মুক্তিযুদ্ধ, কমিউনিস্ট পার্টি ও বেতিয়ারার বীর শহীদ
মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ কেবলমাত্র নয় মাসের সামরিক অ্যাকশন ছিল না। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে প্রায় দুই যুগ ধরে অব্যাহতভাবে যে গণসংগ্রাম চালিয়েছিল, সেই গণসংগ্রামের চূড়ান্ত বা শীর্ষবিন্দুটি ছিল নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক উপাদান ও চরিত্র নির্ধারণে এবং তার বাস্তবায়নের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের ভিত্তিমূল রচনার ক্ষেত্রে এদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা ছিল অনন্য সাধারণ।
ষাট-সত্তরের দশকে সারা পৃথিবী জুড়ে ছিল জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সোনালী সময়। উপনিবেশিকতার জাল ছিন্ন করে একে একে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল চারদিকে। এসব ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বাঙালি জাতির গণসংগ্রামও সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী বিশ্বব্যাপী জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করাটা ছিল একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। কমিউনিস্ট পার্টি সে কর্তব্যটি সফলভাবে পালন করেছে। একইসাথে শ্রমজীবী শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার ও মুক্তির প্রশ্নটিও সংগ্রামের মূলধারায় যুক্ত করতে কমিউনিস্ট পার্টি সক্ষম হয়। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যও জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের উপাদান হিসাবে সন্নিবেশিত হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে প্রবল অত্যাচার-নির্যাতনের মুখেও সচেতন ও সুপরিকল্পিতভাবে অসীম ধৈর্যের সাথে অগণিত সংগ্রাম ও রাজনৈতিক প্রয়াসের মধ্য দিয়েই এই কাজগুলো তখন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয় কমিউনিস্ট পার্টি। এসবই হল মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ভিত্তি রচনায় কমিউনিস্টদের ঐতিহাসিক অবদান।
সশস্ত্র সংগ্রামের বাস্তব পটভূমি রচনায়ও কমিউনিস্টদের অবদান ছিল প্রভৃত। '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর পার্টির নেতৃবৃন্দ বলতে শুরু করেন, '৬৯ ছিল আরো বড় ধরনের সংগ্রামের 'ড্রেস রিহার্সাল'। তৎকালীন নেতৃবৃন্দ এটাও বলেন যে, 'সশস্ত্র সংগ্রাম এখন এজেন্ডায় চলে এসেছে'।
সশস্ত্র সংগ্রামের বাস্তব প্রস্তুতি ব্যাপকভাবে শুরু হয় একাত্তরের পয়লা মার্চের পর। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালির উপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায়। গণহত্যা শুরু করে। কমিউনিস্ট পার্টি ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু হানাদার বাহিনীর প্রবল সামরিক আক্রমণে তা ভেঙ্গে যায়। পার্টি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন যে, হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আরো শক্তিশালী সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আর সেজন্য ট্রেনিং গ্রহণ করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সশস্ত্র বাহিনী।
দেশের অভ্যন্তরে কাজের জন্য একটি শক্তিকে রেখে দিলেও পার্টির মূল নেতৃত্ব ও পার্টির ফাইটিং ফোর্সের বৃহৎ অংশ প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়।
সেখানে অবস্থান করেই তারা মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দেশের ভেতরে-বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করা, বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য নেতৃবৃন্দ জোর প্রয়াস চালান। একইসঙ্গে পার্টির তরুণ ক্যাডারদেরকে সশস্ত্র সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যও নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়। অনেক রকম রাজনৈতিক বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীতে (এফএফ), নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, মেরিন গেরিলা বাহিনী প্রভৃতিতে পার্টির ক্যাডারদের যথাসম্ভব অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
মে মাসে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) নামে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন একটি বাহিনী গঠিত হয়। যা 'মুজিব বাহিনী' নামে খ্যাত। কমিউনিস্ট পার্টিও তখন চেষ্টা করে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের একটি যৌথ গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলার। এই বাহিনী গঠন করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সামরিক সহযোগিতা দানের জন্য কমিউনিস্ট নেতৃত্ব ভারত সরকারকে সম্মত করাতে সক্ষম হন। মে মাসের শেষ দিক থেকেই এক/দেড় মাসের নীবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়ে যায়। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের তেজপুর থেকে কিছুটা দূরে সেলোনবাড়ি নামক স্থানে গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। তাছাড়া নেফা এলাকায় 'ডেমোলিশন'সহ উন্নত যুদ্ধকৌশলের ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরায় গেরিলাদের জন্য বাইখোরাতে বেইস ক্যাম্প স্থাপন
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment