রাশিয়ার রণাঙ্গনে নির্ধারিত হবে গণতন্ত্রের জীবনমরণ। মিত্রশক্তির ভাগ্য এখন কমিউনিস্টদের হাতে। রাশিয়া যদি পরাভূত হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ মহাদেশ এশিয়া চলে যাবে নাৎসিদের অধীনে। প্রায় পুরো প্রাচ্যদেশ জাপানীদের করতলগত হওয়ায় নাৎসিরা পৃথিবীর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রণসামগ্রী একেবারে নাগালের মধ্যে পেয়ে যাবে। এরপর হিটলারকে হারাবার আর কি সুযোগ থাকবে আমাদের?

এদিকে যানবাহনের অসুবিধা, হাজার হাজার মাইল দূরে আমাদের যোগাযোগ রক্ষার সমস্যা, ইস্পাত, তেল ও রাবারের সমস্যা এবং বিভেদ সৃষ্টি করে জয় করার হিটলারি রণকৌশল—এ অবস্থায় রাশিয়া যদি পরাজিত হয়, আমাদের অবস্থা হবে সঙ্গিন।

কেউ কেউ বলেন, তাতে আর কি? যুদ্ধ না হয় আরও দশ কি কুড়ি বছর চলবে। আমার হিসেবে এটা হল একটু বেশি আশাবাদিতা। এই পরিস্থিতিতে এবং এমন দুর্ধর্ষ শত্রুর বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ হবে খুবই অনিশ্চিত।

কিসের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি?
রাশিয়ানদের এখন খুবই সাহায্যের প্রয়োজন। তারা দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার জন্য দাবি জানাচ্ছে। মিত্র দেশগুলোর মধ্যে এ-বিষয়ে মতভেদ আছে যে এক্ষুণি দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলা সম্ভব কিনা। আমরা শুনে থাকি দ্বিতীয় ফ্রন্ট চালাবার মতো যথেষ্ট যুদ্ধসামগ্রী মিত্রশক্তির নেই। আবার শুনি যে তাদের তা আছে। আমরা এও শুনি যে পরাজয়ের আশঙ্কায় তারা এই সময়ে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। পুরোপুরি নিশ্চিত ও প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো ঝুঁকি নিতে অনিচ্ছুক।

কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত ও প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত কি আমরা অপেক্ষা করতে পারি? ঝুঁকি না নিয়ে কি আমরা থাকতে পারি? যুদ্ধে ঝুঁকি ছাড়া কোনো রণকৌশল নেই। এই মুহূর্তে জার্মানরা ককেসাস থেকে ৩৫ মাইল দূরে। ককেসাস যদি যায়, রাশিয়ার ১৫ শতাংশ তেল হাতছাড়া হবে। যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছে, আরও লক্ষ লক্ষ মৃত্যুমুখে তখন আমরা কি ভাবছি তা সৎভাবে স্পষ্ট করে বলতে হবে। মানুষের মনে নানা প্রশ্ন উঠছে। আমরা শুনছি আয়ারল্যান্ডে বিরাট অভিযাত্রী ফৌজ নামছে, আমাদের জাহাজের কনভয়ের ৯৫ শতাংশ অক্ষতভাবে ইয়োরোপে পৌঁছচ্ছে, কুড়ি লক্ষ ব্রিটিশ সৈন্য সম্পূর্ণ অস্ত্র-সজ্জিত অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্রে যাবার জন্য তৈরি। তাহলে কিসের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি, রাশিয়ার যখন এমন মরিয়া অবস্থা?

আমরা মুখোমুখি হতে পারি
সরকারি ওয়াশিংটন ও সরকারি লন্ডনকে বলছি, এ প্রশ্নগুলো বিভেদ সৃষ্টির জন্য নয়। বিভ্রান্তি দূর করে, আত্মবিশ্বাস ও ঐক্য গড়ে তুলে চূড়ান্ত জয়ের জন্যই এই প্রশ্ন আমরা রাখছি। এবং এর উত্তর যাই হোক না কেন আমরা তার মুখোমুখি হতে পারি। রাশিয়া দেয়ালে পিঠ দিয়ে লড়ছে। সে দেয়ালটাই হল মিত্রশক্তির সবচেয়ে মজবুত প্রতিরক্ষা। লিবিয়াকে রক্ষা করতে গিয়ে আমরা তা হারিয়েছি। ক্রীট রক্ষা করতে গিয়েও আমরা হেরেছি। ফিলিপিনস ও প্রশান্ত মহাসাগরে অন্যান্য দ্বীপ বাঁচাতে গিয়েও আমরা সেগুলো হারিয়েছি। কিন্তু রাশিয়াকে আমরা হারাতে পারি না, কারণ তার অবস্থান গণতন্ত্রের সংগ্রামীদের প্রথম সারিতে। যখন আমাদের জগৎ, আমাদের জীবন, আমাদের সভ্যতা, আমাদের পায়ের কাছে ধসে পড়ছে—তখন আমাদের একটা ঝুঁকি নিতেই হবে।

রাশিয়া যদি ককেসাস হারায় তাহলে মিত্রশক্তির পক্ষে তা হবে চরম সর্বনাশ। তখন তোষণকারীদের দিকে নজর রাখতে হবে, কারণ তারা গর্ত থেকে তখন বেরিয়ে আসবে। তারা চাইবে বিজয়ী হিটলারের সঙ্গে একটা রফা করতে। তারা বলবে, ‘আর আমেরিকান জীবন নষ্ট করা অর্থহীন—আমরা হিটলারের সঙ্গে একটা ভালো রফা করতে পারি।’

নাৎসি ফাঁদ সম্পর্কে হুঁশিয়ার
এই নাৎসি ফাঁদের ওপর নজর রাখুন। এই নাৎসি নেকড়েগুলো ভেড়ার পোশাক পরবে। তারা শান্তির ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুব লোভনীয় করে তুলবে এবং ভালো করে বোঝবার আগেই আমরা নাৎসি মতবাদের কাছে ধরা দেব। আমরা দাস হয়ে পড়ব। তারা আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেবে এবং আমাদের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করবে। পৃথিবী শাসিত হবে গেস্টাপো

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion