ফ্যাসিবাদ বলতে কি বোঝায়?
ফ্যাসিবাদের শ্রেণীচরিত্র
ফ্যাসিবাদ বলতে কি বোঝায়? এই প্রশ্নটির সদুত্তর পেতে হলে আমাদের সর্বাগ্রে কমিন্টার্ণ-এর (কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল) নথিপত্রের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করতে হবে। ফ্যাসিবাদের যখন জন্ম হয় তখন এর চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন সংজ্ঞা উপস্থিত করা হতে থাকে। তখনকার দিনে অ-কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবী মহলে ফ্যাসিবাদকে একটি “মধ্যবিত্ত আন্দোলন”, একটি “পেটি-বুর্জোয়া আন্দোলন” হিসাবে দেখাবার চেষ্টা হয়েছিল। কমিউনিস্টরা আগাগোড়াই এই মতের বিরোধিতা করেন।
বস্তুত, একমাত্র কমিন্টার্ন ফ্যাসিবাদের একটি সঠিক সংজ্ঞা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল। এই কথাটি আজ স্মরণ করা আরও বিশেষ প্রয়োজন এই কারণে যে সাম্প্রতিককালে ইওরোপে কিছু সোশ্যাল ডেমোক্রাটিক পার্টির নেতা এবং কিছু ট্রটস্কীপন্থী নেতা এই বলে কুৎসা প্রচার করতে চাইছেন যে কমিন্টার্ণ ফ্যাসিবাদের চরিত্রটি প্রথমে ধরতে পারে নি, তারাই নাকি যথাসময়ে এই বিপদটি বুঝতে পেরেছিল। শুধু তাই নয়, ইওরোপে, এমন কি আমাদের দেশেও কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে এমন বুদ্ধিজীবী আছেন যারা বলতে চান যে কমিন্টার্ণ প্রথম দিকে ফ্যাসিবাদের স্বরূপ ধরতে পারেন নি, এবং ফ্যাসিবিরোধী যুদ্ধে যোগ্য ভূমিকা নিতে পারেন নি।
নীচে যে উদ্ধৃতিগুলি দেওয়া হচ্ছে তাতে এই কুৎসা প্রচারের যথোচিত জবাব মিলবে। প্রসঙ্গত, মনে রাখা দরকার, ফ্যাসিবাদের বিপদটি সম্পর্কে প্রথম সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন লেনিন। তার পরে ফ্যাসিবাদের বিপদটি যতই বড় আকারে দেখা দিতে থাকে ততই বারে বারে কমিন্টার্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয় এবং দীর্ঘ আলোচনা ও অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদের একটি সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত সংজ্ঞা নির্ণয় করতে সমর্থ হয়। নীচে কালানুক্রমিক-ভাবে কমিন্টার্ণের সেই প্রচেষ্টা তুলে ধরা হচ্ছে। )
ফ্যাসিবাদের বিপদ সম্পর্কে লেনিনের সতর্কবাণী
“যেমন ধরা যাক, ইতালির ফ্যাসিস্তরা ইতালির জনগণের কাছে, তারা যে এখনও যথেষ্ট পরিমাণে আলোকপ্রাপ্ত হয় নি এবং ব্ল্যাক হাণ্ডড্রেডস (Black Hundreds)দের হাত থেকে তাদের দেশের নিরাপত্তা যে এখনও সুনিশ্চিত হয় নি, এই কথাটি ব্যাখ্যা করে হয়ত আমাদের খুবই উপকার করবে। হয়ত এটি খুব মঙ্গলজনক হবে।”
(লেনিন, কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিকের চতুর্থ কংগ্রেসে প্রাপ্ত রিপোর্ট, ১৩ই নভেম্বর, ১৯২২।—রজনী পাম দত্তের “দ্য ইন্টারন্যাশনাল” নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত)
কমিন্টার্ণের ১৯২৮ সালে গৃহীত কর্মসূচীতে ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা
“কোন কোন বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণ ফ্যাসিবাদের রূপ ধারণ করে।
“এই পরিস্থিতিগুলি হল—পুঁজিবাদী সম্পর্কগুলির স্থিতিশীলতার অভাব, শ্ৰেণীচ্যুত সামাজিক উপাদানের যথেষ্ট পরিমাণে অবস্থিতি, শহুরে পেটিবুর্জোয়া ও বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপক স্তরের চরম নিঃস্বতা: গ্রামীণ পেটিবুর্জোয়াদের মধ্যে অসন্তোষ এবং পরিশেষে প্রলেতারীয় জনগণের গণ আন্দোলন সম্পর্কে নিরন্তর ভীতি। নিজেদের শাসনকে স্থিতিশীল ও চিরস্থায়ী করার জন্য বুর্জোয়ারা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার, যা সমস্ত আন্তঃপাটি বোঝাপড়া ও সহযোগিতা থেকে মুক্ত, পক্ষ গ্রহণ করে এবং সংসদীয় ব্যবস্থাকে ক্রমবর্ধিতভাবে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
"ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা হল মতাদর্শগতভাবে “জাতীয় চেতনা” ও “বিভিন্ন পেশার” প্রতিনিধিত্বের মুখোশ পরা প্রত্যক্ষ একনায়কত্বের ব্যবস্থা (বাস্তবে, শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা) এমন এক ব্যবস্থা যা পেটিবুর্জোয়া, বুদ্ধিজীবী ও সমাজের অন্যান্য স্তরের অসন্তোষকে কাজে লাগাবার জন্য এক বিচিত্র ধরনের বাগাড়ম্বরের আশ্রয় নেয় (ইহুদিদের বিরোধিতা, তেজারতি পুঁজির বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে আক্রমণ এবং সংসদীয় “বকবকানির” প্রতি অধৈর্যের ইঙ্গিতদান)। এই ব্যবস্থা সুসংহত ও ভালো বেতনপ্রাপ্ত ফ্যাসিবাদী ইউনিটগুলি গড়ে তোলে, একটি পার্টিযন্ত্র ও আমলাতন্ত্র গড়ে তোলার মাধ্যমে দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে। আবার একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদ শ্রমিকদের সবচেয়ে পশ্চাদপদ স্তরকে নিজের পক্ষে সংগ্রহ করে, তাদের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে, এবং সোশ্যাল ডেমক্রেসীর অকর্মণ্যতার সুযোগ নিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে।
"ফ্যাসিবাদের প্রধান লক্ষ্য হল বিপ্লবী শ্রমিক অগ্রবাহিনীকে, অর্থাৎ কমিউনিস্ট অংশগুলিকে ও প্রলেতারীয়দের নেতৃস্থানীয় ইউনিটগুলিকে ধ্বংস করা। সামাজিক বাগাড়ম্বর, দুর্নীতি ও সক্রিয় শ্বেত সন্ত্রাসের সংমিশ্রণকে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে চরম সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের সংগে যুক্ত করা হল ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য। বুর্জোয়াদের
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment