বিংশ শতাব্দীর এক যুগসন্ধিক্ষণে জন্মেছিলেন বিপ্লবের কিংবদন্তী, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু কমরেড সন্তোষ ব্যানার্জী। ১৩২২ বঙ্গাব্দের জন্মাষ্টমীর দিনে তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন মায়ের অষ্টম গর্ভের সন্তান হিসেবে। মাদারীপুর শহরের এ পরিবারটি ছিল খুবই সম্ভ্রান্ত ও সম্পন্ন। তাঁর পিতার নাম প্রতাপচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা- সৌদামিনী। পূর্ণিমার মতো চাঁদমুখ পুত্রসন্তানটি তাঁরা পেয়েছিলেন পর পর সাত কন্যার পরে। তাই সেদিন তাঁদের আনন্দের আর সীমা ছিল না। তাঁরা চোখের মণির মতো ছেলেকে পরম আদর-যত্ন ও স্নেহ-ভালোবাসায় লালন-পালন করতে থাকলেন। বয়স হলে তাঁকে স্থানীয় মাদারীপুর স্কুলে ভর্তি করে দেন। লেখাপড়া চলছিল ভালোভাবেই। কিন্তু সে কালে ব্রিটিশবিরোধী যে তুমুল আন্দোলন গড়ে উঠেছিল দেশব্যাপী তার ঢেউ মাদারীপুরেও বিস্তৃতি লাভ করেছিল ব্যাপকভাবে। মাদারীপুর বিপ্লবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছিল। শিশু সন্তোষও আস্তে আস্তে টের পাচ্ছিলেন বিপ্লবীদের আনাগোনা। স্কুলে যাতায়াতের সময় দেখেছেন সত্যাগ্রহীদের দীর্ঘ লাইন। ধীরে ধীরে তিনিও বিপ্লবের আগুনে তপ্ত হতে থাকলেন। এক সময় তিনিও অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। ১৯২৭ সালে ১২ বছর বয়সে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। কয়েকবার সত্যাগ্রহীদের লাইনে দাঁড়ালেন। কিন্তু দাদারা নিবৃত্ত করলেন। পরে চেষ্টা চলল বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার। ১৯৩০ সালে নবম শ্রেণিতে পড়াকালে তিনি প্রথম ধরা পড়ে গেলেন পুলিশের হাতে। জেল খাটলেন একটানা ৭ মাস। তারপর আর পিছনে ফেরা হয়নি তাঁর। জেল-বাইর-জেল অথবা আত্মগোপনে কেটে গেছে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে গোটা পাকিস্তান আমল। বিপ্লবের আগুনে পুড়তে পুড়তে তিনি খাঁটি সোনায় পরিণত হয়ে উঠেছিলেন। মানবমুক্তি তথা কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের সূর্য-সৈনিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। সে জীবনকাহিনী যেমন চাঞ্চল্যকর তেমনি রোমাঞ্চকরও বটে।

লেখাপড়ায় তিনি খারাপ ছিলেন না। কিন্তু জেলখানা থেকে বের হয়ে এসে যেন মন বসছে না। দিনরাত যেন বিপ্লবভাবনায় পেয়ে বসেছে। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া কোনো স্বপ্ন নেই। অধিক জোরেসোরে শুরু করলেন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড। কিছুকাল পর ১৯৩২ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য তিনি গ্রেপ্তার হলেন। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় স্থায়ী ছেদ পড়ল। জেল থেকে বেরিয়ে এসে আর স্কুলে যাওয়া হল না। তারপর ১৯৩৩-১৯৩৮, ১৯৪০-১৯৪৬, ১৯৫১-১৯৫৫, ১৯৫৭, ১৯৫৯-১৯৬৯ পর্যন্ত কারান্তরালে থাকলেন। বাকি সময়টা কেটেছে আত্মগোপনে। তিনি যেসকল জেলে অবস্থান করেছেন তারমধ্যে মাদারী- পুর, ফরিদপুর, হিজলী, আলিপুর, রাজশাহী, বক্সার ফোর্ট, দমদম, ঢাকা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। রাজশাহী জেলে থাকাকালে ১৯৪১ সালে তিনি প্রবেশিকা ও বক্সার ফোর্টে থাকাকালে ১৯৪৩ সালে তিনি আই এ পাশ করেন। তারপর আর ডিগ্রি লাভের চেষ্টা তিনি করেননি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পলাতক জীবনে তিনি ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন শরীয়তপুরের (তৎকালীন পূর্বমাদারীপুর) কম্যুনিস্ট নেতা উপেন সেন, শান্তি সেন, চুনী মুখার্জী, প্রফুল্ল সান্যালদের সঙ্গে এবং ১৯৫০ সালে তিনি কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। শুরু হয় এক নতুন পথযাত্রা; মানবমুক্তির জীবনপণ লড়াই-সংগ্রাম।

১৯৬৯ সালে ছাত্র-জনতার মহান গণ-অভ্যুত্থানের ফলে তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এলেন। তারপর আর তাঁকে জেলে যেতে হয়নি। কিন্তু পালিয়ে বেড়ানোর জীবনের অবসান হয়নি। লড়াই-সংগ্রাম থেকে তিনি নিবৃত্ত থাকেননি। পার্টির কাজে বিপদের ঝুঁকি নিয়েও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ইতোমধ্যে একাত্তর সমুপস্থিত। বাঙালির মরণপণ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। একসময় তিনিও ছুটে গেলেন কলকাতা। পার্টির উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে দিনরাত ক্যাম্পে থেকেই কাজ করলেন। জীবিত একমাত্র ছোটবোন ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের কথায়ও কোনো কর্ণপাত করলেন না। দেশ স্বাধীন হলে ছুটে এলেন দেশের মাটিতে। টেকেরহাটে লঞ্চ থেকে নেমে সারা গায়ে মেখে নিলেন দেশের মাটি। ভাবলেন শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কথা। এ জন্য পার্টি ও কর্মীদেরকেও গড়ে তুলতে হবে। লেগে গেলেন সে কাজে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সরকারের একাংশের দুর্নীতি, স্বজন-প্রীতি

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion