সমাজতন্ত্রবাদের প্রতিষ্ঠাতা মার্কস ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ভারতীয় সমস্যা সম্পর্কে আধুনিক চিন্তাধারার গোড়াপত্তন করে গেছেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ফলাফল, তার সংহারমূর্তি, “অজ্ঞাতসারে ইতিহাসের যন্ত্ররূপে তার বিপ্লবী ভূমিকা, ভারতকে “পুনরুৎপাদক দেশে” রূপান্তরিত করবার আয়োজন, আধুনিক শিল্পের প্রকৃত অগ্রদূত হিসাবে রেলপথের ভূমিকা, ভূমি-ব্যবস্থার স্বরূপ প্রভৃতি সম্পর্কে নূতন আলোকসম্পাত এবং একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রবর্তন মার্কসই করেছেন। পরিণত বয়সে রচিত (এবং তাঁর মৃত্যুর পরে এঙ্গেলস কর্তৃক সম্পাদিত) ক্যাপিটালের তৃতীয় খণ্ডে ভারতের অর্থনীতি প্রসঙ্গে মার্কস যে মূলসূত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তার যথার্থতা এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আধুনিক ঐতিহাসিক গবেষণার ফলাফলে স্বীকৃত। দীর্ঘকাল ভারত প্রসঙ্গে মার্কস এবং এঙ্গেলসের রচনাবলী অপ্রকাশিত এবং অবজ্ঞাত ছিল। বিগত পঁচিশ বৎসরের মধ্যে অনুসন্ধিৎসুরা (বিংশ শতাব্দীতে বাস করেও যাঁরা মার্কস-কে অচ্ছুৎ এবং অপাঙক্তেয় মনে করেন তাঁরা ছাড়া) ক্রমশ এই রচনাবলীর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। মার্কস ও এঙ্গেলসের ভারত সম্পর্কিত রচনাবলী প্রকাশের প্রধান কৃতিত্ব মস্কোর “ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস পাবলিশিং হাউস”-এর প্রাপ্য। আলোচ্য পুস্তিকাটি এঁরাই প্রকাশ করেছেন।

The First Indian War of Independence 1857-1859
by K. Marx and F. Engels
Foreign Languages Publishing House, Moscow
প্রাপ্তিস্থান: ন্যাশনাল বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা

১৮৪৮ সনের বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থতার পরে মার্কস ও এঙ্গেলস তৎকালীন নির্বাসিত বিপ্লবীদের চক্র থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রেখে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং কালিফোর্নিয়ায় ইউরোপীয় পুঁজিবাদের নূতন প্রসারের তাৎপর্য অনুধাবনের গবেষণায় নিবিষ্ট হন। মাত্র পাঁচ বৎসরের মধ্যে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সনদের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশ্ন উত্থাপিত হবার সময় নিউ ইয়র্কের “ডেইলী ট্রিবিউন” পত্রিকায় মার্কস ধারাবাহিক ভাবে ভারত সম্পর্কে তাঁর সুবিখ্যাত প্রবন্ধাবলী রচনা করতে থাকেন। চার বৎসর পরে ভারতীয়, মহাবিদ্রোহ শুরু হলে, প্রধানতঃ সমসাময়িক সংবাদপত্র থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে মার্কস বিদ্রোহের গতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে প্রবন্ধ লেখেন। এঙ্গেলসের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে। সামরিক বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ এঙ্গেলস সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে “ভারতে ব্রিটিশ ফৌজ”, “লক্ষ্ণৌর পতন” প্রভৃতি প্রবন্ধ লেখেন। ঐতিহাসিক ঘটনার স্বরূপ উদ্‌ঘাটনে মার্কস-প্রতিভার শ্রেষ্ঠ স্বাক্ষর সম্ভবত “The class struggles in France, 1848-50” (১৮৫০ সনে প্রকাশিত) এবং “The Eighteenth Brumaire of Louis Bonaparte” (১৮৫১-৫২ সনে প্রকাশিত)। তবু একথা নিঃসংশয়ে বলা চলে যে, ভারতীয়, মহাবিদ্রোহ সম্পর্কে মার্কস ও এঙ্গেলসের প্রবন্ধমালা তাঁদের শ্রেষ্ঠ রচনাবলীর অন্যতম। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে মার্কস ও এঙ্গেলস মহাবিদ্রোহের আলোচনা করেছেন। বিদ্রোহের বহু ও বিচিত্র ঘটনা সম্পর্কে তাঁদের দখল এবং বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁদের অন্তর্দৃষ্টি শতবর্ষ পরেও অনুসন্ধিৎসুদের অনুপ্রাণিত করবে।

মহাবিদ্রোহ সুরু হবার কিছু পরে, ১৮৫৭ সনের ৩০শে জুন, মার্কস বিদ্রোহ সম্পর্কে লিখেছিলেন:

“There had been mutinies in the Indian army, but the present revolt is distinguished by characteristic and fatal features. It is the first time that Sepoy regiments have murdered their European officers; that Mussalmans and Hindus, renouncing their mutual antipathies, have combined. against their common masters; that disturbances beginning with the Hindus, have actually ended in placing on the throne of Delhi a Mohammedan Emperor; that the mutiny has not been confined to a few localities.” (পৃ: 80 80) ।

৩১শে জুলাই তিনি লিখলেন:

“By and by there will ooze out other facts able to convince even John Bull himself that what he considers a military is in truth a national revolt.” (পৃঃ ৫৬)

ভারতীয় মহাবিদ্রোহের দ্রুত প্রসারে লণ্ডনে ভীতি, স্টক এক্সচেঞ্জ-এর গতি, ব্রিটিশ পত্রিকায় বিদ্রোহ দমনে ছোটখাট সাফল্যের অতিরঞ্জন, ব্রিটিশ সৈনিকদের বর্বরতা এবং লুটতরাজ, বিদ্রোহ দমনের জন্য ইংলণ্ড থেকে প্রেরিত ব্রিটিশ অফিসার এবং সৈনিকের সংখ্যাবৃদ্ধি, বিদ্রোহের শেষ দৃশ্যে বিদ্রোহীদের মধ্যে বিভেদ

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion