বঙ্গসাহিত্যের প্রথম বিজ্ঞানগ্রন্থ
ভারতীয় ভাষার দরবারে বাংলা আজ দুয়োবানী। সর্বশ্রেষ্ঠ ভারতীয় ভাষা হিসাবে বাংলাকে স্বীকার করা তো দূরের কথা, বিজ্ঞানের ভাষা হিসাবে বাংলার যে উৎকর্ষ স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে তা মেনে নিতেও অনেকের গায়ে বাধছে। অথচ দুরূহ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার যে ক্ষমতা রয়েছে বিগত একশত চল্লিশ বৎসর ধরে রচিত অসংখ্য বাংলা বিজ্ঞান-গ্ৰন্থই তার প্ৰমাণ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে অক্ষয়কুমার দত্ত, রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং বিংশ শতাব্দীতে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জগদানন্দ রায় প্রমুখ লেখকেরা প্রমাণ করে গেছেন দুরূহ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ক্ষমতা কতখানি। কিন্তু এঁরা হলেন বাংলা বিজ্ঞান-সাহিত্যের দিক্পাল। এদের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বাংলা বিজ্ঞান-সাহিত্যের দিকচক্রবালের দিকে তাকালে নজরে পড়ে এমন সব লেখক যারা ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছেন। অথচ এঁদের মধ্যেই রয়েছেন সেই সব লেখক যাঁরা বাংলা বিজ্ঞান-সাহিত্যের গোড়াপত্তন করেছিলেন। এমনি একজন লেখক হলেন ফেলিক্স্ কেরী। বাংলা-ভাষায় প্রথম বিজ্ঞান-গ্রন্থ রচনার কৃতিত্ব তাঁরই।
এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিজ্ঞান-গ্রন্থ রচনার সূত্রপাত হযেছিল প্রধানত তিনটি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হল শ্রীরামপুর মিশন, হিন্দু কলেজ ও কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি। বাংলা বিজ্ঞান-সাহিত্যে শ্রীরামপুর মিশনের উল্লেখযোগ্য অবদান ‘দিগদর্শন’ (এপ্রিল, ১৮১৮) পত্রিকা প্রকাশ। বঙ্গভাষায় মুদ্রিত এই প্রথম সাময়িকপত্রে বৈজ্ঞানিক প্রস্তাবাদি নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হত। এ ছাড়া শ্রীরামপুরের মিশনারীরা বিভিন্ন বিজ্ঞান-গ্রন্থে রচনা, প্রকাশন ও ছাপার কাজে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। তবে এদেশে পাশ্চাত্ত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা শুরু হবার পর থেকেই বাংলাভাষায় বিজ্ঞান আলোচনার সূত্রপাত হযেছিল। পাশ্চাত্ত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা সুপরিকল্পিতভাবে প্রথম আরম্ভ হয় হিন্দু কলেজে। ১৮১৭ খ্রীষ্টাব্দের ২০শে জানুযারী প্রধানত ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান শিক্ষাদানের পরিকল্পনা উদ্যোক্তাদের মনে গোড়া থেকেই ছিল। হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হবার অল্পকালের মধ্যেই কলিকাতা ও তার আশেপাশে বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো ইংরেজী স্কুল স্থাপিত হয়। বিভিন্ন স্কুলে উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক সরববাহ করবার জন্যে প্রতিষ্ঠিত হল কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি (১৮১৭ খ্রীঃ ৮ই জুলাই) এই সোসাইটির উদ্যোগে জ্ঞান-বিজ্ঞান-বিষয়ক বাংলা বই নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতে লাগল। এইভাবে মূলত এই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাংলা বিজ্ঞান-সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপিত হল। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান-গ্রন্থ প্রকাশে সর্বপ্রথম উদ্যোগী হলেন কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি। বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম বিজ্ঞান-গ্রন্থ ‘বিদ্যাহারাবলী’ কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটির উদ্যোগে ১৮২০ খ্রীষ্টাব্দে (১২২৭ সাল) প্রথম প্রকাশিত হয়।
‘বিদ্যাহারাবলী’র লেখক উইলিয়ম কেরীর পুত্র ফেলিক্স্ কেরী। ১৭৮৬ খ্রীষ্টাব্দে ইংল্যাণ্ডে ফেলিক্স্ কেরীর জন্ম হয়। মাত্র সাত বৎসর বয়সে তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে কলিকাতায় আসেন। এদেশে আসবার কিছুকাল পর থেকে ফেলিক্স্ কেরী বাংলা শিখতে লাগলেন রামরাম বসুর কাছে। ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীরামপুরের ছাপাখানায় তিনি ওয়ার্ডের সহকারী হিসাবে কাজে যোগদান করেন। ঐ বৎসরেই উইলিয়ম কেরী তাঁকে খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত করেন। কিন্তু ধর্মপ্রচারে কোনোদিনই ফেলিক্স্-এর মন বসেনি। ১৮০৭ খ্রীষ্টাব্দে ধর্মপ্রচার উপলক্ষ করে তিনি রেঙ্গুন যাত্রা করেন। বর্মা গিয়ে ফেলিক্স্ কেরী প্রধানত ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় আত্মনিয়োগ করলেন। কিছুকাল পর বর্মার রাজা কর্তৃক রাজদূত নিযুক্ত হন। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বর্মার রাজার সঙ্গে তাঁর বিরোধ উপস্থিত হয়। এজন্যে ফেলিক্স্-এর খামখেয়ালীপনা এবং অমিতব্যয়িতাই দায়ী। বর্মা ত্যাগ করবার পর তিনি কিছুকাল ধরে ভারতবর্ষের পূর্ব অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে যাযাবরের ন্যায় জীবনযাপন করেন। পরে ওয়ার্ডের চেষ্টায় তিনি শ্রীরামপুরে ফিরে এলেন। এবার তিনি পুরোপুরিভাবে সাহিত্য-চর্চায় আত্মনিয়োগ করলেন। অবশেষে ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীরামপুরে তাঁর মৃত্যু হয়! ফেলিক্স্-এর মৃত্যুর পর ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দের ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘ফ্রেণ্ড অব ইণ্ডিয়া’য় মন্তব্য করা হয়েছিল, “The death of this individual will be considered as
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment