রবিবার দুপুরে রিলিফ কিচেনের কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে জয়দ্রথ বাড়ি ফিরে 'বাংলার কিশোর আন্দোলন' বইটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ল, পড়তে পড়তে ক্রমশ বইয়ের অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে এল, আর সে ঘুমের সমুদ্রে ডুবে গেল ।

চারিদিকে বিপুল-ভীষণ অন্ধকার। সে-অন্ধকারে তার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয় আসতে লাগল, কিন্তু তা বেশিক্ষণ নয়, একটু পরেই জ্বলে উঠল সহস্ৰ সহস্ৰ শিখায় এক বিরাট চিতা; আর শোনা গেল লক্ষ লক্ষ কণ্ঠের আর্তনাদ-ভয়ে জয়দ্রথের হাত-পা হিম হয়ে যাবার উপক্রম হতেই সে পিছনের দিকে প্রাণপণে ছুটতে লাগল— অসহ্য সে আর্তনাদ; আর সেই চিতার আগুনে তার নিজের হাত পা-ও আর একটু হলে ঝলসে যাচ্ছিল।

আবার অন্ধকার। চারিদিকে মৃত্যুর মতো নিস্তব্ধতা। হঠাৎ সেই অন্ধকারে কে যেন তার পিঠে একটি শীর্ণ, শীতল হাত রাখল। জয়দ্রথ চমকে উঠল 'কে?' তার সামনে দাঁড়িয়ে সারা দেহ শতচ্ছিন্ন কালো কাপড়ে ঢাকা একটি মেয়ে-মূর্তি। মেয়েটি একটু কেঁপে উঠল, তারপর ক্ষীণ, কাতর স্বরে গোঙাতে গোঙাতে বলল আমাকে চিনতে পারছ না? তা পারবে কেন, আমার কি আর সেদিন আছে? তুমি আমার ছেলে হয়েও আমার অবস্থা বুঝতে পারছ না… দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বললে: আমি তোমার দেশ!…

বিস্ময়ে জয় আর একটু হলে মূর্ছা যেত: 'ভূমি!"

—“হ্যাঁ, বিশ্বাস হচ্ছে না?' ম্লান হাসে বাংলা দেশ । —তোমার এ অবস্থা কেন?

জয়ের দরদ মাখান কথায় ডুকরে কেঁদে উঠল বাংলা । —খেতে পাই না বাবা, খেতে পাই না…

—কেন, সরকার কি তোমায় কিছু খেতে দেয় না?

বাংলার এত দুঃখেও হাসি পেল কোন দিন সে দিয়েছে খেতে? আমাকে খেতে দেওয়া তো তার ইচ্ছা নয়, চিরকাল না খাইয়েই রেখেছে আমাকে; আমি যাতে খেতে না পাই, তার বাঁধনের হাত থেকে মুক্তি না পাই, সেজন্যে সে আমার ছেলেদের মধ্যে দলাদলি বাঁধিয়ে তাকে টিকিয়েই রেখেছে। আজ যখন আমার এত কষ্ট, তখনও আমার উপযুক্ত ছেলেদের আমার মুখে এক ফোঁটা জল দেবারও ব্যবস্থা না রেখে আটকে রেখেছে— তাই সরকারের কথা জিজ্ঞাসা করে আমায় কষ্ট দিও না…

জয় কিছুক্ষণ চুপ করে সেই কাপড়ে ঢাকা রহস্যময়ী মূর্তির দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর ধীরে ধীরে বলে: তোমার ঘোমটা-টা একটু খুলবে? তোমায় আমি দেখব ।

বাংলা তার ঘোমটা খুলতেই তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে উঠল জয়: উঃ, কী ভয়ঙ্কর চেহারা হয়েছে তোমার! আচ্ছা তোমার দিকে চাইবার মতো কেউ নেই দেশের মধ্যে?

—না, বাবা। সুসন্তান বলে, আমার মুখে দুটি অন্ন দেবে বলে যাদের ওপর ভরসা করেছিলুম, সেই ছেলেরা আমার দিকে তাকায় না, কেবল মন্ত্রী হওয়া নিয়ে দিনরাত ঝগড়া করে, আমি যে এদিকে মরে যাচ্ছি, সেদিকে নজর নেই, চিতার ওপর বোধহয় ওরা মন্ত্রীর সিংহাসন পাতবে…

—তোমাকে বাঁচাবার কোনো উপায় নেই?

আছে। তোমরা যদি সরকারের উপর ভরসা না করে, নিজেরাই একজোট হয়ে আমাকে খাওয়াবার ভার নাও, তা হলেই আমি বাঁচব…

হঠাৎ জয় বলে উঠল: তোমার মুখে ওগুলো কিসের দাগ?

এগুলো? কতকগুলো বিদেশী শত্রুর চর বছর খানেক ধরে লুটপাট করে, রেললাইন তুলে, ইস্কুল-কলেজ পুড়িয়ে আমাকে খুন করবার চেষ্টা করছিল, এ তারই দাগ। তারা প্রথম প্রথম ‘আমার’ ভাল হবে বলে আমার নিজের ছেলেদেরও দলে টেনেছিল, কিন্তু তারা প্রায় সবাই তাদের ভুল বুঝেছে, তাই এখন ক্রমশ আমার ঘা শুকিয়ে আসছে। তোমরা খুব সাবধান!... এদের চিনে রাখ; আর কখনো এদের ফাঁদে পা দিও না আমাকে খুন করতে…

জয় আর একবার বাংলার দিকে ভাল করে তাকায়, ঠিক যেন কলকাতার মরো মরো ভিখারীর মতো চেহারা হয়েছে। হঠাৎ পায়ের দিকে তাকিয়েই সে চিৎকার করে ওঠে: এ কী?

দেখে পা দিয়ে অনর্গল রক্ত পড়ছে।

—তোমার এ অবস্থা কে

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion