সাতটি পয়সা
দেবতারা সত্যিই একটি উপযুক্ত বিধান দিয়েছেন—গরিবেরাও হাসতে পারবে।
কুঁড়ে ঘরে শুধুই যে কান্নাকাটি, হা-হুতাশ শোনা যায়, তা নয়; প্রাণখোলা অনেক হাসিও সেখানে ওঠে। এমনকি, বলতে গেলে, যখন কাঁদা উচিত, তখনই বরং হেসে ওঠে গরিবেরা।
এই দুনিয়াটা আমার ভালোই জানা। আমার বাবা হলেন সুস পরিবারের লোক (নুন সংক্রান্ত জাতিবাচক পদবীবিশেষ, উত্তর ভারতের নুনিয়াদের মতো—অনুবাদক) নুনিয়াদের তখন দারুণ অভাব অনটনের অবস্থা। একটা ইঞ্জিন কারখানায় দিনমজুরের কাজ করতেন বাবা। এই সময়কার দিনগুলো নিয়ে তাঁর তখন আর কোন অহংকার ছিল না, কারই বা থাকে! অথচ এ দিনগুলোও কিন্তু মিথ্যা ছিল না।
আর এও মিথ্যে নয় যে ছেলেবেলার এই কটি বছরে আমি যতো হেসেছি, তেমন করে হাসতে আর সারা জীবনেও পারব না।
কেমন করেই বা হাসি আসবে যখন আমার সেই হাসিখুশি মা আর বেঁচে নেই। দুইগালে তার ছিল একটা ফিকে লালচে আভা। এমন মিষ্টি করে মা আমার হেসে উঠত যে শেষ পর্যন্ত তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ত মুক্তোর মতো অশ্রুবিন্দু; হাসতে হাসতে কাসির ঝোঁকে দম আটকে আসত প্রায়ই।
আর সেই মা পর্যন্ত সেই দিনটির মতো অত বেশি আর কখনো হাসেনি। সাতটা পয়সা খুঁজতে গিয়ে সেদিন আমাদের দু'জনের সারাটা বিকেল কেটে গিয়েছিল। খুঁজতে, খুঁজতে শেষকালে অবশ্য পয়সাগুলো পাওয়া গেল। তিনটে পাওয়া গেল সেলাই কলের টানায়, একটা পোশাকের তাকে...অন্যগুলো পাওয়া গেল অনেক কষ্টে।
প্রথম তিনটে পয়সা পেয়েছিল মা নিজে। মা ভেবেছিল সেলাই কলের টানায় বুঝি আরো কিছু বেশি পয়সা পাওয়া যাবে। সেলাই ক'রে কিছু কিছ পয়সা মা রোজগার করত, সেগুলিকে সে তুলে রাখত ঐ টানায়। আমার পক্ষে এই টানাটা তো ছিল এক অফুরন্ত ধনভাণ্ডারের সামিল। কোনোরকমে একবার হাত দিতে পারলেই হল।
তাই মা, যখন সেই টানার মধ্যে সুঁই, বোতাম, কাঁচি, ফিতের টুকরো আর সুতো নাতার মধ্যে হাতড়াতে শুরু করে অবাক হয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘যাঃ ওরা লুকিয়ে পড়েছে!’ তখন আমি দারুণ অবাক না হয়ে পারিনি।
জিগ্যেস করলাম—‘কারা লুকিয়েছে?’
‘খুদে পয়সাগুলো।’ মা হেসে উঠল, তারপর বার করে আনল টানাটা।
‘আয় খোকা, তবু, একবার দুষ্টু পয়সাগুলোর খোঁজ করে দেখি। ওরে পাজি, ওরে দুষ্টু পয়সা কোথাকার—’
মেঝের ওপর বসে পড়ে মা এমনভাবে টানাটিকে নামিয়ে রাখে যেন নাড়া খেয়ে পয়সাগুলি বুঝি বা উড়ে যাবে। তারপর একসময় এক ঝটকায় উপড়ে করে টানাটা উল্টে দেয়, টুপি ঢাকা দিয়ে লোকে যেমন করে প্রজাপতি ধরে, তেমনি।
এ দেখে না হেসে থাকা একেবারেই অসম্ভব।
মা খুক খুক করে হাসে আর বলে, ‘এর মধ্যেই আছে, এর ভেতরেই আছে পয়সাগুলো।’ কিন্তু টানাটা তুলে দেখার জন্য আগ্রহ দেখায় না।
‘যদি আর একটা পয়সাও থেকে থাকে, তবে সেটা এর ভেতরেই আছে।’ আমিও মাটিতে বসে পড়ি আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করি চক্চকে কোনো পয়সা ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে কিনা। কিন্তু না, কোনো নড়াচড়াই নেই। আসলে টানার মধ্যে সত্যিই যে কিছু, থাকতে পারে এমন আশা আমরাও করিনি।
এই ছেলেমানুষী রগড়ে আমরা দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম।
উল্টানো টানাটা আমি একবার ছুঁতে গেলাম। অমনি মা সাবধান করে উঠল—‘দাঁড়া, দাঁড়া! খুব সাবধান নইলে পালিয়ে যাবে। পয়সা কেমন দৌড় দিতে পারে, তা তো জানোনা। প্রায় উড়ে চলে ৷ আর সে কী ওড়া…’
হাসিতে ফেটে পড়েছিলাম আমরা। কতো সহজে যে পয়সা দৌড় দেয় তা আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে খুবই জানি।
হাসির ঝোঁকটা থামলে টানাটা উলটে দেবার জন্যে আবার আমি হাত বাড়াই ৷
'এই! এই!’ মা চেঁচিয়ে ওঠে। ভয় পেয়ে আমি তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নেই; যেন একটা জলন্ত উনুনেই বুঝি আমি হাত দিতে গিয়েছিলাম।
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment