সংগ্রাম ও শিল্পী
...তারপর অকস্মাৎ ইয়োরোপে ইটালির আবিসিনিয়া আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আমি এক প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল মানুষের জীবনে বর্বরতার আর মনুষ্যত্বের এক টাগ অব ওয়ার আরম্ভ হয়ে গেল এই বিংশ শতাব্দীতে। মানুষ যখন সর্ব বর্বরতাকে সমাহিত করে বৃহত্তর কল্যাণের দিকে চলেছে ঠিক সেই সময়েই মানুষের আত্মস্বার্থপন্থী পদ্ধতি সকল মুখোশ খুলে তাণ্ডব নৃত্য আরম্ভ করে দিয়েছে। জার্মানিতে ইহুদি নির্যাতন দেখে শিউরে উঠলাম। ফ্রয়েড, আইনস্টাইনের দুর্দশা ও অপমান, মেয়েদের অধিকার লোপ, স্পেনের গৃহযুদ্ধ, চীনের বিরুদ্ধে জাপানের অভিযান দেখলাম। মনে মনে বার বার প্রশ্ন করেছিলাম—মানুষ কি এই সহ্য করবে, এক-এক সময় প্রত্যাশা করতাম—ওই ওই দেশের মানুষেই এই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মনুষ্যত্বের এই চরম অপমানের অবসান করবে। তারপর আরম্ভ হল পোলান্ডের বিরুদ্ধে জার্মানির অভিযান। তখন সবচেয়ে দুঃখ হয়েছিল জার্মানির জনসাধারণের জন্যে। তাদের আজ সর্বস্ব অপহৃত হয়েছে বিনা যুদ্ধে, মাদকতায় মাতাল করে তাদের সব অপহরণ করেছে একদল স্বার্থান্ধ লোক। তারপরই লাগল ইংরেজের এবং ফরাসীদের সঙ্গে জার্মানির। বিস্মিত হই নি। ধীরে ধীরে যুদ্ধ প্রসারিত হল সমগ্র বিশ্বব্যাপী হয়ে। ফ্যাসিবাদীরা আক্রমণ করল তাদের প্রাচীনতম শত্রু রাশিয়াকে। রাশিয়াকে বাদ দিয়ে সমগ্র বিশ্ব অধিকার করেও সে নিরাপদ নয়। কারণ মানবকল্যাণের সর্বোত্তম ধর্ম এক বিরাট মূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করেছে সেখানে। সেই তার সবচেয়ে বড় ভয়। অন্ধকার যে ভয় করে আলোকে, পাপ যে ঘৃণা করে পুণ্যকে—সেই ভয় সেই ঘৃণা তার রাশিয়ার ধর্মকে। এ দিকে প্রশান্ত মহাসাগরে জাপান পড়ল ঝাঁপ দিয়ে। সে আজ ভারতবর্ষের দ্বারদেশে উপস্থিত।
ভারতবর্ষের জনশক্তি, তার নেতৃবৃন্দ, তার বুদ্ধিজীবীগণ তার সংবাদপত্র কোনো দিনই তার সত্য কর্তব্য করতে বিস্মৃত হয় নি। তার শ্রেষ্ঠ জাতীয় প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিবাদের উদ্ভবকাল থেকেই ওই আদর্শকে হীন বলে ঘোষণা করে এসেছেন। ভারতের জাতীয় সংবাদপত্র ফ্যাসিবিবোধী নীতি এবং আদর্শকে জনসাধারণের মধ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রচার করে এসেছেন। ভারতের জনসাধারণ, তার শ্রেষ্ঠ জাতীয় প্রতিষ্ঠান, তার সংবাদপত্র, তার সাহিত্যিক, তার মনীষীবর্গ কেউই চায় না ফ্যাসিবাদী জার্মানিকে, জাপানকে অথবা ইটালিকে। কিন্তু তবু আমাদের সম্মুখে এক অদ্ভুত সমস্যা। ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের দমননীতি, ভেদনীতি কূটনীতি ভারতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উত্তোলিত জনশক্তির উন্নত হাত পঙ্গু করে দিয়েছে। ভারতের শ্রেষ্ঠ জাতীয় প্রতিষ্ঠান আজ বিপর্যস্ত, নেতারা বন্দী। উন্মত্ত জনসাধারণ সমগ্র দেশে তাণ্ডব শুরু করে দিয়েছে—তার ফলে জনশক্তির ব্যর্থ অপচয় হয়ে চলেছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে।
আজ সেই একটি সংকটপূর্ণ মুহূর্তে বাঙলার এবং সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র ভারতের প্রতি প্রদেশেই সাহিত্যিক এবং পণ্ডিতমণ্ডলী যে সংঘবদ্ধ হয়ে শুভ এবং নির্ভীক সত্যবাদী উচ্চারণে উদ্যত হয়েছেন, এতে যাঁরা সুখী আমি তাঁদেরই একজন।
প্রবাদ শুনে আসছি, পলাশীর যুদ্ধের পূর্বে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তাতে রানী ভবানী বলেছিলেন—রাঘব বোয়াল বিনাশের জন্য খাল কেটে কুমির এনে ঢুকিয়ো না। প্রবাদটা ঐতিহাসিক প্রমাণে সত্য হোক আর নাই হোক, কথা হিসাবে এত বড় সত্য আর নাই। সে দুর্মতি যদি কারও থাকে, তার সে মতির ধ্বংসই কামনা করি। তবে এটা ঠিক কথা, ভারতের জনসাধারণ একটা শিকল খসাবার জন্য আর একটা শিকল পরতে চায় না এবং চাইবে না। ভারতের ইতিহাসে এই ভুলের বহু পুনরাবৃত্তি হয়েছে। সে-ভুলের মাশুল দিতে দিতে আবার সেই ভুল আমরা করব না। একদল লোক মুষ্টিমেয় হলেও আছে, যারা বলে—আমরা তো গোলামী করতে আছিই, গোলামী আমরা করব। হয় এর নয় ওর। তাদের আমি বলি ক্লীব। এই ক্লীব জাতির মধ্য হতে বিলুপ্ত হোক। এদেরই সমগোত্রীয় একদল সুবিধান্বেষী কৌশল-তান্ত্রিক আছে, তারা বলে—ষাঁড়ের শত্রু বাঘে মারছে। প্রদীপের নিচেই অন্ধকারের মতো এই অতি-বুদ্ধিমানদের বিষয়বুদ্ধির মধ্যে প্রকাণ্ড বোকামির ফাঁক রয়েছে, সেটা তারা বুঝতেই পারে না। ষাঁড়ের শত্রুকে বাঘে যদি
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment