হারাণের মৃত্যু
খবরটা শুনিয়াই বাহির হইয়া পড়িলাম। হারাণকে বরাবর দেখিয়াছি শান্ত-প্রকৃতি, মৃদু স্বভাব, এমন ভীষণ কাজ সে করিয়া বসিল কেন? গুরুভার প্রশ্ন, প্রশ্নের চাপেই সমস্ত মন যেন অবশ্য হইয়া পড়িয়াছে, উত্তর খুঁজিবার চেষ্টা করার সামর্থ্য নাই, উত্তর পাইবার প্রত্যশাও নাই, পা দুইটাকে পর্যন্ত যেন টানিয়া চলিতে হইতেছে।
আমার চৈতন্য ফিরিল বৃদ্ধ ভচার্যকে দেখিয়া। তিনি হন্ হন্ করিয়া ছুটিয়া চলিয়াছেন আমাকে দেখিয়া বলিলেন- ‘নারকী, মহাপাতক, ঘোর পাপিষ্ঠ।’
বলিয়া প্রসারিত-বাহু নরকের গ্রাস এড়াইতেই যেন তিনি আবার ছুটিয়া চলিলেন। এই বৃদ্ধের সম্বন্ধে মনটা আমার তিক্ত বিরক্ত হইয়া উঠিল। ধর্ম যেন শুধু মানুষকে অমানুষ করিবার জন্যই।
ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়া দেখিলাম আশেপাশের পাঁচটা গ্রামের লোক ইতিমধ্যেই আসিয়া জড় হইয়াছে। আমাকে ঘিরিয়া ছোটখাট একটা দল গড়িয়া উঠিল। রসিদ বলিল, "এমন কাণ্ড শুনেছ কখন। বেটা গয়লার আক্কেল বটে।" কাণ্ড অনেক শুনিয়াছি মায় সপ্ত কাণ্ড রামায়ণ, কিন্তু হারাণের কাণ্ডটা সম্বন্ধে আমার বিন্দুমাত্রও ধারণা ছিল না। অতএব রসিদের ফাঁকা রসিকতার মর্মোপলদ্ধি করিতে পারিলাম না। কিন্তু আর আর সকলেই যে পারিল তাহা তাহাদের হাসি দেখিয়াই বুঝা গেল।
কি এমন অপকর্ম করিল হারাণ, মরিয়াও এক তিল দরদ সে পাইতেছে না?
হারাণকে যে অবস্থায় দেখিলাম তাহার বর্ণনা না করিলেই ভাল হইত, কিন্তু একেবারে বাদ দিলে গল্প অচল হইয়া পড়ে। পাহাড়ে জিয়ল গাছটার মস্ত একটা ডাল হইতে গরু বাঁধা দড়ির ফাঁসিতে হারাণ ঝুলিতেছে। গাছটা মাইয়া সামনে ডানদিকে ঝুলিয়ে পড়িতেছে। জিভটা বাহির হইয়া আছে। দাঁত কপাটি লাগিয়া জিভের মাঝখানটায় দুটি পাটি দাঁত বসিয়া গিয়াছে। ঠোঁটের দুই কোণ বাহিয়া রক্ত আর লালা ঝরিয়া জমিয়া গিয়াছে, চোখের দুই কোণেও। সবচেয়ে ভয়াল তাহার চোখ-তারকা উর্দ্ধমুখী, নেত্রগোলক কোটর হইতে যেন ফাটিয়া বাহির হইতেছে-চোখের দিকে দ্বিতীয়বার তাকাইবার সাহস আমার হয় নাই।
দেড় মাইল দূরে থানা। চৌকিদার খবর লইয়া গিয়াছে। দারোগা আসিয়া তদন্ত না করা পর্যন্ত হারাণকে ঝুলিতে হইবে। দারোগা কখন আসিয়া পৌঁছিবেন ঠিক নাই-নৌকায় আসিলে বেলা হইবে, সাইকেলে আসিলে হয়ত শীঘ্রই আসিয়া পৌঁছিবেন। ততক্ষণ 'কৈলামফুলা'র ক্ষেতে ক্ষেতে, ক্ষেতের আইলে পথের ধারে, হারাণদের বাড়ির দাওয়ায় মানুষের জটলা। ঝুলন্ত হারাণকে ফেলিয়া যাওয়া চলে না। ভট্টচার্যের মত হারাণকে ইহারা অভিশাপ দিয়াই ক্ষান্ত নয়। ব্যর্থ আক্রোশে ইহারা গুমরাইয়া মরিতেছে। হারাণ যেন বড় সহজে নিষ্কৃতি পাইয়া গেল সে যেন ইহাদের ফাঁকি দিল। তাহার মটকাইয়া যাওয়া ঘাড়টা আরও বেশী করিয়া মটকাক, তাহার গায়ের জমিয়া যাওয়া চাপ চাপ রক্ত জোঁক হইয়া হারাণকে শোষণ করিতে থাকুক আর হারাণ তাহা অনুভব করুক, তবেই যেন তাহার আহাম্মুকির যথেষ্ট প্রায়শ্চিত্ত হয়।
হারাণের বউটা কোন ফাঁকে ঘর হইতে বাহির হইয়া বাড়ীর পিছনের মাটির টিলাটায় উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিল। জিয়লের ডালে ঝুলন্ত স্বামীকে দেখিয়া সেখানেই সে আছড়াইয়া পড়িয়া ডুকরাইয়া উঠিল, ছাত্তার, রসিদ ও আরও কয়েকজন প্রায় সমস্বরে ভ্যাংচাইয়া উঠিল, “দেখ মাগীর ঢং দেখ।" হারাণের আত্মীয় কয়েকজন বউটাকে ধরিয়া তৎক্ষণাৎ ঘরে পুরিয়া দিল।
ইতিমধ্যে হারাণের আত্মহত্যার কারণ, আমার জানা হইয়া গিয়াছে। আমাকে ঘিরিয়া যে দলটি গড়িয়া উঠিয়াছিল তাহারা যেন টের পাইল যে আমি অজ্ঞান তিমিরে, বলিবার জন্য সকলেই ব্যগ্র হইয়া উঠিল। সকলকে থামাইয়া ছাত্তার সকল কথা আনুপূর্বিক বর্ণনা করিয়া গেল। তাহার সে কাহিনী হারাণের ফাঁসির দড়ি পর্যন্ত আসিয়াই থামিল না, বিন্দির (হারাণের স্ত্রী) গোটা ভবিষ্যৎটাই কথার পর কথার গাঁথা হইয়া সকলের লোলুপ দৃষ্টির সামনে স্পষ্ট হইয়া ফুটিয়া উঠিল। ছেলেটির বলিবার ক্ষমতা আছে।
আমি উঠিয়া পড়িলাম। হারাণ গলায় দড়ি দিয়াছে স্বচক্ষে দেখিয়াছি, কেন দিয়াছে তাহাও শুনিয়াছি, আর থাকিয়া কি হইবে? কিন্তু হারাণের কাকা আসিয়া হাউ-মাউ করিয়া আমাকে প্রায় জড়াইয়া ধরিল। দারোগা আসিয়া আবার কি
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment