ফুল আর প্রজাপতি বাদে পৃথিবীতে যদি সুন্দর কিছু থাকে, তা হচ্ছে পাখি। তবে পাখির রাজ্যে কোনটি সবচেয়ে সুন্দর তা বলা কঠিন। কারণ, একেকটি পাখি একেক দিকে সুন্দর। এদেশের অনেক পাখির মেলায় সুন্দর পাখির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কিন্তু কোনটি সুন্দরতম? সৌন্দর্য বিবেচনায় এদেশের পাখিদের মধ্যে মৌটুসি-নীলটুনিরাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। কারণ, এদের সৌন্দর্য সবখানেই ছড়িয়ে আছে কি গায়ের রঙে, কি ওড়ার ঢঙে, কি গান গাওয়ায়। সৌন্দর্য এদের বাসা তৈরিতে, খাদ্য সংগ্রহে, জীবনযাত্রায়। আর মৌটুসিদের মধ্যে সুন্দরতম হলো নীলটুনি। 

নীলটুনিরা এদেশে প্রচুর সংখ্যায় আছে। শহর-বন্দর-গ্রাম-বন-জঙ্গল সবখানেই দেখা যায়। এরা দূর্গাটুনটুনি, বেগুনটুনি, মধুচুষকি নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Purple Sunbird ও বৈজ্ঞানিক নাম Cinnyris asiaticus

রমনা পার্কে নীলটুনি
এরা একরত্তি পাখি। ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত মাত্র ১০ সেমি লম্বা যার মধ্যে শুধু ঠোঁটটিই ৪ সেমি। সুন্দরতম এই পাখির রঙের কি বাহার! দূর থেকে পুরুষ পাখি বা নীলটোনাকে একদম কালো দেখায়। কিন্তু কাছে এলে বোঝা যায় এর গাঢ় নীল রঙ। রোদ লাগলে তা উজ্জ্বল ধাতব বেগুনি-নীল দেখায়। মাথা পিঠ ধাতব বেগুনি; বুক বেগুনি-কালো। বুক ও পেটের মাঝখানে পিঙ্গল ও লালচে রিং থাকে। কালো যে কী রকম সুন্দর হতে পারে তা নীলটোনাকে না দেখলে বোঝা যাবে না। তবে এই রূপ শুধু বাসা বাঁধা ও ডিম পাড়ার মৌসুমেই। ছানারা বাসা ছেড়ে উড়ে যাবার পর থেকে এই নীলচে বেগুনি ও কালো রঙ আস্তে আস্তে ফ্যাকাসে হতে থাকে। এক সময় প্রায় মিলিয়েই যায়। শুধু বুকে একটা কালো চওড়া টান ও ডানার উপরিভাগে কালচে রঙটা থাকে। কিশোর নীলটোনাও দেখতে একই রকম। নীলটোনা এত সুন্দর হলেও স্ত্রী বা টুনি ততটা সুন্দর নয়। টুনির পিঠ হলুদাভ বাদামি। নিচের অংশ হালকা-হলুদাভ। লেজ হয় ধূসর কালো।

নীলটোনা গানের পাখি। চমৎকার সুরে গান গায়। ভোরে সব পাখির আগে এরা মধুর কন্ঠে ঘুম ভাঙ্গানি গান গেয়ে ওঠে। টোনা মিষ্টি মধুর চি-হুইট চি-হুইট চি-হুইট স্বরে গান করলেও টুনি সাধারণত নীরব, স্বরও বেশ কর্কশ। কোনো কারণে উত্তেজিত হলে বা ডিম পাড়ার মৌসুমে টোনা বার বার ডানা ঝাঁপটায়। এরপর চি-হুইট চি-হুইট স্বরে ডাকে। 

হামিংবার্ডের মতো এরাও বাতাসে স্থির থেকে উড়তে পারে। প্রজাপতি, ভ্রমর ও মৌমাছিদের মতো ফুলে ফুলে নেচে নেচে মধু পান করে বেড়ায়। এরা বেশ চঞ্চল, বেশিক্ষণ এক জায়গায় থাকে না। বাতাসে ঢেউ খেলিয়ে আলোর ঝিলিকের মতো এগাছ থেকে ওগাছে, এ ফুল থেকে ও ফুলে উড়ে বেড়ায়। টোনা বেশ আমুদে। নিচের দিকে বাঁকানো লম্বা ঠোঁটটি ফুলের ভেতরে ঢুকিয়ে খাঁজকাটা ও রবারের ডগা’র মতো জিহ্বাটি দিয়ে মধু চুষে। মধুর অভাবে ছোট ছোট পোকামাকড়ও খেতে পারে। ফুলে বোঁটার ওপর বসে বাদুড়ের মতো ঝুলে পড়ে মধু চুষে।

[গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নীলটুনির বাচ্চা]

শীত ও বসন্তেই প্রধানত বাসা বানায় ও ডিম পাড়ে। সাধারণত গেরস্থ বাড়ির আঙিনায় বরই-ডালিম গাছের চিকন ঝুলে পড়া ডালে বা লাউ-সিম লতানো গাছের ডগায় বাসা বাঁধে। গেরস্থ বাড়ির আশপাশে ছাড়া এরা বাসা বাঁধতেই চায় না। মানুষের সান্নিধ্য এদের চাই-ই চাই। এই যে মানুষের এতো কাছে বাসা বাঁধে তবুও সচরাচর তা চোখে পড়ে না। হঠাৎ দেখলে বাসাটাকে ঝোপ-জঙ্গল ছাড়া অন্য কিছু মনে হবে না। শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতেই এ ধরনের ছদ্মবেশী বাসা বানায়। 

এদের বাসার গড়নে ও সাজসজ্জায় রুচি ও বিলাসের ছাপ দেখা যায়। সৌন্দর্য ও প্রকৌশলী গুণে বাবুইয়ের পরই এদের স্থান। বাসাটা দেখতে অনেকটা থলের মতো। মাকড়সার জাল দিয়ে এর ভিত রচনা করে। বাসার প্রবেশ পথ

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion