লেনিনের কাছে ভারতীয় বিপ্লবীদের চিঠি
মস্কো শহরের মাঝখানে ক্রেমলিনের কাছাকাছি তিনতলা একটা বাড়ি। বাড়িটা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন কেন্দ্রীয় স্মৃতি-সৌধ ৷ এখানে দেখতে পাওয়া যাবে মহান নেতা লেনিনের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, তাঁর নিজের লেখা বইয়ের প্রথম সংস্করণ, যে-সব বই তিনি পড়তেন, কাজে লাগাতেন সেই বই গুলি। আর তারই সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র—ফটো, ছবি, মূর্তি, দলিলপত্র। এর প্রত্যেকটি জিনিস দেখলেই মনে হবে কি এক অদ্ভুত অপূর্ব মানুষই না ছিলেন দুনিয়ার প্রথম সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা লেনিন ৷
হাজার হাজার জিনিসের প্রদর্শনী। প্রত্যেকটি জিনিসের পেছনেই রয়েছে তার নিজস্ব কাহিনী। ঐতিহাসিক দলিলপত্রের ভিতরে রয়েছে ভারতবাসীদের পাঠানো একখানা অভিনন্দপত্র। আবছা হয়ে এসেছে লেখা। কালি মুছে আসা বিবর্ণ সেই কাগজখানার দিকে তাকালেই পর্দার বুকে ছবির মতো অতীতের ঘটনাবলী একটির পর একটি ফুটে উঠবে চোখের সামনে ৷
উনিশশো সতেরো সালের নভেম্বর মাস। ৬ই নভেম্বরের রাত। লেনিনের নেতৃত্বে মজুর, কৃষক ও সৈনিকেরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করল। সঙ্গে সঙ্গে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল এ সংবাদ। এমনকি সুদূর ভারতবর্ষে ও এসে পৌঁছল সে-খবর। ভারতের কৃষকরা যখন শুনল জমি সম্পর্কে লেনিন একটা আইন জারী করেছেন আর এখন থেকে রুশিয়ার জমির মালিক তারাই যারা জমি চাষ করে, তারা জানতে চাইল: কে লেনিন? কে সেই মানুষটি যিনি মানুষের জীবনে নিয়ে এলেন সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি?
তারপর গর্কি যেমন লিখেছিলেন:
ভারতের সুদূর গ্রামাঞ্চল থেকে দীর্ঘ দিন ধরে ইংরেজ শাসকদের অত্যাচারে জর্জরিত ভারতবাসীরা গোপনে শত শত কিলোমিটার বন ও পাহাড়ী পথ ভেঙে জীবন বিপন্ন করেও রুশিয়ায় যাবার উদ্দেশ্যে কাবুলে পৌঁছতে চেষ্টা করল। আর যখন এসে পৌঁছল, সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞেস করল: কে এই লেনিন?
সোভিয়েত রিপাবলিক ও লেনিন সম্পর্কে যখন তারা সঠিক খবর জানতে পারল, তাদের ভিতর থেকে বিশেষ করে কয়েকজন সাহসী লোক চেষ্টা করল রুশিয়ায় গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লেনিনকে তাদের সাদর অভিনন্দন জানাবে। প্রাভদা পত্রিকার উনিশশো আঠারো সালের এক সংস্করণে এই মর্মে একটি ছোট্ট খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, বিশেষ করে একজন বিশ্বস্ত লোক বহু বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে মস্কো এসে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক মাস লেগেছে তাঁর এখানে এসে পৌঁছতে! আর এই বাণী তিনি বহন করে এনেছেন লেনিনের কাছে:
“গণতন্ত্রের অনুকূলে যে মহান বিজয় লাভ আপনি করেছেন তার জন্যে ভারত আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। ক্ষমতা গ্রহণ করার পরে আপনি যে মহান মানবিকতার নীতি ঘোষণা করেছেন ভারত গভীরভাবে তার প্রতি শ্রদ্ধাবান ৷
ঈশ্বরের কাছে ভারত এই প্রার্থনা করে যে তিনি যেন আপনাকে আপনার ঐ মহান আদর্শে অবিচলিত থাকার শক্তি দেন...”
উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের মুক্তি-সংগ্রামের ভূমিকায় লেনিন বিরাট গুরুত্ব আরোপ করতেন। ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির ঔপনিবেশিক নীতির প্রতি, আর যে-সব সাম্রাজ্যবাদীরা প্রাচ্যের দেশগুলোর জনগণকে শোষণ করে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছে তাদের প্রতি লেনিন তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করতেন। এই সব প্রাচ্য দেশগুলি, বিশেষ করে চীন ও ভারতের মতো মহান জাতিগুলি সম্পর্কে তিনি গভীর দরদ ও সহানুভূতির সঙ্গেই বলতেন ; ঔপনিবেশিক দেশগুলির মুক্তি-আন্দোলনের বিকাশের পথ সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন লেনিন। তিনি মনে করতেন যে ১৯০৫ সালের রুশ বিপ্লব এবং তুর্কী ও পারশ্যের বৈপ্লবিক ঘটনাবলী, যা নাকি রুশ বিপ্লবের দ্বারাই অনুপ্রাণিত, এশিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ভারতের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামকে তীব্রতর করার দিক থেকে এক নতুন প্রেরণা যোগায়।
উনিশশো উনিশ সালে রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট-এর ভারতীয় প্রতিনিধি দল এসে পৌঁছলেন রুশিয়ায়। সোভিয়েত জনগণ তখন আক্রমণকারী চৌদ্দটি দেশের সাময়িক অভিযানের বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত। প্রতিনিধিদল তাদের অভিনন্দন জানালেন। তারপর ইচ্ছে প্রকাশ করলেন যুদ্ধের ফ্রন্ট ও হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন আর আলাপ করবেন আহতদের সঙ্গে। ভলগার তীরের শহর সামারা (বর্তমান কুইবিশেভ)
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment