তুর্গিয়েনেফ : জীবন-সাহিত্য ১৮১৮—১৮৮৩
“আমার জীবনই আমার সাহিত্য।”—তুর্গিয়েনে
যে সমস্ত প্রতিভাধর সাহিত্যিকের রচনাসম্ভারে রুশ জাতীয় সংস্কৃতির গৌরব বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন তুর্গিয়েনেফ। লেনিন এঁকে “স্বনামধন্য রুশ লেখক” বলে অভিহিত করেছেন।
সামন্ত-ভূমিদাস প্রথা থেকে বুর্জোয়া-ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে এক বিরাট পটপরিবর্তন হল, সেই এক সমগ্র ঐতিহাসিক যুগের রুশ জনজীবনের সার্থক প্রতিফলন দেখা যায় তুর্গিয়েনেফ-এর রচনায়। এই বিরাট শিল্পী-রিয়ালিস্ট রুশ সমাজ-আন্দোলনের যে সব উজ্জ্বল চিত্র এঁকেছেন তাদের সঞ্চারকাল ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ‘ছাত্র-চক্র’ থেকে শুরু করে ১৮৭৪-১৮৭৬ খৃষ্টাব্দের ‘জনগণের কাছে যাও’ আন্দোলনের সময় পর্যন্ত ৷
গভীর স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেন তুর্গিয়েনেফ, এবং তারই উদ্দেশে পরিপূর্ণরূপে নিয়োজিত করেছিলেন আপন শিল্পক্ষমতাকে। তিনি বলতেন, “স্বদেশ ছাড়া সুখ নেই, স্বদেশের মাটিতে সকলে শিকড় চালিয়ে দাও।” ভূমিদাস প্রথার প্রতি তাঁর তীব্র বৈরীভাব, জনগণের আবশ্যকীয় যা কিছুর প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি তাঁর সাহিত্য-সাধনাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। রাশিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জোয়ারের সঙ্গে তুর্গিয়েনেফ-প্রতিভার বিকাশ নিবিড় সম্বন্ধযুক্ত। তৎকালীন গণতন্ত্রী নেতা ও সাহিত্যকার বিলিন্স্কি, গিয়ের্তসেন, হার্ৎসেন এবং তাঁদের রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক মুখপত্র ‘সাভরিমিয়েন্নিক’-এর (‘সমসাময়িক’) সাথে যুক্ত থাকাকালীন বছরগুলোতেই—তাঁর সর্বোৎকৃষ্ট রচনার সৃষ্টি।
নতুন যা কিছু সম্পর্কে গভীর চেতনা, সমসাময়িককালের জীবনে জীবন যোগ, এ সবই লেখক তুর্গিয়েনেফ-এর বৈশিষ্ট্য। এ সম্পর্কে দাব্রাল্যুবোফ-এর মন্তব্য স্মরণীয় “সমাজচেতনায় অনুপ্রবিষ্ট নতুন নতুন চাহিদা, নতুন নতুন ধ্যানধারণাকে তিনি দ্রুত অনুধাবণ করতে পারতেন এবং তাঁর রচনার মাধ্যমে সাধারণতঃ পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতেন (অবশ্য তৎকালীন পরিস্থিতি যতটা তাঁকে অনুমোদন করত) সেই সমস্ত প্রশ্নের প্রতি যেগুলো অনতিবিলম্বে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, এবং যেগুলো ইতিমধ্যেই সমাজকে অল্পস্বল্প উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।”
তুর্গিয়েনেফ-এর রচনা স্বদেশপ্রীতির জারকরসে সিঞ্চিত, উচ্চ নৈতিক আদর্শ ও জ্ঞানালোকিত ধ্যান-ধারণা মণ্ডিত। সাল্তীকোফ্-শ্শেদবিণ লিখেছেন—“নেক্রাসফ, বিলিন্স্কি এবং দাব্রালুবোফ্-এর সাহিত্যকর্মের সমানুপাতে তুর্গিয়েনেফ-এর সাহিত্যকর্মও আমাদের জনসমাজের পক্ষে একটা নেতৃত্বমূলক তাৎপর্য বহন করে।”
জীবনের একটা প্রগতিশীল ও পজিটিভ বুনিয়াদের অনুসন্ধান করতে এবং তারই আলেখ্য পাঠকের সামনে তুলে ধরতে তুর্গিয়েনেফ সদা উদ্গ্রীব থাকতেন, তাঁর সৃষ্ট পজিটিভ চরিত্রগুলির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সমাজের প্রগতিকামী শক্তিগুলিকে সরাসরি প্রভাবিত ও সমৃদ্ধ করে তুলত।
পুশকিন্ ও গোগোলের মহান ঐতিহ্যানুসারী, রুশ বাস্তববাদী উপন্যাস রচনাকারদের অন্যতম, অসাধারণ কথাশিল্পী তুর্গিয়েনেফ, রুশ তথা বিশ্বসাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেছেন।
তুর্গিয়েনেফ-এর দেশ ও কাল
১৮১২ খৃষ্টাব্দে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে “পিতৃভূমির মহাযুদ্ধে”র পর রুশ জনসাধারণের মনে ভূমিদাসপ্রথার কলঙ্কমুক্তির স্পৃহা দুর্বার হয়ে উঠল, কিন্তু জার ও জমিদারশ্রেণীর একথা হৃদয়ঙ্গম হল না। তারা ভূমিদাস প্রথাকে পূর্বের মত জিইয়ে রাখল। যে মানুষগুলো কয়েকদিন আগে স্বদেশের জন্যে বুকের রক্ত ঢেলেছে তাদের গরু-ভেড়া-ছাগলের মত বেচা-কেনা, নৃশংস অত্যাচারে জর্জরিত করা বা সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো পূর্বের মতই চলতে লাগল ৷ সারা দেশজুড়ে অসন্তোষের বহ্নি ধূমায়িত হয়ে উঠল। যুদ্ধোত্তরকালে জমিদারের বিরুদ্ধে কৃষকের সংগ্রাম আরও ক্ষুরধার হয়ে ওঠে। এর আগে অবশ্য রাশিয়ার মাটিতে তিন-তিনটে বেশ বড়-সড় কৃষক বিদ্ৰোহ হয়ে গেছে। আর প্রতিবারেই জারের সৈন্যসামন্ত দুর্বল অসংগঠিত পরিকল্পনাহীন এইসব কৃষক বিদ্রোহকে নিষ্ঠুরভাবে দলিত মথিত করে দমন করেছে।
এবারে কৃষকদের স্বার্থরক্ষার লড়াইয়ে অংশীদার হলেন অভিজাত যুব সমাজের উদারহৃদয় প্রগতিকামী এক অংশ। ভূমিদাসত্ব ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংকল্পে তাঁরা জীবন পণ করলেন। ১৮২৫ খৃষ্টাব্দের ডিসেম্বরে (দিকাবর) অভিজাত বিদ্রোহীদের গোপন সংস্থার উদ্যোগে জারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করলেন ‘দিকাব্রিস্ত’রা। ‘দিকাব্রিস্ত’রা পরাজিত হলেন। পাঁচজন ‘দিকাব্রিস্ত’-এর ফাঁসি হল। অন্যান্যদের কাউকে পাঠানো হল সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে, কাউকে ককেশাসের যুদ্ধে সৈন্য হিসেবে। ‘দিকাব্রিস্ত’রা কিন্তু ছিলেন সম্ভ্রান্তবংশীয়, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে। জনগণের শক্তির উপর আস্থা না রেখে তাঁরা চেয়েছিলেন জনগণের জন্যে অথচ জনগণকে বাদ দিযেই—সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাসনকর্তৃত্বের পরিবর্তন ৷
এরপরে শতাব্দীর চতুর্থ দশকে কৃষকের স্বার্থরক্ষায় এগিয়ে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment