এক জোলা ছিল। তার গান গাইবার ভারী সখ। তার বড় ইচ্ছা যে, সে নূতন নূতন গান শিখিয়া গায়, কিন্তু সে জোলা বলিয়া কেহ তাকে গান শিখাইত না। একদিন সে স্ত্রীকে বলিল “ওগো গাঁয়ের লোকগুলা বড়ই হিংসুটে, ওরা আমায় গান শিখতে দেখলে হিংসায় জ্বলে। আমি এক কাজ করব, বাজারে গিয়ে গোটা পাঁচেক গান কিনে আনব, তারপর মজা করে গাইব। ওরা সব অবাক হয়ে শুনবে আর বলবে 'জোলা আবার এমন সুন্দর গান, কোথায় পেলে।' তুমি আমায় পাঁচটী টাকা দাও। এমন গান আনব, শুনে তোমার তাক্ লেগে যাবে। আর বুঝলে, এ গান সবার আগে তোমাকেই শুনাব।”

স্ত্রীর নিকট হইতে পাঁচ টাকা লইয়া সে বাজারে গেল-গান কিনিবার জন্য। বাজারে গিয়া সে দোকানীদিগকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল "মশায় আপনাদের দোকানে কি গান কিনতে পাব?" দোকানীরা তাহাকে বলিল “দূর বোকা, গান আবার পয়সায় বাজারে বিকায় নাকি রে।”

এক চতুর দোকানী জোলাকে ঠকাইবার জন্য নিজ দোকানে ডাকিয়া নিয়া গান বেচিতে প্রস্তুত হইল এবং মুখে মুখে যা-তা পাঁচটা গান তৈয়ার করিয়া দিয়া জোলার নিকট হইতে পাঁচটা টাকা আদায় করিল।

জোলা তো গান পাইয়া মহাখুশি। সে অল্পখনের মধ্যে গানগুলি মুখস্ত করিয়া বাড়িতে আসিল। স্ত্রী বলিল “কি গান কিনে এনেছ শুনি?”

জোলা বলিল "আরে জুলি, এ সব গান কি দিনে দুপুরে বলা যায়? এ যে আমার পাঁচ টাকার কেনা গান। তোমাকে যখন কথা দিয়ে গিয়েছি তা' তুমি রাত্তিরে শুনতে পাবে, আর কেউ না, এমনকি তোমার ছোট্ট বোনটাও না।" নিশুতি রাতে যখন সক্কলে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে তখন জোলার স্ত্রী বলল “ওগো রাত্তিরে না আমায় গান শুনাবার কথা ছিল, ভুলে গেলে নাকি?”

জোলার ভয় পাচ্ছে, আর কেহ তাহার গান শুনিয়া ফেলে। তাই গান শুনাইবার জন্য সে স্ত্রীকে লইয়া গোয়ালঘরে গেল, এদিকে এক চোর আসিয়া জোলার ঘরে সিঁদ কাটিতে লাগিল, জোলা কিন্তু এর বিন্দুবিসর্গও টের পায় নাই। দোকানী জোলাকে যেভাবে গান শিখাইয়াছিল, সেও ঠিক সেইভাবেই ক্রমান্বয়ে গান গাইতে লাগিল। চোরের সিদ কাটিবার সময় জোলার প্রথম গান আরম্ভ হইল-

"খপ্ খপাখপ্ কাটিছে

থেকো সব চুপ্

বটীখানা রাখবে ধারে

যেমনি ঢুকবে অমনি ঘাড়ে

মারবে বেজায় কোপ্।"

জোলা বলল “বেশ গান তো!”

আর চোর বেটা গান শুনে ভাবল “ভালরে ভাল টের তো পেয়েছে, এখন কি করি। যে কয়টা বাসন টাসন পেয়েছি তা নিয়েই চম্পট দেই। বেটারা গোয়ালঘরে থেকে কথা বলছে, এখন বাঁশ বনে লুকাইগে। ওরা ঘুমুলে পর আসব।”

এই ভাবিয়া যেমনি চোর বাঁশবনে লুকিয়েছে, অমনি জোলা তার দ্বিতীয় গান শুরু করিল।

"বাঁশবাগানে লুকায় যাদু ভয় নেইকো প্রাণে,-

ভালুক মামা অই যে কাছে

ওৎ পাতিয়ে বসেই আছে ধরবে যাদুর কানে।"

যেমনি শুনা অমনি চোরের হল মহাভয়। সে ভালুকের ভয়ে তাড়াতাড়ি নিকটের এক কচুবনে আশ্রয় নিল। এবার জোলার তৃতীয় গানের পালা। সে গান ধরল-

"কচুবনে লুকিয়ে আছে, বেশ হয়েছে

সাপ ভায়া তো করবে দংশন,

এবার বুঝি যাদুর জীবন শেষ হয়েছে।"

শুনিয়া তো চোরের চক্ষুস্থির। সাপ? যার একটি কামড়ে গোটা মানুষটী মরিয়া যায়। এখন তো এখান থেকে চম্পট দেওয়া ছাড়া উপায় নাই। তাই সে বাড়ীর পানে একেবারে দে ছুট। ঠিক সেই সময় জোলার চতুর্থ গান চোরের কানে গেল-

"চুরি করে যাচ্ছ যাদু সেইটি রেখ মনে,

বাঘের পরে টাগ রয়েছে

একটু পরেই ধরবে এ যে বুঝবে সেইক্ষণে।

আর কি চোরের পা চলে? ও বাবা বাঘের 'পরে আবার নাকি টাগ। চুরি করিয়া যাহা আনা হইয়াছে তার উপর আবার বাটপাড়ি হবে নাকি! গোয়ালঘরে যারা গান গায়, তারা ত মনিষ্যি নয়, কোন দেবতা টেবতা হ'বে বোধহয়। দু'বার দুটা

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion