একেবারে আদিমকালে মানুষের জাদুবিশ্বাস, শিল্পকলা আর বিজ্ঞান ছিল এক ও অভিন্ন। সে-সময়ে সকল মানুষও ছিল একই সমতলে অবস্থিত, কোনো শ্রেণীভেদে সমাজ আকীর্ণ ছিল না। তাই চেতনার ক্ষেত্রেও ঘটেনি শ্রেণীবিভাগ। প্রকৃতির ভেতরেই সে-সময়কার মানুষ বসবাস করতো, বাইরের প্রকৃতি থেকে নিজেকে সে কোনোমতেই আলাদা ভাবতে পারতো না, তার নিজের মতোই প্রকৃতির সবকিছুরই প্রাণ আছে বলে মনে করতো। তাই আদিম মানুষকে বলা হয় সর্বপ্রাণবাদী। সেই সর্বপ্রাণবাদ আদিম মানুষের মনে এমন বিশ্বাসেরও সঞ্চার করেছিল যে, সে তার ইচ্ছা দিয়েই প্রকৃতিকে তার নিজের বশে রাখতে। পারবে, নিজের কাজে লাগাতে পারবে। সেই বিশ্বাসেরই নাম জাদুবিশ্বাস। সেই জাদুবিশ্বাসের ওপর ভর করেই সে প্রকৃতিকে বুঝতে, জানতে, বদলাতে ও ব্যবহার করতে চেষ্টা করতো। সেই জাদুবিশ্বাসজাত চেষ্টাই ছিল আদিম মানুষের বিজ্ঞান। আর সেই বিজ্ঞানের সঙ্গে ওতপ্রোত ছিল তার শিল্পকলা। সম্মিলিতভাবে প্রকৃতির কোনো বিরূপতাকে প্রতিহত করতে গিয়ে আদিম মানুষের কণ্ঠ থেকে যে সুর ধ্বনি ও বাক্য বেরিয়ে আসতো, তাই ছিল তাদের সঙ্গীত ও কবিতা; প্রকৃতিকে বদলাবার প্রয়াস চালাতে গিয়ে উপজাত হতো যে ছন্দময় দেহভঙ্গিমা, তাই ছিল তাদের নৃত্য; কোনো প্রাণীকে শিকার করার উদ্দেশ্য নিয়ে গুহা-গাত্রে প্রাণীর যে ছবি আঁকতো তারা, তাই ছিল তাদের চিত্রকলা। এই সঙ্গীত, কবিতা, নৃত্য, চিত্রকলার সমষ্টিই তাদের শিল্পকলা। এর থেকে তাদের বিজ্ঞান ও জাদুবিশ্বাসকে পৃথক করা চিল একেবারেই অসম্ভব।

কিন্তু এই আদিম মানুষেরাই যখন ‘সভ্য মানুষ’ হলো, অর্থাৎ শ্রেণীহীন সমাজ থেকে উত্তরিত হলো শ্রেণীসমাজে, তখনই জাদুবিজ্ঞান আর শিল্পের ঐক্য গেল ভেঙে। জাদু পরিণতি পেলো ধর্মে, আর ধর্ম পরিণত হলো সে-সমাজের কর্তৃত্বশীল শ্রেণীর কর্তৃত্ব বজায় রাখার হাতিয়ারে। শ্রেণীসমাজের কর্তৃত্বহীন মানুষরা ধর্মকে আঁকড়ে ধরলো ‘হৃদয়হীন’ ও ‘আত্মাহীন’ জগৎ পারাবারের কল্পিত হৃদয় ও কল্পিত আত্মারূপে। কর্তৃত্বশীল শ্রেণী শিল্পকলারও প্রায় একই দশা

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion