ঘৃণা
ইলিয়া এরেনবুর্গ
যুদ্ধের গোড়ার দিকে কয়েকমাস আমাদের সৈনিকরা ফ্যাসিস্ট সৈন্যদের প্রকৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিল। কাজেই বিপক্ষের সৈনিকদের ওরা শত্রু বলে ভাবতে পারত না। ঐ সময় আমাদের সৈনিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় কখনও নিরাশ হয়েছি, আবার কখনও গৌরব বোধ করেছি।
গৌরবের বিষয় এই যে আমাদের সৈনিকরা সৌভ্রাত্রের শিক্ষা পেয়েছে, আর নৈরাশ্য এজন্য যে ফ্যাসিস্ট সৈনিকদের প্রকৃতি না বুঝে ওদের উপর আমাদের-সৈন্যরা আস্থা রেখেছিল।
যখন হিটলারের সৈন্য একটার পর একটা শহর অধিকার করে এগিয়ে আসছে, তখনও লালফৌজ ভাবছে জার্মানির শ্রমিক-কৃষক-যারা এই যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে—কখনও ফ্যাসিজমকে মেনে নিতে পারবে না। হিটলারের জার্মানি ফ্যাসিস্ট জার্মানি; সে তুলনায় এই সব সাধারণ সৈনিকদের জার্মানির প্রকৃতি ভিন্ন; যখনই সুযোগ আসবে, এই সৈনিকরা অস্ত্র পরিত্যাগ করবে। জার্মানির বুর্জোয়া সমাজ আর সামন্তশ্রেণী এই যুদ্ধের দাবানল জ¦ালিয়েছে, সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে এর বিরুদ্ধাচরণ করতে পারছে না। জার্মান সৈনিকরা লুঠতরাজ করতে করতে বিদ্যুৎবেগে এগিয়ে আসছে, তখনও অনেকেই আন্তরিকভাবে. বিশ্বাস করছেন জার্মান সৈনিকরা এর বিরুদ্ধে যাবে। অথচ এই আশা-নিমজ্জমান ব্যক্তির একটি তৃণকে অবলম্বন করার মতোই নিষ্ফল ছিল।
এই বিশ্বাসের মূলে ছিল সোভিয়েতের শিক্ষা-নীতি। বিদ্যালয়ে, মহাবিদ্যালয়ে এবং রাজনৈতিক বক্তৃতায় সব সময় জার্মান শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কথা বলা হত। শিল্পোন্নত জার্মানির শ্রমিকদের গুরুত্ব কখনও উপেক্ষা করা যায় না। এই শ্রমিকরা কখনও ফ্যাসিজমের সপক্ষে থাকতে পারে না। বূর-শিল্পপতি এবং সমাজের হঠকারী ব্যক্তিদের সমর্থনে ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা লাভ করেছে, শ্রমিকদের এতে কোনো ভূমিকা নেই। স্মোলেনস্কে এবং ব্রিয়েনস্কে প্রতিরক্ষায় নিযুক্ত কর্মচারীরা এবং লালফৌজের সৈনিকরাও বলতেন জার্মানির ক্ষমতাশালী পদস্থ কর্তারা ফ্যাসিস্ট, ওরা মৃত্যুভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধে লিপ্ত করেছে। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা ভাবছিলেন ইস্তাহার ছড়িয়ে এবং লাউডস্পীকারে আমাদের বক্তব্য প্রচার করে জার্মান সৈন্যদের ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে নিয়ে আসা যাবে। এই উদ্দেশে যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে আমাকে PUR-4 (The Political Department of the Armed Forces) ডেকে পাঠানো হল। ওঁরা আমাকে বললেন হিটলার সত্য গোপন করে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে ওদের সৈন্যদের যুদ্ধমুখী করে তুলেছে।
আমাদের বক্তব্য ওদের কানে পৌঁছে দিতে হবে—লাউডস্পিকারের সাহায্য নেওয়া হবে এবং ইস্তাহার ছড়ানো হবে, আমাকে ওদের জন্য ইস্তাহার লিখতে হবে। তখনও আমাদের সৈন্যাধ্যক্ষরা ওদের মধ্যে সত্যপ্রচারের স্বপ্ন-দেখছেন। এই আশা মরীচিকা মাত্র। দীর্ঘদিন ধরে ওদের সম্পর্কে আমরা এভাবেই ভেবেছি। প্রাক্যুদ্ধকালে যদি মস্কোতে থাকতাম এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তৎকালীন বক্তৃতাগুলি শুনতাম, তাহলে আমিও এই মানসিকতা থেকে মুক্ত থাকতাম না।
আমার অভিজ্ঞতা অন্য রকম। ১৯৩২ সালে আমি ফ্যাসিস্ট সভাগুলিতে জার্মান শ্রমিকদের দেখেছি। স্পেনে জার্মান বিমানকর্মীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, অধিকৃত প্যারিসে আমি ছয় সপ্তাহ বাস করেছি। ফ্যাসিস্ট শ্রমিক-এবং সৈনিকদের আমি জানতাম। কাজেই এই ইস্তাহার আর লাউডস্পিকারের ওপর আমার কোনো আস্থা ছিল না।
ঐ সময় জার্মান সাঁজোয়া বাহিনীর কিছু কয়েদীর সঙ্গে আমার দেখা হয়। ওদের দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়, দ্বিধাশূন্য ভাবভঙ্গি দেখবার মতো। ওরা মনে করত বন্দীদশার এই বেদনা সাময়িক ঘটনামাত্র। যে কোনো দিন ওদের অগ্রসরমান সৈন্যেরা এসে ওদের মুক্ত করবে।
কয়েদীদের একজন আমাদের সৈন্যাধ্যক্ষকে এমন ইঙ্গিত পর্যন্ত দিয়েছিল যে-ঐ সৈন্যাধ্যক্ষ যদি হিটলারের করুণা প্রার্থনা করে আত্মসমর্পণ করে তাহলে ওদের বন্দীশিবিরে এপক্ষের সৈন্যদের নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা সে অবশ্যই করে দেবে।
সে বলছিল, ‘বড়দিনের মুখে মুখে এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে, তারপর তোমরা-যে-যার ঘরে ফিরে যেতে পারবে।’ মস্কোতে পরাজিত হওয়ার পর অবশ্য ফ্যাসিস্ট সৈন্যরা হিটলারকে অভিশাপ দিয়েছে। কিন্তু ১৯৪২ সালে গ্রীষ্মকালে জার্মানরা যখন ককেশাস অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হয়েছে তখন আবার ওরা নিজেদের অপরাজেয় ভেবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।
প্রশ্নোত্তরের সময় ফ্যাসিস্ট সৈন্যরা খুবই সতর্ক থাকত; যেমন রাশিয়ানদের তেমনি আপন আপন সহকর্মীদেরও ওরা সমভাবে ভয়
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment