে তুলি।
এ দেশ আমার। আপনার আর সবার। এদেশের অসহায় বঞ্চিত লাঞ্চিত নরনারীর
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment