এখানে রঞ্জার দেশ। এইখানে কান পাতি, রঞ্জাবতীর কান্না বাজে,

কতকাল কত রাত কসাড়ের গহিন জঙ্গলে মূর্ছাহত কাল সাঁঝে

পাথুরে মেঘের কাছে অফলা মাঠের মতো ঝিঁঝিঁ-ডাকা অথৈ রাত্তিরে

সেই কান্না বেজে চলে। আজ যায় কাল যায় দূরে লোনা সমুদ্রে তিমিরে

কত চর জেগে ওঠে, সমস্ত সুন্দরবনে হয়তো বসন্ত ফোটে গ্রামে

দখলের বাজনা বাজে নব বহুড়ির গান মাঝপথে ছিন্নলয়ে থামে।

মেঘের বেদনা চিরে ভূমিষ্ঠ রোদের মতো একটুকরো সোনা কে নেবে

রঞ্জার সমস্ত শিরা সেতারের তার হল কত কাল এই ভেবে ভেবে,

মাঘের দেউলে মাঠে কান্নার বেয়ালা বুকে আজ শুধু টানো দীর্ঘ ছড়

রঞ্জাবতী, রঞ্জাবতী; হৃদয়ে হৃদয়ে বুঝি ঝাপটায় সমুদ্রের ঝড়

কত না উন্মুখ গাছে কঠিন কুঠারে কাঁদে শিশিরের বিষণ্ণ টুপটাপ

মধু-র ভাঁড়ার লুঠ—চাকভাঙা মৌমাছির পাখা কাঁদে বিভোর বিলাপ,

কসাড়ের ঘনঝোপে শানানো থাবার নিচে গেরস্থের ধবল বাছুর

শেষ কাঁদা কেঁদে যায়—প্রথম রঙিন ফলে নিশাচর বিষাক্ত বাদুড়

হেনে যায়। রঞ্জাবতী, পুত্র-চাওয়া ফুল-চাওয়া ফল-চাওয়া একই

তারে বাঁধা

তোমারি চোখের জলে তোমারি বুকের রক্তে এদেশের যত বীণা সাধা

চোখ ভাসে লোনা জলে লোনা জলে আঁকুপাঁকু ডুবে যায় শিশু ধান চারা,

একা নদী সাতখানা, জোয়ান জেলের নাও সারারাত ক্লান্ত দিকহারা

অহল্যার রক্তধারে রঞ্জাবতীর কান্না মিশে যায়, হে সুন্দরবন

উদ্দাম শিশুর ঢেউ হাতে বাড়িয়ে নেবে বলে দাও সে কবে কখন ?

তুমিই তো রঞ্জাবতী, তুমিই অহল্যা মেয়ে, কতবার গ্রাম-জ্যোছনায়

চাঁদে-চাওয়া থৈথৈ রূপালি মাছের বিলে কত না স্বপ্নের মোহানায়

রঙিন সাধের ঘোরে চেয়েছ চাঁদের টিপ আঁচলেও চাঁদেরি পিপাসা

উঠোনে সোনার ঢেউ, উদলা বুকের ঢেউয়ে একখানি সোনামুখে ভাসা

দুহাতে শংখের মতো বেঁধেছি অঞ্জলি আজ তোমার রক্তের ধারা, আর

মেঘলা চোখের জল দুহাতে ধরেছি আজ, থরথর হৃদয় বিথার

তোমারি দুহাত হ'তে তুলে নিই, কবিয়াল চন্দনাকে পরাই সকলে

তোমার রক্তের রঙে ছোপানো উড়নি—বসন্ত-বাউল-দিনে দলে দলে

সে পাখী

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion