স্পর্শদোষ
দরিদ্র হওয়াটাই কষ্টকর নয়। দারিদ্র্যের কুয়াশার ফাঁক দিয়া প্রাচুর্যের প্রতি ব্যর্থ চাহনিটাই জ্বালাময়। যে মানুষ সারাদিন উপার্জনের সম্বল দুই এক বোঝা তাচ্ছিল্য ও অনাদরের সহিত দুই এক পয়সা লইয়া শহরের খোলা রাস্তা দিয়া নির্বিকারচিত্তে পথ চলিতে পারে, তাহা দেখিয়া আমাদের দৃষ্টি বেশি ভারাক্রান্ত হয় না, মনও বেশি পীড়াবোধ করে না-মনে হয় শহরেরই সে একটি অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু যে ব্যক্তি কৃচ্ছতার ছিটানো কালির তিলক পরিয়া ও বুকজোড়া বুভুক্ষা নিয়া কাচের দরজার ফাঁকে রেস্টুরেন্টের সুখাদ্যের দিকে অসহায়ভাবে তাকাইয়া কিছুকাল কাটাইয়া দেয়-তাহাকে দেখিয়া বুকের ভিতরটা খচ্ করিয়া উঠে বৈকি!
পল্লীর যে-বধূ শাশুড়ীর গঞ্জনা মাত্র ভক্ষণ করিয়া পুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত উদরটাকে দিনের পর দিন শূন্য রাখিয়া নির্বিবাদে চলে-তাহাকে দেখিয়া যতটা ব্যথা না পাই, যে-বৌ শাশুড়ী-রক্ষিত সুখাদ্য চুরি করিতে গিয়া ধরা পড়ে, সে আমাদের সহানুভূতি আকর্ষণ করে বেশি।
অভাব লইয়া যাহারা বাঁচে, অভাব তাহাদের গা-সহা। বৈদান্তিকের তাহারা নির্মল প্রশংসার অধিকারী। অভাব লইয়া যাহারা কাঁদে মানুষের বুকে দেয় তাহারা আঘাতের পর আঘাত।
কে জানিত উপরের কথাগুলি দুইটি জীব অন্তত তাহাদের জীবনে প্রতিফলিত করিয়া ছাড়িবে।
বুভুক্ষা শুধু উদরের নিজস্ব জিনিস নয়। মনেরও বুভুক্ষা বলিয়া একটা কিছু আছে। মনের বুভুক্ষা চাহে প্রেম, প্রেম চাহে স্পর্শ-বাস্তব জীবনে ইহাই স্বাভাবিক। আবার কালির আঁচড়ে যাহারা চরিত্র সৃষ্টি করে, আচমকা প্রচণ্ড স্পর্শ হইতে প্রেম ও প্রেম হইতে বুভুক্ষার উন্মেষ-তাহাদের নিরূপিত এই সিদ্ধান্ত অনেক সময় বাস্তবক্ষেত্রে চোখে পড়িয়া যায়।
নিউ পার্ক স্ট্রিটের উত্তর দিকের ফুটপাথ আর বাঁ দিক হইতে আগত একটি অতি সরু গলি-তারই সংযোগস্থলে দুই প্রাণীর অভাবিত সংঘর্ষ গুটিকয় দর্শকের মনে যে অদ্ভুত সহাস্যরস সৃষ্টি করিয়াছিল তাহা নিতান্তই সাময়িক।
ফুটপাথ দিয়া একজন যাইতেছিল রাস্তার পাশের গাছের মাথায় কচি-কিশলয়ের উপর অকাল বর্ষণের আয়োজনের দিকে সন্ত্রস্ত দৃষ্টি ফেলিতে ফেলিতে। অন্যজন আসিতেছিল বাঁ দিকের সরু গলি হইতে অতি বেগে ছুটিতে ছুটিতে, সম্ভবত পশ্চাদ্দিক হইতে তাড়িত হইয়া। উভয়েই আত্ম-অসংবৃত। তাহাদের একজনের হাঁটুতে এবং অন্যজনের থুতনিতে লাগিয়া গেল প্রচণ্ড ধাক্কা।
তাহাদের একটিকে কুলী মজুর বা ভিখারী, বেশভূষা দেখিয়া যে-কোন একটি ভাবিয়া নেওয়া যায়। নাম কাহারও জানা থাকিবার নয়। ইচ্ছামত ভজা বলিয়া নিলেও কাহারও আপত্তি উঠিবার নয়। অন্যটি একটি কুকুর। বড়লোকের বাড়ির নয় যে, আদর করিয়া একটি ভাল নাম দিবে। নিতান্তই পথেরই খেঁকী কুত্তা। দর্শকের উচ্চ হাসির মধ্যে ইহারা বড় অপ্রস্তুত হইল।
খেঁকী তাহার লম্বা থুতনি নিচু করিয়া প্রশস্ত ফুটপাথ ধরিয়া ভজার সোজা পশ্চাতের বিপরীত দিকে চলিল। একটু দূরে আসিয়া সে ঘাড় বাঁকাইয়া সংঘর্ষের সাথীকে বারবার দেখিয়া দেখিয়া চলিল। সংঘর্ষের চোটে সে কিঞ্চিৎ দূরে ছিটকাইয়া পড়িয়াছিল।
স্তম্ভিত ভজাও হাঁটুর আঘাতের স্থানে একটু হাত বুলাইয়া লইয়া এবং খেঁকীর দিকে চাহিতে চাহিতে গন্তব্যস্থানে প্রস্থান করিল।
সন্ধ্যা উৎরাইয়া গিয়াছে অনেকক্ষণ। পার্ক স্ট্রিট যেখানে সার্কুলার রোডে মিশিয়াছে তাহারই নিকটে একটি জনবিরল স্থানে গাছে ছায়াটি দূরাগত আলোর অত্যাচারে আবছা ফ্যাকাশে হইয়া উঠিয়াছে। শ্রান্ত ভজা মাথার মোটটা নামাইয়া বসিয়া পড়িল। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়া কাগজের কুচি সংগ্রহ করিয়াছে সে। দীর্ঘদিনের সঞ্চয়ের পাশে হয়ত সে সংকীর্ণ গরমের রাত্রিটা কাটাইয়া দিবার জন্যই বসিয়াছে। পথের মালিক তো ইহারাই।
মোটের একদিকে খাবারের একটি ঠোঙা গুঁজিয়া রাখিয়া ভজা অদূরের দুই তিনখানা খাবারের দোকানের সামনে দিয়া ঘুরিয়া আসিতে গিয়াছিল। মোটের সন্নিকটে দ্বিতীয় প্রাণীর আগমন তাহার সন্ধানী দৃষ্টি দূর হইতেই দেখিতে পাইয়াছিল। হেই হেই করিয়া দৌড়াইয়া আসিয়া সে অপহারকের মুখ হইতে খাবারে ঠোঙাটি উদ্ধার করিয়া লইল। চাহিয়া দেখে-একদা দেখা সেই লম্বা থুতনি। বিকট ধমক খাইয়া খেঁকী নড়িল। কিন্তু অল্প একটু দূরে গিয়া স্থান গ্রহণ করিল।
খেঁকীর লোলুপদৃষ্টির সম্মুখে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment