আমাদের দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায় মার্কসবাদ সম্বন্ধে খোঁজখবর রাখবার কোনো দরকার আছে বলে মনে করেন না। বুদ্ধিজীবীসুলভ কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে অনেকে হয়তো হিটলার মুসোলিনি প্রমুখ সংস্কৃতিবিধ্বংসী মহাপুরুষদের জীবনী ও বর্তমান ইতালি ও জার্মানির রাষ্ট্রিক ও আর্থিক পরিকল্পনার প্রতি উৎসাহ-প্রদর্শন করেন; কিন্তু যে মার্কসীয় চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতির সাহায্যে লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার মতো পৃথিবীর ইতিহাসে অভূতপূর্ব ব্যাপার-ঘটল, তার প্রতি অতি-বুদ্ধি-প্রসূত একটা ঔদাসীন্যের ভাব আমাদের দেশের উচ্চ-শিক্ষিত মহলে বেশ মজ্জাগত। এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম যে একেবারেই নাই তা অবশ্য নয়; কিন্তু মার্কসবাদ নিয়ে চিন্তা বা আলোচনা করেন, এমন লোকের সংখ্যা অন্যান্য সভ্য দেশের তুলনায় এ দেশে অতি নগণ্য বললেও অত্যুক্তি হয় না। এরও অবশ্য ঐতিহাসিক ও সামাজিক ভিত্তি আছে আর কি কি কারণের সংঘাতের ফলে আমাদের দেশের পণ্ডিতেরা মার্কসীয় চিন্তাধারার সঙ্গে অপরিচিত থাকবার নিশ্চিন্ত আনন্দে অভ্যস্ত হয়ে কালযাপন করেন, তা মার্কসবাদী বিশ্লেষণের সাহায্যে সহজেই বোধগম্য হয়। আত্মানুশীলন নাকি আমাদের দেশের সনাতন সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য; তাহলে অন্য কোনো কারণে না হোক, অন্তত প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারা বজায় রাখবার জন্যও আমাদের আত্মানুসন্ধিৎসু ও কৃষ্টি-অভিমানী শিক্ষিত মহলের পক্ষে মার্কসবাদের প্রতি দৃষ্টিপাত অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।

অধ্যাপক জর্জ এইচ স্যাবাইন তাঁর  History of Political Theory বই-খানার এক জায়গায় বলেছেন যে মার্কসীয় সাম্যবাদের একটা দার্শনিক ভিত্তি বহু মনীষীর চিন্তার ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিজমের সে রকম কোনো ভিত্তি নাই; এখান-ওখান থেকে নানা রকম টুকরো টুকরো দার্শনিক তত্ত্ব জুটিয়ে-একটা জগাখিচুড়ি পাকানো হয়েছে মাত্র। ফ্যাসিজম ও কম্যুনিজম শীর্ষক এক পরিচ্ছেদে এ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি লিখেছেন:

The philosophy of communism has behind it a long history of intellectual development, the outcome of three generations of investigation and discussion, which has given it a considerable measure of coherence and continuity of growth. In it thought in a measure preceded action, in the sense that neither Marx nor Lenin made his philosophy to fit the exigencies of an occasion. The philosophy of fascism has been largely ad hoc and has been patched together from the existing fund of ideas either to justify what had already been done or to meet situations that were immediately in prospect. The philosophy of communism at least puts a value on intellectual consistency and objectivity of investigation. ...The philosophy of fascism is fundamentally irrationalist, offering a myth created by intuition and made “true” by the very act of willing or believing it. (A History of Political Theory, P. 773-4)

কিন্তু দার্শনিক ভিত্তি থাকুক আর না থাকুক, আমাদের দেশের পণ্ডিতদের ঝোঁক তবু ফ্যাসিজমের দিকেই শেষ পর্যন্ত যেয়ে দাঁড়ায়। অযৌক্তিক ফ্যাসিজমই আমাদের যুক্তি-অভিমানী বুদ্ধিজীবীদের বেশি আকৃষ্ট করে। অলীক রূপকথার-ব্যাপারী মুসোলিনি বা হিটলারের লেখা এ দেশে যত আগ্রহ ও ঔৎসুক্য জাগায়, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে লিখিত দার্শনিক বা সমাজতত্ত্বের বই তার কাছে ঘেঁষতে পারে না। এটা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির দৈন্য ছাড়া আর কিছুই সূচিত করে না। আর্যরক্ত বা রোমক গৌরবের কাহিনী যতই হাস্যকর হোক না কেন, আমাদের বুদ্ধিজীবীর ঝোঁকটা সেই দিকেই বেশি। মুসোলিনি বা হিটলার আমাদের দেশে এখনও বীরপূজা লাভ থেকে বঞ্চিত হন নাই। এটা খুবই আশঙ্কার বিষয় ও সভ্যতা-সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যাঁদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ আছে তাঁরা এতে উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠবেন। অধ্যাপক স্যাবাইনের যে মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে তা যে এতটুকুও অতিরঞ্জিত নয়, তা হিটলার, মুসোলিনি, জেন্টিলে, রোজেনবের্গ প্রভৃতি ফ্যাসিস্টদের লেখার সঙ্গে যার একটু পরিচয়

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion