বিয়োগপঞ্জী : মোহিতলাল মজুমদার ও ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
মাস কয় মাত্র অতিবাহিত হয়েছে—কবি মোহিতলাল মজুমদার এই পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। সে শোক বিস্মৃত না হতেই আবার পূজাবকাশে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের বিয়োগে বাংলা সাহিত্যের জিজ্ঞাসু পাঠকমাত্রই নিরতিশয় ব্যথিত বোধ করবেন নিতান্ত অকালে এরা কেউ আমাদের ত্যাগ করেননি, তা সত্য। কিন্তু এদের অভাব বাঙলা দেশ সহনক্ষম হয়ে ওঠেনি, তা আরও নিদারুণ সত্য। যে স্থান রিক্ত হয়, তা আর পূর্ণ হয় না—এদের গুণগ্রাহী সুহৃদ ও অনুরাগী অনুজ হিসাবে আমরা অনেকেই তা জানি। ব্যক্তিমানুষ হিসাবে এমন দুইজন বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষ সম্ভবত আর দেখা যায় না। অথচ সততায়, আন্তরিকতায়, কর্তব্যনিষ্ঠায়, বন্ধুবাৎসল্যে এরা সমগোত্রের মানষ ছিলেন, দুজনার নিকট বহু অম্লমধুর অনুযোগ, অভিযোগ এবং কঠিন তিরস্কার লাভ করে এসত্যও মনে মনে স্বীকার করেছি। মোহিতলালের বেত্রাহত কোনো জ্ঞানী ও গুণী লোকও—আর বাঙলা দেশে কোন জ্ঞানী বা গুণীলোক তাঁর বেত্রাঘাত লাভ করেননি?—মোহিতলালের শালীনতাহীন কটূক্তি কোনো স্বার্থবশে বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী-প্ররোচনার দ্বারা উদ্রিক্ত, এ কথা অনুভব করতে পারেননি। ব্রজেন্দ্রনাথ কটুক্তিপ্রবণ ছিলেন না, কিন্তু তিনিও স্পষ্টভাষী ছিলেন। অথচ, তাঁর ভাবাতিশয্যহীন অন্তরে যে শুভেচ্ছা, এমনকি সদাশয়তা ও বন্ধু বাৎসল্যের ফল্গুধারা প্রবাহিত হত, সম্ভবত কোনো ভাগ্যবান সহকর্মী তা অস্বীকার করবেন না। মৃত্যুর পরে কীর্তিই সাহিত্যিকের পরিচয় হিসাবে থাকে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু যে-নিমেষে প্রথম আমরা এরূপে কৃতকর্মা সুহৃদকে হারাই, সে-নিমেষে সেই মানুষটিরই কথা একান্তরূপে স্মরণ না করে পারি না। শব্দ কীর্তি দিয়ে পরিমাপ করে সাত্বনালাভ করা তখন দুঃসাধ্য, এমনকি অসম্ভব। এ মানবীয় দুর্বলতা সাহিত্য-বিচারে অবশ্য স্বীকার্য নয়, তবে ক্ষমার্হ।
মোহিতলাল ও ব্রজেন্দ্রনাথ দুজনাই বাঙলা সাহিত্যের একটি বিশেষ যুগকে যেন ভাগ করে নিয়েছিলেন। সাহিত্যের দুই ভিন্নমুখী দুয়ারে বসে তাঁরা বাঙালীর ঊনবিংশ শতকের সাহিত্যিক কীর্তিকে বিংশ শতকের বাঙালীর নিকট উদ্ঘাটনে ব্রতী হয়েছিলেন। অবশ্য মোহিতলালের পথ ছিল ভাবাবেগ-সমৃদ্ধ কাব্য-বিচারের পথ। সে বিচারের মূল উৎস তাঁর কবিপ্রাণ। তাঁর বিচার প্রণালী, ঐতিহ্য তিনি সত্যসুন্দরদাসরূপে পাশ্চাত্য সাহিত্য, বিশেষ করে ইংরেজি সাহিত্যের সমালোচনা-ভান্ডার থেকে গ্রহণ করেছিলেন। পাশ্চাত্য-চিন্তা ও পাশ্চাত্য সাহিত্য প্রভাবিত ঊনবিংশ শতকের বাঙালী জীবন ও বাঙালী সাহিত্যই তাঁর সাহিত্য-সাধনার ভিত্তিভূমি বলে তিনি গ্রহণ করেন, বঙ্কিম ও মাইকেল হয়ে ওঠে তাঁর বিশেষ আশ্রয়। তাই বাঙলার বিংশ শতককে ঊনবিংশ শতকের ঐতিহ্য-ধারায় প্রবাহিত ও সীমিত করবার ভার তিনি নিয়তি-নির্দেশের মতো নিজের স্কন্ধে গ্রহণ করেন। নিষ্করণে এই কর্তব্য-নিষ্ঠায় কবি মোহিতলাল কাব্য-বিচারে ক্রমে যেরূপে ভাববাদের দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে জাতীয়-সংকীর্ণতার (শোভিনিজম) বশ হয়ে পড়েন, বাঙালী বৈশিষ্ট্যের নামে জাতি-রক্তের তত্ত্বে (ব্লাড-থিওরি) গিয়ে পৌঁছে প্রায় ধুমবিলাসী (অব্স্কিওরান্টিস্ট) হয়ে ওঠেন, সে কাহিনী প্রগতিকামী বাঙালী সাধারণের সুপরিচিত। কিন্তু বাঙলায় সত্যকারের সাহিত্যবিচারের ধারাবাহিক চেষ্টা মোহিতলালের জীবনসাধনা এবং তাঁর সমালোচনা-পদ্ধতি গ্রাহ্য না হলেও বলতে হবে তিনি পাশ্চাত্য ভাববাদী সমালোচকদের সমতুল্য। সাহিত্য জিজ্ঞাসু কোনো বাঙালী তা অধ্যয়ন না করে পারবেন না; তার বিচার না করলে প্রগতিবাদী কোনো সমালোচক বাঙালী পাঠকের প্রশ্ন থেকে অব্যাহতি পাবেন না।
মোহিতলাল ঊনবিংশ শতকের পশ্চিমদ্বার দিয়ে এসে পূর্বমুখী হয়ে বসেছিলেন। ব্রজেন্দ্রনাথ ঊনবিংশ শতকের যে দুয়ারে এসে বসলেন সেটি পূর্বদ্বার, তথ্যাবিষ্কারের ঐতিহাসিক দ্বার। সেখানে ভাবাবেশের স্থান নেই, ঐতিহাসিক তথ্যনিষ্ঠা ছেড়ে ব্রজেন্দ্রনাথও এক পদ অগ্রসর হতে চাননি এবং মুখে তুলে সম্মুখে পশ্চাতে কোনো দিকে চাইতেও তিনি উৎসুক ছিলে। এবিষয়ে তিনি ছিলেন মূলত শ্রীযদুনাথ সরকার মহাশয়ের অনুগত শিষ্য। অসহায় বালক হিসাবে সামান্য শিক্ষা নিয়ে সওদাগরী আপিসে যিনি আপন কর্মনিষ্ঠায় ও চরিত্রবলে জীবিকা অর্জন করতেন, তিনি আপনার দৃঢ়সংকল্প ও তথ্যনিষ্ঠার বলে বাঙলার ঊনবিংশ শতকের কীর্তিকে বাঙালীর নিকট অক্ষয় আকারে পরিবেশন করে গিয়েছেন। এ অতি অদ্ভুত দেশ যে, এখানে ঊনবিংশ শতকের কথাও
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment