ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে
মুমূর্ষু ধনতন্ত্রের জঘন্য বিকাররূপে যখন ফ্যাসিজমের উদ্ভব ঘটেছিল, তখন থেকেই সকল দেশের মুক্তিকামী, সকল দেশের জনসাধারণ, তাকে নিজেদের পরম শত্রু বলে মনে করে এসেছে।
আসন্ন বিপ্লবের আশংকায় দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদ এই ফ্যাসিজমের শক্তিবৃদ্ধিতে সাহায্য করে এসেছে। এশিয়ায় জাপানকে, আফ্রিকার ইতালিকে, ইয়োরোপে জার্মানিকে ইংরেজ-ফরাসী-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ উৎসাহ দিয়েছে, সাহায্য করেছে, ছলে বলে কৌশলে দেশের জনসাধারণের ফ্যাসিজম-বিরোধকে নিষ্ফল করে দিয়েছে, আর বকধার্মিকের মতো নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে পরিচয় দেবার চেষ্টা করে এসেছে।
এর কারণ ফ্যাসিজমের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সাম্রাজ্যবাদ যে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত ছিল, ফ্যাসিজমের দংশনভয় যে তার ছিল না, তাও নয়। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের ভরসা ছিল ফ্যাসিস্টরা প্রথমে আক্রমণ করবে দুনিয়ার মালিকদের চক্ষুশূল সোভিয়েত ভূমিকে। সে আক্রমণে প্ররোচনা ও সমর্থনের অভাব তাদের হবে না, আর সোভিয়েত ভূমিকে বিধ্বস্ত করতে পারলে, একবার পৃথিবীর এক-ষষ্ঠাংশে অধিকার বিস্তার করতে পারলে, সোভিয়েত দেশের বিপুল ঐশ্বর্য করায়ত্ত করতে পারলে, তাদের শক্তিলালসা চরিতার্থ হবে। প্রাচীন, সুপ্রতিষ্ঠ সাম্রাজ্যগুলির সঙ্গে ফ্যাসিজম আর লড়তে চাইবে না। এতে শুধু যে সাম্রাজ্যবাদই লড়াই এড়িয়ে যাবে তা নয়, সোভিয়েতকে ধ্বংস করার ফলে সর্বত্রই মুক্তি-আন্দোলন, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও সাম্যবাদী গণশক্তিকে চূর্ণ করা যাবে।
সাম্রাজ্যবাদের এ আশা ছলনামাত্র বলে প্রমাণ হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তকে ইতিহাস ব্যর্থ করে দিয়েছে। যে সাপকে দুধ কলা দিয়ে পোষা হয়েছিল, তা আর পোষ মানতে রাজী হয় নি, ফণা তুলে কামড়াতে এসেছে।
প্রায় আড়াই বছর আগে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এইভাবে শুরু হয়ে গেছল। তখন থেকে সাম্রাজ্যবাদের সংকট বেড়ে চলেছে। ফ্যাসিজমের প্রবল প্রতাপের সামনে ফ্রান্স মাথা নিচু করেছে, সারা ইয়োরোপ একটা গোলামখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইংরেজ-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের ভবিষ্যৎ ক্রমেই অন্ধকার হয়ে উঠেছে।
সাম্রাজ্যবাদের সংকট এমনই ঘোরালো হয়ে উঠেছিল যে ন-মাস আগে যখন হিটলার তার পঙ্গপালকে সোভিয়েত আক্রমণ করার হুকুম দিল, তখন ইংরেজ-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ আর পরিত্রাণের আশা করতে পারল না, হিটলারের আমন্ত্রণে সোভিয়েত-আক্রমণে যোগ দিতে পারল না। ইতিহাসের চাকা এমনভাবে ঘুরে গেছল, সোভিয়েত-মৈত্রী দেশে দেশে এমনভাবে ছড়িয়ে গেছল, যে, ফ্যাসিজমবিরোধী গণশক্তিকে আর উপেক্ষা করা চলল না। যা মাত্র কিছুকাল আগে ছিল একেবারে অভাবনীয়, সে-ই ঘটল। ইংরেজ আর আমেরিকান সরকার সোভিয়েতের সঙ্গে চুক্তি করল, নামজাদা সোভিয়েত বিরোধীরা সোভিয়েত-প্রীতি প্রচার করতে বাধ্য হল।
গণশক্তির একটা বিরাট সুযোগ এল—যুদ্ধ চালিয়ে ফ্যাসিজমকে ধ্বংস করে নতুন দুনিয়া গড়ার সুযোগ এল।
জাপান যখন লড়াইয়ে নামল তখন সর্বদেশের গণ-আন্দোলনের কর্তব্য আরও পরিষ্কার হয়ে গেল। আমাদের দেশের দরজায় যুদ্ধ এসে পৌঁছেছে—আমরা চাই, বা না চাই, আমাদের জীবনকে লণ্ডভণ্ড করার ভূমিকা আরম্ভ হয়ে গেছে। যুদ্ধ সম্বন্ধে একটা নির্বিকার ঔদাসীন্য আর সম্ভব রইল না। জাগ্রত চীনের বীর জনসাধারণের সংগ্রামের সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম যুক্ত হয়ে গেল। সাম্যবাদী সোভিয়েত আর বিপ্লবী চীন হল সর্বদেশের জনসাধারণের পুরোধা। জনযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
কিন্তু সবাই বুঝল না; কত বড় একটা পরিবর্তন যে ঘটে গেল, তা সবাই ধরতে পারল না। কেউ কেউ বলল যে ফ্যাসিজম আর সাম্রাজ্যবাদে লড়াই—আমাদের তাতে কি? আমাদের কাছে দুই-ই সমান, আর হয়তো ফ্যাসিস্টরা আমাদের প্রভুদের তাড়িয়ে দিলে আমাদেরই স্বাধীন হবার রাস্তা খুলে যাবে। আরও শোনা গেল যে ফ্যাসিস্টরা ক্রমাগতই এ দেশকে উদ্দেশ করে বলছে যে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো ঝগড়া নেই, আমাদের পূর্ণ স্বাধীনতা তারা চায়, সুতরাং ইংরেজের বিরুদ্ধে তাদেরই বরং আমাদের সাহায্য
এই অলীক মোহ যদি আমাদের আচ্ছন্ন করে থাকে তো সমূহ বিপদ উপস্থিত হবে। আমাদের দেশে একটা প্রবাদ আছে যে খাল কেটে কুমীর নিয়ে আসাটা কিছু কাজের কথা নয়। দেশের উপকার করছি ভেবে ফ্যাসিস্ট কুমীরকে লোভ দেখিয়ে আনা হচ্ছে আত্মহত্যারই নামান্তর।
জার্মানিতে তো ফ্যাসিস্টরা নিজেদের সোশ্যালিস্ট
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment