ফ্যাসিবাদে লেখকের মুক্তি নেই
[ফ্যাসিবাদের মোহ অনেক লেখক বুদ্ধিজীবীকেই আবিষ্ট করে। সুখ স্বাচ্ছন্দ কিংবা ক্ষমতার আত্মপ্রসাদ লেখককে প্রলুব্ধ করে। এমনই এক লেখকের মর্মান্তিক ইতিহাস থেকে জঁ-পল সার্ত্র তাঁর সিদ্ধান্তে পৌঁছান: ফ্যাসিবাদে লেখকের মুক্তি নেই, সাহিত্যের ধর্মই তাকে ফ্যাসিবাদে শাস্তি দেবে না। ‘লেখা কী?’ নামে একটি প্রবন্ধের উপসংহার, ইংরেজী থেকে অনুবাদিত। ‘হোয়াট ইজ লিটেরেচার’ বা ‘সাহিত্য কী’ নামে ইংরেজি বইয়ে প্রবন্ধটি আছে।—অনুবাদক]
লেখক লিখতে বসলেন; তার মানেই তিনি পাঠকদের স্বাধীনতা স্বীকার করে নিলেন। পাঠক বই খুলে ধরলেন; তার মানেই তিনি লেখকের স্বাধীনতা স্বীকার করে নিলেন। যেদিক থেকেই দেখুন না কেন, শিল্পকর্ম মাত্রই মানবসমাজের স্বাধীনতায় আস্থা ঘোষণা। লেখকের মতোই পাঠকেরাও এই স্বাধীনতা স্বীকারের সঙ্গে সঙ্গেই তার আত্মপ্রকাশ প্রত্যাশা করেন। তাই শিল্পকর্মের সংজ্ঞা দেওয়া যায়, মানবমুক্তি দাবি করে বলেই তা বিশ্বলোকের কাল্পনিক উপস্থাপনা। ফলত ‘বিষাদাচ্ছন্ন সাহিত্য’ বলে কিছু নেই, কেননা, যত কালো রঙেই কোনো লেখক পৃথিবীকে আঁকুন না কেন, তাঁর রঙ লাগাবার একটাই উদ্দেশ্য, যাতে স্বাধীন মানুষ সেই ছবির দিকে তাকিয়ে তাদের স্বাধীনতা অনুভব করতে পারে। উপন্যাস ভালো হতে পারে, খারাপ হতে পারে। খারাপ উপন্যাস চাটুবাক্যে খুশি করতে চায়। ভালো উপন্যাস জন্মায় প্রচণ্ড তাগিদে, বিশ্বাসের তাড়নায়। কিন্তু সর্বোপরি যে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোনো লেখক পৃথিবীকে সেইসব স্বাধীনতার দিকে তুলে ধরেন যা তিনি বাস্তবে সত্য করে তুলতে চান, তার ভিত্তি, এমন এক পৃথিবীতে বিশ্বাস যা ক্রমাগতই আরো স্বাধীনতাকে জারিত করে। উদারতার এই যে মুক্তি লেখক ছড়িয়ে দেন, তা কখনোই কোনো অন্যায়কে স্বীকার করে নেওয়ার যুক্তিতে প্রযুক্ত হতে পারে না। যে রচনা মানুষের হাতে মানুষের পরাধীনতাকে সমর্থন করে, স্বীকার করে নেয়, কিংবা নিন্দা করা থেকে বিরত থাকে, সেই রচনা পড়তে পড়তে পাঠক তাঁর স্বাধীনতা-বোধ সম্পর্কে নিশ্চিষ্ট থাকবেন, এও হতে পারে না। শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে পরিব্যাপ্ত ঘৃণায় পরিপূর্ণ হলেও কোনো মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গের লেখা উপন্যাস ভালো হতে পারে, কারণ সেই ঘৃণার মধ্য দিয়েও তিনি তাঁর জাতির স্বাধীনতা দাবি করছেন। যেহেতু তিনি আমার মধ্যে উদারতার দৃষ্টিভঙ্গিই সঞ্চারিত করছেন, যে মুহূর্তে আমি নিজে সেই শুদ্ধ স্বাধীনতার উপলব্ধি বোধ করি, আমি আর কোনো অত্যাচারী শ্রেণীর সগোত্র থাকতে পারি না। তাই সর্বপ্রকারের স্বাধীনতার কাছে আমার দাবি শে^তাঙ্গদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ জাতির মুক্তির দাবি উচ্চারিত হোক, আমিও যেহেতু সেই শ্বেতাঙ্গকুলের অংশ, আমার বিরুদ্ধেও তা ধ্বনিত হোক। এক মুহূর্তের জন্যও কেউ ভাববেন না, যে, ইহুদিবিদ্বেষের সমর্থনে কোনো ভালো উপন্যাস লেখা সম্ভব। যে-মুহূর্তে আমি অনুভব করি যে আমার স্বাধীনতা অন্য সমস্ত মানুষের স্বাধীনতার সঙ্গে অচ্ছেদ্য সূত্রে জড়িত, সেই মুহূর্তেই আমি জানি যে এই জনসমষ্টির একাংশের দাসত্বের সমর্থনে আমার স্বাধীনতাকে আমি কাজে লাগাতে পারি না। প্রাবন্ধিক, পুস্তিকাকার, ব্যঙ্গসাহিত্যিক, বা ঔপন্যাসিক, ব্যক্তিগত আবেগের ধারক বা সমাজব্যবস্থার প্রতিবাদী, প্রত্যেক লেখকই স্বাধীন মানুষের মুখোমুখি স্বাধীন মানুষ। তাঁর বিষয় কেবল একটাই হতে পারে—স্বাধীনতা। তাই পাঠকদের দাসত্বশৃঙ্খলে বাঁধবার যে-কোনো চেষ্টাই লেখকের শিল্পেই চিড় ধরাবে। কোনো লোহার কারিগর তাঁর ব্যক্তিজীবনে ফ্যাসিবাদের আক্রমণের শিকার হতে পারেন। কিন্তু তাই বলে তাঁর কারিগরিতেও তার প্রভাব পড়বে, এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু লেখক বিপর্যস্ত হবেন উভয় ক্ষেত্রেই, জীবনের চেয়েও বেশি আঘাত পাবেন তাঁর লেখার ক্ষেত্রে। আমি এমন লেখকদের দেখেছি, যাঁরা যুদ্ধের আগে মনেপ্রাণে ফ্যাসিবাদকেই চেয়েছেন, অথচ নাৎসিরা যখন তাঁদের উপর সম্মান ঢেলে দিয়েছেন, তখন তাঁরা বন্ধ্যতায় নিমজ্জিত হয়েছেন। আমি বিশেষ করে দ্রিউ লা রোশেলের কথা ভাবছি। তিনি ভুল করেছিলেন, কিন্তু তাঁর নিষ্ঠায় ফাঁকি ছিল না। তিনি তা প্রমাণ করেছিলেন। নাৎসিদের উদ্যোগে প্রকাশিত এক পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেছিলেন। প্রথম কয়েক মাস
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment