শিল্পের আলো, অন্ধকারের শিল্প
দুর্ভাগ্যের কথা হলেও সত্য যে, প্রায় আদিকাল থেকেই শিল্পসাহিত্যের মার্কসবাদী দৃষ্টি ভ্রান্তি ও বিচ্যুতির মধ্যে যতটা প্রকাশ্য, তার সঠিক ও নির্ভুল ব্যবহারে ততটা নয়। আমরা ভিত ও ওপরতলার উপমাসূত্রে বস্তুজীবন ও শিল্পসাহিত্যমনের পরোক্ষ, জটিল ও দূরান্বয়ী সম্পর্কের কথা বলাবলি করেছি অনেক—কিন্তু কার্যত শিল্পসাহিত্যের বিচারে সেই ভারসাম্যের প্রমাণ রেখেছি সামান্যই। শুধু স্তালিন যুগের ঝ্দানভীয় অন্ধতাকে দোষ দিলে কী হবে, স্বয়ং মার্কস বা এঙ্গেলসকেও তো অনেক সাবধানবাণী উচ্চারণ করে যেতে হয়েছে, নিজেদেরই আবিষ্কৃত তত্ত্বের ভ্রান্ত প্রয়োগের জন্য খেদ করতে হয়েছে। আর এখনও পর্যন্ত, অনেক ঠেকে, অনেক জেনেও, মার্কসীয় শিল্পতত্ত্বের প্রথম ভ্রান্তির পুনরাবৃত্তি দেশে দেশে।
আমাদের দেশের অভিজ্ঞতাতেই আসা যাক। এখনও, এমন কী ১৯৮৪-তে প্রকাশিত রাজ্য পুস্তক পর্ষদ-এর মার্কসবাদী নন্দনতত্ত্বের বইতেই লেখা হতে পারে, ‘কবিতার ইতিহাসে মোড় ফেরার লগ্নের প্রস্তুতি সরাসরি কবির হাতে থাকে না, থাকে পারিপার্শ্বিক জগতে', জানা যেতে পারে এরকম তথ্য, এলিয়টের ‘মতে দুরূহতাই হল আধুনিক মনের প্রতিবিম্ব', কিংবা উঠতে পারে এই বিস্ময়সূচক প্রশ্ন, ‘তাই বলে [ এলিয়ট-অনুপ্রাণিত ] কবি কি তাঁর অভিজাত- শুলভ উন্নাসিকতার স্ফটিকঽর্ম্যে সযত্নলালিত বিষণ্ণ নেতিবাদী জীবনদর্শন ছেড়ে নেমে আসতে পারেন সাধারণ পাঠকের আসরে?' বোধভাষ্যের এই ধরন, যেখানে লেখককে সবসময়ই মাথা নিচু করে থাকতে হয় সামাজিক পরিবেশের কাছে কিংবা লেখার দুরূহতা, লেখকের আভিজাত্য বা বিষাদ বা নেতিবাদ খুব সোজা সরল হিসেবে নিন্দনীয় বলে মনে হয়, এসবই এখনও চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে মার্কসবাদী নন্দনতত্ত্বের নামে। আর তার শুরু যে প্রায় গোড়া থেকেই তা মার্কসবাদী সাহিত্য-বিতর্কের যে-কোনো সংকলনের পাতা নাড়লেই টের পাওয়া যায় ৷ লেখার পর লেখায় সহজ সমীকরণের দৃষ্টান্ত। শুধু ১৯৪৯-৫০-এর অন্ধযুগের কথাই নয়, তার আগে-পরেও নন্দনবিচারের মার্কসবাদী বিচ্যুতির ইতিহাসই প্রায় আমাদের ঐতিহ্য। তার ভেতর থেকে কোনো কোনো লেখকের, কোনো কোনো লেখককর্মীর অন্তর্দৃষ্টি ও ভারসাম্য উদ্ভাসিত হয় নি, এমন নয়—কিন্তু তার সংখ্যা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খুবই সামান্য। আর সেসব মার্কসবাদী,বিতর্কের সংকলনের সম্পাদকেরা তাঁদের মূল্যায়ন করেন এইভাবে : “আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় লালিত-পালিত মনের বিকাশ, শিক্ষাদীক্ষা, একদিকে ইয়োরোপ-মনস্কতা অন্যদিকে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি টান—মনকে এমন এক মার্জিত বৈদগ্ধ্য দান করে যা শিল্পসাহিত্যের ‘শুদ্ধতা’ এবং জটিল প্রকরণকলার প্রতিই তাঁদের অধিকতর বিশ্বস্ত করে। তথ্যের অসম্পূর্ণতা যেটুকু তা যদি বাদও দিই, এই ছদ্ম-নিরপেক্ষ বিবরণীর পেছনে যে ভাবনা কাজ করে, তা হল মার্কসবাদী শিল্পবিচার তাদেরই ব্যাপার, যারা ‘কর্ম ও ঘর্মের সঙ্গে যুক্ত, অধিকমাত্রায় পার্টিজান’— শিল্পসাহিত্যের প্রকরণচর্চা বা শুদ্ধতা মার্কসবাদীর ব্যাপারই নয়। মার্কসবাদী নন্দনের মৌলিক ভ্রান্তির ঐ ভূত এখনও এইভাবে চেপে বসে আছে মাথায়।
সেকেলে যান্ত্রিক মার্কসবাদী বিচারের বিপত্তিটা শুরু হয়েছিল আমাদের দেশে ইংরেজ কবি টি. এস. এলিয়টকে কেন্দ্র করে। এলিয়ট রাজতন্ত্রে ও খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী, মনেপ্রাণে সাম্যবাদবিরোধী। কোনো মার্কসবাদীর পক্ষে কি তাঁর অনুরাগী হওয়া সম্ভব? ১৯৩৭-এ ‘প্রগতি' নামে যে সংকলনগ্রন্থ বেরয়, তাতে ছিল বিষ্ণু দে-র করা অনুবাদ : এলিয়টের ‘ফাঁপা মানুষ'। এর আগেও অবশ্য তিনি এলিয়টের বেশ কটি কবিতার অনুবাদ করেছেন, অনুকূল সমালোচনা লিখেছেন। সমর সেন এ ব্যাপারে ছিলেন তাঁর অনুজ সহমর্মী। তিনি ‘অবক্ষয়ীদের সপক্ষে' নামের ইংরেজি প্রবন্ধে জানালেন, এই অবক্ষয়িত সমাজে তথাকথিত অবক্ষয়ের সাহিত্যই স্বাভাবিক এবং তার মধ্যেই আছে বৈপ্লবিক শক্তি। তাঁরও দৃষ্টান্ত এলিয়টের কবিতা। এই বক্তব্যের মধ্যে কতটা ভাবনার বিষয় আছে, তার আলোচনার বদলে শুরু হল তীব্র আক্রমণ। কারণ যান্ত্রিক মার্কসবাদের কাছে এই যুক্তিবিন্যাস অভাবনীয় আঘাতের মতো। সরোজ দত্ত আক্রমণ করলেন এই মতকে ‘অবক্ষয়ী, আঙ্গিকসর্বস্ব, প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া মতবাদ’ বলে। প্রায় একই সময় বিনয় ঘোষ ‘নতুন সাহিত্য ও সমালোচনা’ বইতে বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, সমর সেন প্রমুখ কবিদের
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment