পাভলভীয় প্রত্যয় ও চিকিৎসাবিদ্যা
চিকিৎসকেরা পাভলভকে জানেন একজন বিশিষ্ট শারীরবিদ্যা-বিশারদ হিসাবে; শর্তাধীন পরাবর্ত (কনডিশন্ড্ রিফ্লেক্স)-ক্রিয়ার আবিষ্কারক হিসাবে। শারীরবিদ্যায় (ফিজিওলজি) তিনি মাত্র একটি নতুন পরিচ্ছেদ যোগ করেছেন—এই ভ্রান্ত ধারণা নিরসনের স্থান এই প্রবন্ধে নেই। চিকিৎসাবিদ্যায় পাভলভ প্রত্যয়ের প্রভাব সম্বন্ধে অতি সংক্ষেপে একটি কথা মাত্র আলোচনা করছি। চিকিৎসাবিদ্যার এবং মনোবিদ্যার ছাত্রদের ও জনসাধারণের মধ্যে পাভলভ সম্বন্ধে ঔৎসুক্য জাগানোই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।
জীববিদ্যা, শারীরবিদ্যা, মনোবিদ্যা প্রভৃতি চিকিৎসাবিদ্যার শাখাপ্রশাখায় পাভলভীয় প্রত্যয় যুগান্তর এনেছে। শর্তাধীন পরাবর্তের মাধ্যমে পাভলভ মহা-মস্তিষ্কের (সেরিব্রাম) উপর যে-সব গবেষণামূলক পরীক্ষা করেছেন, শারীরবিদ্যায় যে-ধরনের কাজ তাঁর আগে আর কেউ করেননি। এক নতুন মস্তিষ্ক বিদ্যা তথা শারীরবিদ্যা পাভলভ গড়ে তুলেছেন, যার ফলে চিকিৎসা-বিদ্যার মূল সূত্র আজ সোভিয়েট দেশ বদলাতে বাধ্য হয়েছে। গ্যালিলিও, কোপরনিকাস, ডারউইন প্রভৃতি মনীষীদের আবিষ্কারের মতোই অভিনব ও মৌলিক পাভলভীয় প্রত্যয়। এর প্রয়োগ-সম্ভাবনা সন্দেরেপ্রসারী। শারীরবিদ্যায় ও মনোবিদ্যায় পাভলভীয় ধারা বস্তুত এক নতুন যুগের সূচনা—প্রাক্-পাভলভীয় ধারা থেকে সম্পূর্ণ বিভিন্ন ও মৌলিক।
প্রাক্-পাভলভ যুগের শারীরবিদ্যা প্রধানত বিশ্লেষণমূলক (অ্যানালিটিকাল) হওয়ার দরুন জীবের উচ্চতর ব্যবহার বা মানস-চৈতন্য সম্বন্ধে কোনো হদিশ দিতে পারেনি। মানস-চৈতন্যের ক্ষেত্রে শারীরবিদ্যা-বিশারদেরা বার বার নিজেদের দৈন্য জানিয়েছেন ও মস্তিষ্ক যে উচ্চতর মননক্রিয়ার কেন্দ্র হতে পারে, এ কথা ভাবতেও চাননি। আসলে, যান্ত্রিক জড়বাদীদের পক্ষে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মননক্রিয়া বোঝা সম্ভব ছিল না। কাজেই মন আধ্যাত্মিকতার রহস্য দিয়েই ঘেরা ছিল এবং বিজ্ঞান আধ্যাত্মিকতার মূলকে ঠিকমতো আক্রমণ করতে পারত না। বিশ শতকেও ইলেকট্রন-কণার ব্যবহারের তুলনা টেনে এনে “মননক্রিয়ার অনিশ্চয়তা” সম্বন্ধে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে ৷
ঊনিশ শতকের শেষের দিকে মহা-মস্তিষ্কের গবেষণা কিছুদূর এগিয়েই থেমে গিয়েছিল। মহা-মস্তিষ্কে ইন্দ্রিয়ের কেন্দ্র-নির্ণয় (লোকালাইজেশন অব সেরিব্রাম) কাজ যখন শুরু হয়, একদল বৈজ্ঞানিক ভেবেছিলেন—এইবার বুঝি শারীরবিদ্যার সাহায্যে মননক্রিয়ার রহস্য উদ্ঘাটিত হবে । কিন্তু শধু, বিশ্লেষক-মনোবৃত্তি দ্বারা আচ্ছন্ন থাকার দনে শারীরবিদ্যা ঐখানেই থেমে গেল।
প্রকৃতির রাজ্যে বিশ্লেষণের সঙ্গে সংশ্লেষণও (সিনথেসিস) চলেছে অবিরত ; এটুকু না বুঝলে বিবর্তন ও উচ্চতর প্রাণীর উদ্ভব কী করে হতে পারে, বোঝা অসম্ভব। যান্ত্রিক জড়বাদের অথবা আধ্যাত্মিকতার মোহে আচ্ছন্ন বৈজ্ঞানিকদের পক্ষে তাই আর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হল না। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ (ডায়ালেকটিকাল মেটিরিয়ালিজম) কিন্তু বিবর্তনের সঠিক স্বরূপটি ধরতে পেরেছিল। তাই বস্তুবাদী বৈজ্ঞানিক পাভলভের পক্ষে মহা-মস্তিষ্কের উপর গবেষণামূলক পরীক্ষা দ্বারা মননক্রিয়ার স্বরূপ উদ্ঘাটিত করা কিছুমাত্র কঠিন হয়নি। এ ছাড়া পাভলভ উদ্ভাবিত ‘শর্তাধীন পরাবর্ত’ অক্ষত মস্তিষ্কের উপর পরীক্ষা চালানোর একমাত্র উপায় বলা যেতে পারে। তিনি ও তাঁর সহকারিগণ এই প্রক্রিয়ায় তিরিশ বছর ধরে প্রয়োগশালায় ক্রমাগত পরীক্ষা চালিয়ে মহা মস্তিষ্কের কার্যকলাপ সম্বন্ধে যে-সব তথ্য ও বিধি আবিষ্কার করেছেন, তাঁর আগের শারীরবিদ্যার মহারথীদের পক্ষে সেগুলির ধারণা করাও সম্ভব ছিল না। তাঁর পরীক্ষাগুলি বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক-প্রথায় পরিচালিত ও ফলগুলি গাণিতিক নির্ভুলতার নিদর্শন হওয়া সত্ত্বেও, পুরনো আমলের বৈজ্ঞানিকরা তাঁর নতুন প্রত্যয়কে এখনও গ্রহণ করতে পারছেন না। এর মূলে রয়েছে যান্ত্রিক জড়বাদ ও আধ্যাত্মিকতার আবহাওয়া।
পরাবর্ত-ক্রিয়ার স্বরূপ বুঝতে হলে, পাভলভ-বর্ণিত দুটি পরীক্ষার আলোচনা দরকার। প্রথম : একটি কুকুরের মুখের মধ্যে যদি খনিকটা তরল অম্ল-দ্রাবক (ডাইল্যুট এ্যাসিড) ঢেলে দেওয়া যায়, সহজাত আত্মরক্ষা প্রবৃত্তির দরুন মুখের পেশীর আলোড়ন দ্বারা কুকুর মুখে থেকে দ্রাবক ফেলে দেবে ও সঙ্গে সঙ্গে দ্রাবককে আরও তরল করার উদ্দেশ্যে মুখের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে লালা নিঃসৃত হতে থাকবে ।
দ্বিতীয়ঃ প্রত্যেকবার দ্রাবক ঢালবার ঠিক পূর্বমূহর্তে যদি কোনো শব্দ করা হয় (ধরুন ঘণ্টা বাজানো), তাহলে কয়েকবার এইরূপে পরীক্ষার পরে দেখা যাবে, মুখে দ্রাবক না ঢাললেও, শুধুমাত্র শব্দ করার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটির মুখের পেশী আলোড়িত হচ্ছে ও লালা নিঃসৃত হচ্ছে। দ্রাবকের দরুন কুকুরটির ব্যবহার ও ঘন্টা বাজানোর
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment