হালুম
আশরাফ মুন্সির এক চোখ কানা। কালো, বলিষ্ঠ জোয়ান দেহ। সমস্ত মুখে গুটিবসন্তের ছোট ছোট গর্ত। বুদ্ধির দীপ্তিতে ভালো চোখটা সব সময়েই জ্বলছে। আশরাফ মুন্সিকে ভয় করে না চৌধুরী বাড়িতে এমন কেউ নেই। বাড়ির বউঝিরা আড়ালে-আবডালে আশরাফ মুন্সিকে ডাকে 'হালুম' বলে। অর্থাৎ শুধু বাঘ নয়; এ একেবারে বাঘের নির্দয় আক্রমণ।
কাছারিঘর থেকে আশরাফ মুন্সির গলা খাঁকর শোনা গেল। অমনি বিশ্রামরতা মুন্সির তিন ছেলের তিন বউ অদ্ভুত তৎপরতার সঙ্গে কঠিন কর্মব্যস্ততায় ছিটকে পড়ল উঠানময়। তকতকে উঠান ছোট বউয়ের ঝাঁটার নিতান্ত অনাবশ্যক স্পর্শে দ্বিতীয়বার মুখরিত হয়ে ওঠে। কোলের শিশুকে দড়াম করে মাটিতে শুইয়ে স্থূলকায়া মেজ বউ শীর্ণমুখী পিপের মধ্যে অর্ধেক শরীর গুলিয়ে দিল মরিচ বার করতে। সুন্দরী বড় বউ শুধু নিষ্কম্প পায়ে উঠে এল শোলার বেড়া অবধি; ফাঁক দিয়ে হরিণচোখে একবার দূরত্বটুকুন আন্দাজ করল। তারপর মুখের কম্পিত ঘর্মবিন্দু মুছতে মুছতে শুকোতে দেওয়া কাউন ধানগুলো আরও ভালো করে বিছিয়ে দিতে শুরু করে দেয়। এমনকি ওদের শাশুড়ি জাহেদা বিবি পর্যন্ত উত্তেজনায় উনুনের মধ্যে একসাথেই পুরে দিল একগাদা লাকড়ি।
উঠানে আশরাফ মুন্সি প্রবেশ করল। পেছন পেছন এল পশ্চিম বাড়ির মকিম কাকা। মুন্সি এক চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সব নিরীক্ষণ করল কিছুক্ষণ। তীব্র সন্ধানী আলোর মতো সে চোখ যেন সমস্ত উঠান তন্ন তন্ন করে দেখল; কোথাও কোনো খুঁত আছে কি না। কোথাও কেউ আকামা বসে আছে কি না। আশরাফ মুন্সি পারে না, এমন কিছু নেই। কিন্তু ওই কুঁড়েমি বরদাশত করা তার পক্ষে অসম্ভব। এই বাড়ির ভাত গিলতে হলে কাজ করতে হবে। শুধু কাজ আর কাজ। মুন্সি তাহলেই খুশি। কিন্তু কাজের এত নিখুঁত প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও আশরাফ মুন্সি খুশি হলো কি না, বোঝা গেল না। কোনো দিনই সেটা বোঝা যায় না। আশরাফ মুন্সির সে তীব্র চোখ যেমন একক, তেমনি অভিব্যক্তিহীন, পরিবর্তনহীন। মকিম কাকাকে ঘরের দাওয়ায় বসতে বলে মুন্সি গরু নিয়ে গোয়ালে ঢোকে। সেখানে থেকেই বড় বউকে উদ্দেশ করে হাঁক দেয়, 'জৈল্যা কই রে?' জৈল্যা মুন্সির বড় ছেলে, বড় বউয়ের স্বামী। বড় বউ একটু এগিয়ে এসে, মাথার কাপড় ভালো করে টেনে, অত্যন্ত আদবের সঙ্গে একটা মিথ্যা কথা বলে ফেলল, ‘হ্যাতেনত ধান নিরাইতো হাঁতেরো গেছে আব্বাজান!’
ধান নিড়ানো দূরে থাক জলিল মানে জৈল্যা তখন খেতের আশপাশে কোথাও নেই। বউয়ের হাতে বাড়া ভাত খেয়ে সে তখন গোলার ঘরে ঘুমাচ্ছে। বড় বউয়ের এই স্বার্থপর, নির্লজ্জ মিথ্যা ভাষণে ঈর্ষান্বিত হয়ে ছোট ও মেজ উভয়েই আঁচলের আড়ালে ভেংচি কেটে উঠল।
মুন্সি আবার গর্জে উঠল, 'হেতিরে ক না ভাত লই আইত।' হেতি মানে সে অর্থাৎ আশরাফ মুন্সির স্ত্রী, ওরফে জাহেদা বিবি তখন মাটির বাসনে ভাত আর কলাপাতায় মোড়া ছোট মাছ সাজিয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে আসছে।
খেতে খেতে আশরাফ মুন্সি মকিম কাকাকে আগামী মোকদ্দমার সুর ও মারপ্যাঁচ সম্বন্ধে শিখিয়ে-পড়িয়ে নিচ্ছিল। মোকদ্দমা করা মুন্সির এক অদ্ভুত নেশা। আশপাশের দু-চার গ্রামে এ ব্যাপারে মুন্সির বেশ নামডাক আছে। দলিল ওলটপালট করা থেকে মিথ্যা সাক্ষী মর্মস্পর্শী করে দাঁড় করাতে মুন্সির জুড়ি এ তল্লাটে আর নেই। হাতের লোকমা মুখে তুলে মুন্সি মকিমকে সাক্ষীর শেষ মহড়া শুনবার জন্যে পরীক্ষকের সুরে প্রশ্ন করে, 'এইবার কাছেন কী করি?' গড়গড় করে মকিম তার মুখস্থ সাক্ষ্য একনিশ্বাসে আওড়ে যায়। কিন্তু শেষ না হতেই মুন্সি প্রচণ্ড গর্জনে ধমকে ওঠে, 'কী কইলি?' আমতা-আমতা করে ঢোঁক গিলে মকিম আবার বলে, 'অ্যা কইয়্যুম আই টাকা লইন্য।' মুন্সি ফেটে পড়ল। 'আরামজাদ "টাকা" না, "ট্যায়া", "ট্যায়া", "ট্যায়া"। তুই মুজুর-মান্দারের জাত। তোর মুখে টাকা হুইনলে হাকিম বুঝি ফালাইব
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment