চল্লিশ দশকের একজন কর্মীর চোখে মণি সিংহ
আমাদের মণিদা, কমরেড মণি সিংহ, আর ইহজগতে নেই। দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৩১ ডিসেম্বর তাঁর জীবনের অবসান ঘটল। মণিদা নেই, কিন্তু তিনি রেখে গেছেন তাঁর দ্বারা সুদীর্ঘকাল ধরে পরিচালিত কৃষক সংগ্রাম ও কমিউনিস্ট পার্টি গড়ার এক ইতিহাস।
চল্লিশ দশকের যুক্ত বাংলার কৃষকদের মধ্যে, বিভিন্ন জেলায়, দেখা দিয়েছিল এক অপ্রতিরোধ্য শ্রেণী সংগ্রামের জোয়ার। ময়মনসিংহ জেলায় এই সংগ্রামের নেতৃত্বে ছিলেন মণি সিংহ। আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন কারামুক্ত একদা সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীরা যাঁদের অধিকাংশ এই জেলায় কারামুক্তির পর যোগ দিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। চল্লিশ দশকের আগে জমিদার ও জোতদার প্রধান এই জেলায় কৃষক আন্দোলন বলতে কিছু ছিল না। আন্দোলন গড়ার পিছনে ছিল কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য্যশীল প্রচেষ্টা, কারণ অতীতের সন্ত্রাসবাদীরা কৃষকদের কাছে ‘স্বদেশী ডাকাতবাবু’ বলে সাধারণভাবে পরিচিত ছিলেন এবং তাঁদের প্রায় সবাই ছিলেন জোতদার শ্রেণীভুক্ত। তাঁদের পক্ষে মুসলমান, নমশূদ্র ও নানা শ্রেণীর নিম্নবর্গের অশিক্ষিত মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা ছিল অত্যন্ত কঠিন। দিনের পর দিন অসীম ধৈর্য্য নিয়ে নিরলসভাবে তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা গড়ে তুলতে হয়েছে, তাদের জীবনের নানা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হয়েছে। যুদ্ধচলাকালীন জিনিসপত্রের অভাব ও দুর্মূল্য, তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, দুর্ভিক্ষ পরবর্তী রোগের মহামারী ইত্যাদি একটার পর একটা আক্রমণে কৃষকশ্রেণী ও গরিব মানুষের জীবন জর্জরিত। তখন কংগ্রেস নেতারা জেলে, যারা বাইরে ছিলেন মানুষের এই সব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তাঁরা উদাসীন। মুসলিন লীগ এ-সব ব্যাপারে কখনো কিছু করে না। এই পরিস্থিতিতে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সমিতি নিজেদের সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রথম দিকে সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় বাড়ি-বাড়ি ঘুরে চাল-ডাল আদায় তুলে লঙ্গরখানা খোলা হল, সঙ্গে সঙ্গে চলল সরকারি সাহায্যের জন্য আন্দোলন, ঘেরাও ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত সরকার সাহায্য দিতে বাধ্য হল। হাজার হাজার লোক যেত সেই সব লঙ্গরখানায়। শুধু লঙ্গরখানা খোলা নয়, চালানো হল মজুত বিরোধী আন্দোলন। নানা জায়গায় জমিদার ও জোতদারদের মজুত ধানের গোলা ঘেরাও করে ধান-চাল গরিব চাষী ও গরিবদের মধ্যে কর্জ বা দান হিসেবে বিতরণ করা হল। এ-সব ছাড়াও ছিল ফসল বাড়াবার আন্দোলন। অনেক অনাবাদী বা পতিত জমি উদ্ধার ক'রে চাষিদের দিয়ে চাষ করানো হয়েছে। দুর্ভিক্ষের পরে এল মহামারী। প্রায় সব মহাকুমায়, বিশেষ ক'রে কিশোরগঞ্জ মহাকুমায় বসন্ত ও কলেরায় হাজার কয়েক লোক মারা গেছে। এমন গ্রাম ছিল যেখানে মৃতদেহ সৎকার করার মত লোক ছিল না, এক সঙ্গে ৪/৫ জনকে কবর দিতে হয়েছে। মানুষের সেই দুঃসময়ে কমিউনিস্টরা তাদের পাশে ছিল শেষ অবধি। তখন ডাঃ বিধান রায় প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির ডাক্তার ও ওষুধপত্র নিয়ে তারা বিপন্ন মানুষের সেবা করেছে ঘরে ঘরে গিয়ে। দিনগুলি সত্যিই ভয়ংকর এবং কমিউনিস্টদের কাছে অগ্নিপরীক্ষার মত। সেই পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পেরেছিল, কারণ মনি সিংহ ও তাঁর মত আরও নেতা পার্টিতে ছিলেন, যারা কর্মীদের তেমনভাবেই তৈরি করেছিলেন যাতে তারা সব রকম অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে। মনে পড়ে আলতাব আলী, খোকা রায়, ললিত সরকার, পুলিন বক্সী, ক্ষিতিশ চক্রবর্তী, নগেন সরকার, ক্ষিতিশ সরকার প্রমুখ কমরেডদের নাম। এঁরা ছিলেন ত্যাগ ও নিষ্ঠার প্রতীক। আমরা সাধারণ কর্মীরা এঁদের দেখে প্রেরণা পেতাম। এঁরা দিনরাত পরিশ্রম ক'রে শিক্ষা দিয়ে তৈরি করেছিলেন কয়েক হাজার কর্মীর কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সমিতি। এসবের ফলশ্রুতি নেত্রকোনায় আয়োজিত ‘সারা ভারত কৃষক সম্মেলন’ এবং পরবর্তীকালে ‘তেভাগা আন্দোলন’।
ময়মনসিংহ জেলায় মণি সিংহ ছিলেন কিংবদন্তী মানুষ। রাজ বংশের একজন হয়েও সারা জীবন গরিব চাষির স্বার্থে সংগ্রাম করেছেন, এটা তাঁকে সাধারণ মানুষের চোখে অসাধারণ ক'রে তুলেছিল। টংক প্রথার বিরুদ্ধে
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment