শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে
        অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের খেতে;
মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার—চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ,
        তাহার আস্বাদ পেয়ে অবসাদে পেকে ওঠে ধান,
                        দেহের স্বাদের কথা কয়;
বিকালের আলো এসে (হয়তো বা) নষ্ট ক’রে দেবে তার সাধের সময়

চারিদিকে এখন সকাল—
        রোদের নরম রং শিশুর গালের মতো লাল;
মাঠের ঘাসের ’পরে শৈশবের ঘ্রাণ—
পাড়াগাঁর পথে ক্ষান্ত উৎসবের এসেছে আহ্বান।

চারিদিকে নুয়ে প’ড়ে ফলেছে ফসল,
তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা-ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল;
        প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে-থেকে আসিতেছে ভেসে
পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাঁড়ারের দেশে!
        শরীর এলায়ে আসে এইখানে ফলন্ত ধানের মতো ক’রে,
যেই রোদ একবার এসে শুধু চ’লে যায় তাহার ঠোঁটের চুমো ধ’রে
        আহ্লাদের অবসাদে ভ’রে আসে আমার শরীর,
চারিদিকে ছায়া—রোদ—খুদ—কুঁড়ো—কার্তিকের ভিড়;
চোখের সকল ক্ষুধা মিটে যায় এইখানে, এখানে হ’তেছে স্নিগ্ধ কান,
পাড়াগাঁর গায় আজ লেগে আছে রূপশালি-ধানভানা রূপসীর শরীরের ঘ্রাণ

আমি সেই সুন্দরীরে দেখে লই—নুয়ে আছে নদীর এ-পারে
বিয়োবার দেরি নাই—রূপ ঝ’রে পড়ে তার—
                শীত এসে নষ্ট ক’রে দিয়ে যাবে তারে;
আজো তবু ফুরায়নি বৎসরের নতুন বয়স,
মাঠে-মাঠে ঝ’রে পড়ে কাঁচা রোদ—ভাঁড়ারের রস;

মাছির গানের মতো অনেক অলস শব্দ হয়
সকালবেলার রৌদ্রে; কুঁড়েমির আজিকে সময়।

গাছের ছায়ার তলে মদ ল’য়ে কোন ভাঁড় বেঁধেছিলো ছড়া!
তার সব কবিতার শেষ পাতা হবে আজ পড়া;
                ভুলে গিয়ে রাজ্য—জয়—সাম্রাজ্যের কথা
অনেক মাটির তলে যেই মদ ঢাকা ছিলো তুলে নেবো তার শীতলতা;
        ডেকে নেবো আইবুড়ো পাড়াগাঁর মেয়েদের সব;
                মাঠের নিস্তেজ রোদে নাচ হবে—
                শুরু হবে হেমন্তের নরম উৎসব।

হাতে হাত ধ’রে-ধ’রে গোল হ’য়ে ঘুরে-ঘুরে-ঘুরে
                 কার্তিকের মিঠে রোদে আমাদের মুখ যাবে পুড়ে;
ফলন্ত ধানের গন্ধে—রঙে তার—স্বাদে তার ভ’রে যাবে আমাদের সকলের দেহ;
রাগ কেহ করিবে না—আমাদের দেখে হিংসা করিবে না কেহ।
আমাদের অবসর বেশি নয়—ভালোবাসা আহ্লাদের অলস সময়
                  আমাদের সকলের আগে শেষ হয়;
দূরের নদীর মতো সুর তুলে অন্য এক ঘ্রাণ–অবসাদ–
আমাদের ডেকে লয়, তুলে লয় আমাদের ক্লান্ত মাথা, অবসন্ন হাত।

তখন শস্যের গন্ধ ফুরাযে গিয়েছে খেতে—রোদ গেছে প’ড়ে,
এসেছে বিকালবেলা তার শান্ত শাদা পথ ধ’রে;
তখন গিয়েছে থেমে ওই কুঁড়ে গেঁয়োদের মাঠের রগড়;
হেমন্ত বিয়ায়ে গেছে শেষ ঝরা মেয়ে তার শাদা মরা শেফালীর বিছানার ’পর;
মদের ফোঁটার শেষ হ’য়ে গেছে এ-মাঠের মাটির ভিতর,
তখন সবুজ ঘাস হ’য়ে গেছে শাদা সব, হ’যে গেছে আকাশ ধবল,
চ'লে গেছে পাড়াগাঁর আইবুড়ো মেয়েদেব দল।


          পুরোনো পেঁচারা সব কোটরের থেকে
                    এসেছে বাহির হ’য়ে অন্ধকার দেখে
                              মাঠের মুখের ’পরে;
          সবুজ ধানের নিচে—মাটির ভিতরে
ইঁদুরেরা চ’লে গেছে; আঁটির ভিতর থেকে চ’লে গেছে চাষা;
শস্যের খেতের পাশে আজ রাতে আমাদের জেগেছে পিপাসা।

ফলন্ত মাঠের ’পরে আমরা খুঁজি না আজ মরণের স্থান,
প্রেম আর পিপাসার গান
আমরা গাহিয়া যাই পাড়াগাঁর ভাঁড়ের মতন;
                    ফসল—ধানের ফলে যাহাদের মন
ভ'রে উঠে উপেক্ষা করিয়া গেছে সাম্রাজ্যেরে, অবহেলা ক’রে গেছে পৃথিবীর সব সিংহাসন—
                    আমাদের পাড়াগাঁর সেই সব ভাঁড়—
যুবরাজ রাজাদের হাড়ে আজ তাহাদের হাড়
মিশে গেছে অন্ধকারে অনেক মাটিব নিচে পৃথিবীর তলে;
                    কোটালের মতো তারা নিশ্বাসের জলে
                              ফুরায়নি তাদের সময়,
                    পৃথিবীর পুরোহিতদের মতো তা’রা করে নাই ভয়,
                              প্রণয়ীর মতো তা’রা ছেঁড়েনি হৃদয়
                    ছড়া বেঁধে শহরের মেযেদের নামে;
                              চাষীদের মতো তা’রা ক্লান্ত হ’যে কপালের ঘামে

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion